জহুরুল ইসলাম জহির, রংপুর
তিস্তা অভিমূখে ৫০ লাখ টাকা ব্যায়ে লংমার্চ কর্মসূচি করছেন জাতীয় পার্টির চেয়ারম্যান সাবেক রাষ্ট্রপতি এইচ এম এরশাদ। রংপুর নগরীর পর্যটন মোটেল, সার্কিট হাউজ সহ ছোট বড় ৪০টি আবাসিক হোটেল বুকিং দেয়া হয়েছে। ফলে প্রতিদিন বাহির থেকে রংপুরে বিভিন্ন কাজে আসা সাধারন মানুষগুলো বেকায়দায় পড়ছে । কর্মসূচির ব্যয় মেটাতে এবং সফল করতে উত্তারাঞ্চলের দলীয় নেতাদের কাছ থেকে প্রায় কোটি টাকা চাঁদা আদায় করেছে দলীয় পর্যায়ের নেতারা। অপরদিকে, রংপুর পৌর মেয়র জাপা নেতা আব্দুর রউফ মানিক পৌর কর্মচারী ও যানবাহনগুলোকে দলীয় কর্মসূচিতে ব্যবহার করছেন। পৌরসভার অর্থ ব্যয় করে শহরের সড়কগুলোকে সাজসজ্জা, ফেস্টুন ও অর্ধশতাধিক তোড়ন নির্মান করেছেন। এনিয়ে জনমনে বিরুপ প্রতিক্রিয়া দেখা দিয়েছে।
সোমবার শহরের বিভিন্ন এলাকা ঘুরে দেখা গেছে, রংপুর পৌরসভার কর্মচারীরা জাতীয় পার্টির লংমার্চ উপলক্ষে সড়কের সৌন্দর্য্যবর্ধনে কাজ করছে। পৌরসভার পক্ষ থেকে ব্যানার-ফেস্টুন তোড়ন নির্মান করা হচ্ছে। পৌরসভার বিদ্যুৎ বিভাগের গাড়ীটি ব্যানার লাগানোর কাজে ব্যবহার করছে। এসময় সাধারন পৌর নাগরিকদের মধ্যে জাহাঙ্গীর কবির, আমিনুল ইসলাম রাজু, রফিক উল্লাহ বাদশা সহ বেশ কয়েকজনের সাথে কথা হলে তাদের প্রতিক্রিয়ায় জানা যায়, পৌরসভার গাড়ী, কর্মচারী ও ট্যাক্সের টাকা দিয়ে মেয়র দলীয় কর্মসুচির কাজ করতে পারেন না। এজন্য মেয়রকে জবাবদিহি করতে হবে। তারা আরো জানান, এরশাদ ৯ বছর ক্ষমতায় ছিল সেসময় রংপুরের উন্নয়নের জন্য একাই যথেষ্ট ছিল। তার সময়ে তিস-া ব্যারেজের কাজ শেষ হয়েছে। কিন’ তিনি কিছুই করেনি। আজ যত মায়াকান্না রংপুর সহ উত্তরাঞ্চলের মানুষের জন্য।
রংপুর পৌর মেয়র আব্দুর রউফ মানিকের সাথে যোগাযোগ করা হলে তিনি জানান, এটা জাতীয় ইস্যু সেখানে পৌরসভার লোকজন কাজ করতে পারে। আর টাকা তো আমি পৌর ফান্ড থেকে খরচ করছি না।
দলীয় সূত্রে জানা গেছে, উত্তরাঞ্চলকে মরুভূমির হাত থেকে বাঁচার দাবিটি জনগণের মধ্যে সাড়া জাগাতে রংপুর বিভাগসহ দেশের সকল জেলা উপজেলায় লাগানো হয়েছে চার রঙা পোষ্টার। দিন রাত চলছে বিরতিহীন মাইকিং। কর্মসূচি চলাকালে আইন শৃঙ্খলা পরিসি’তির যাতে অবনতি না ঘটে এজন্য গত ১৪ জানুয়ারী রংপুর জেলা প্রশাসক ও পুলিশ সুপারের সাথে স’ানীয় জাপা নেতৃবৃন্দ বৈঠক করেছেন। এসংক্রান- বিষয়টি প্রশাসনের পক্ষ থেকে দলকে নিশ্চয়তা দেয়া হয়েছে। এছাড়াও ৫ শতাধিক দলীয় স্বেচ্ছাসেবক নিয়োজিত করা হবে।
ঢাকা থেকে গাড়িবহরে আসা দলের মন্ত্রী, এমপি, প্রেসিডিয়াম সদস্যসহ নেতা কর্মিদের জন্য রংপুরের বিনোদন কেন্দ্র ভিন্ন জগতের ড্রিম প্যালেস, পর্যটন মোটেল, আরডিআরএস, এসোডের গেষ্ট হাউজসহ শহরের ছোট বড় ৪০টি আবাসিক হোটেলে দেয়া হয়েছে বুকিং। কর্মসূচির ব্যয় বহনের জন্য দলীয় মন্ত্রী, এমপিসহ নেতাদের কাছ থেকে চাঁদা আদায় করা হচ্ছে।
এদিকে, দলের মহাসচিব রুহুল আমিন হাওলাদার ইতিমধ্যে রংপুর বিভাগের বিভিন্ন জেলায় দলের নেতা কর্মিদের সাথে বৈঠক করেছেন তিস-া অভিমুখে লংমার্চ সফল করার জন্য।
লংমার্চ কর্মসূচি সমন্বয়কারী সাবেক এমপি মশিউর রহমান রাঙ্গা জানান, ১৭ জানুয়ারী সকাল ৮টায় ঢাকার বনানী দলীয় অফিসের সামন থেকে লংমার্চের যাত্রা শুরু হবে। সেখান থেকে ২হাজার গাড়িবহর নিয়ে রংপুর আসতে ১৫টি পথসভা করা হবে। পথসভার উল্লেখযোগ্য স’ানগুলোর মধ্যে রয়েছে, আশুলিয়া, বিকেএসপি, এলেঙ্গা (সিরাজগঞ্জ), শেরপুর(বগুড়া), মাজিরা(বগুড়া), মোকামতলা(বগুড়া), মহাস’ানগড়, গোবিন্দগঞ্জ, পলাশবাড়ি, পীরগঞ্জ, বড়দরগা, শঠিবাড়ী, মিঠাপুকুর। এসব পথসভা শেষ করে গাড়িবহর রংপুর পৌঁছবে আনুমানিক রাত ৯টার দিকে। ১৮ জানুয়ারী রংপুরের পাগলাপীরে সমাবেশ করে সকাল ১১টায় আরো ২ হাজারসহ মোট ৪ হাজার গাড়িবহর নিয়ে তিস-া ব্যারেজ অভিমূখে লংমার্চ শুরু হবে। বিকেল ৩টায় নীলফামারীর তিস-া ব্যারেজ সংলগ্ন হেলিপ্যাড মাঠে ৫ লক্ষাধিক মানুষের সমাগমে জনসভা করা হবে।
অপরদিকে, বাংলাদেশ-ভারত ছিটমহল বিনিময় সমস্বয় কমিটির পক্ষ থেকে জাপার লংমার্চের সাথে একাত্মতা ঘোষণা করেছে। তারাও ওই দিন ছিটমহল এলাকাগুলো থেকে ৪০ গাড়িবহর নিয়ে সমাবেশস’লে যোগ দেবে। এছাড়াও ভারত ইউনিট ভারত-বাংলাদেশ ছিটমহল বিনিময় সমস্বয় কমিটির পক্ষ থেকে কুচবিহারে একই সময় ও একই দাবিতে সমাবেশ করা হবে।