অর্থমন্ত্রী আবুল মাল আবদুল মুহিত বলেছেন, আগামী তিন বছর পর দেশে আর বিদ্যুৎ সংঙ্কট থাকবে না। জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের বিজনেস স্টাডিজ অনুষদের আয়োজনে শুক্রবার তিন দিনব্যাপী ‘বাংলাদেশের চলিস্নশ বছর: চেঞ্জেস এ্যান্ড চ্যালেঞ্জেস’ শীর্ষক সেমিনারে তিনি এ কথা বলেন। বিশ্ববিদ্যালয়ের জহির রায়হান মিলনায়তনে সকাল সাড়ে নয়টায় অর্থমন্ত্রী প্রধান অতিথি হিসেবে সেমিনার উদ্বোধন করেন। প্রধান অতিথির বক্তব্যে তিনি বলেন, বিগত দুই বছরে জাতীয় গ্রিডে ২ হাজার মেগাওয়াট বিদ্যুৎ যুক্ত হয়েছে। আগামী ৩ বছরে আরও ৪ হাজার মেগাওয়াট বিদ্যুৎ জাতীয় গ্রিডে যুক্ত হবে। অর্থমন্ত্রী বলেন, বর্তমান সরকারের শিক্ষা, স্বাস্থ্য ও ভৌত অবকাঠামোগত উন্নয়ন নীতির কারণে মানুষের সামাজিক নিরাপত্তা ব্যবস্থা বৃদ্ধি পেয়েছে এবং এরফলে দারিদ্রতা ও বৈষম্য কমে এসেছে। তিনি বলেন, দেশের ৫০ শতাংশ মানুষকে কাজে সম্পৃক্ত করা সম্ভব হয়েছে। দেশের ব্যাপক সংখ্যক নারী সমাজকে উন্নয়নমূলক কর্মকাণ্ডে অংশীদার করা হয়েছে। তিনি আরো বলেন, অতীতের দুর্নীতির বদনাম ঘুচাতে বর্তমান সরকারের এক বছর কেটে গেছে। বাংলাদেশ একটি উদার গণতান্ত্রিক রাষ্ট্র। আর গণতন্ত্র বিদ্যমান বলে এখানে দোষ-ত্রুটির শাস্তির বিধান রয়েছে। অর্থমন্ত্রী বলেন, গণতান্ত্রিক সংস্কৃতি এবং দেশের উন্নয়নের স্বার্থে রাজনীতিতে সহনশীলতা ও পরমত শ্রদ্ধার বিষয়টি ফিরিয়ে আনা জরুরী।

সেমিনারের উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে সভাপতির ভাষণে জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য অধ্যাপক ড. শরীফ এনামুল কবির বলেন, মুক্তিযুদ্ধপরবর্তী বিধ্বস্ত অবস্থা থেকে উত্তরণ ঘটিয়ে বাংলাদেশ আজ বিশ্ব অর্থনীতির ক্ষেত্রে একটি সম্মানজক অবস্থান অর্জন করেছে। ব্যাপক জনসংখ্যা অধ্যুষিত বাংলাদেশের ভবিষ্যৎ বহুলাংশে নির্ভর করছে মানবসম্পদের সঠিক ব্যবহারের ওপর। তাই, ২০২১ সালের মধ্যে ‘মধ্য আয়ের দেশ’ হওয়ার স্বপ্নপূরণে এই মানবসম্পদকে শিক্ষিত ও যোগ্য করে গড়ে তুলতে হবে। তিনি বলেন, মানসম্পন্ন উচ্চশিক্ষা একটি দেশকে আমূল পাল্টে দিতে পারে। উপাচার্য উচ্চশিক্ষার মানবৃদ্ধির জন্য এ ক্ষেত্রে চাহিদামাফিক অর্থ বরাদ্দ বৃদ্ধির দাবি জানান।

অনুষ্ঠানে অতিথি বক্তার বক্তব্যে তত্ত্বাবধায়ক সরকারের সাবেক উপদেষ্টা ড. আকবর আলী খান বলেন, বাংলাদেশের ৪০ বছরের ইতিহাস সমকালীন রাজনীতিতে পরিণত হয়েছে। যখন যে সিদ্ধান্ত নেয়া হয় তা নিয়ে মত পার্থক্য সৃষ্টির সংস্কৃতি শুরু হয়েছে। সামাজিক বৈষম্যের ক্ষেত্রে উচ্চ পর্যায়ে মারাত্মকভাবে বৈষম্য বাড়ার আশঙ্কা দেখা দিয়েছে। ড. আকবর আলী খান দেশের ইতিবাচক উন্নয়ন হিসেবে বলেন, ১৯৭৫ থেকে ২০০৫ পর্যন্ত মাথাপিছু আয় দ্বিগুন হয়েছে। স্বাধীনতার বিরোধীরা এদেশ সম্পর্কে যেসব নেতিবাচক মন্তব্য করেছেন তা সবই অসত্যে পরিণত হয়েছে। পাকিস্তানের তুলনায় মাথাপিছু আয় বেড়েছে। বৈদেশিক সাহায্যের নির্ভরতা ৭২ শতাংশ থেকে কমে ৬ শতাংশে নেমেছে। শিশু মৃত্যুর হার কমেছে এবং গড় বয়স তুলনামূলকভাবে অনেক বেড়েছে। কৃষি উৎপাদন তিনগুন বৃদ্ধি পেয়েছে। অনুষ্ঠানে বিশেষ অতিথির বক্তব্যে বাংলাদেশ ব্যাংকের গভর্নর ড. আতিউর রহমান বলেন, বাংলাদেশের প্রবৃদ্ধি সার্কভূক্ত অন্যান্য কয়েক দেশের তুলনায় বেশি। বাংলাদেশ ব্যাংকের ক্ষুদ্র ঋণ প্রকল্প এবং কৃষকদের ব্যাংকিং-এর আওতায় নিয়ে আসা জাতীয় অর্থনীতির ক্ষেত্রে বড় ধরনের ভূমিকা রাখছে। এছাড়া অনুষ্ঠানে বিশেষ অতিথি হিসেবে আরও বক্তব্য রাখেন দি ফিনান্সিয়াল এক্সপ্রেস পত্রিকার সম্পাদক মোয়াজ্জেম হোসেন এবং স্বাগত বক্তব্য রাখেন বিজনেস স্টাডিজ অনুষদের ডীন অধ্যাপক আবদুল বায়েস।

ইউনাইটেড নিউজ ২৪ ডট কম/জাহিদ সুলতান লিখন/জাবি

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here