মাহমুদা হক মনিরা :: আজ ২৯ এপ্রিল সকাল ১১টায় ডেভেলপমেন্ট একটিভিটিস অফ সোসাইটি আয়োজিত “গণপরিবহনে তামাক নিয়ন্ত্রন আইন বাস্তবায়নে পুলিশের ভূমিকা” শীর্ষক অনলাইন আলোচনা সভা অনুষ্ঠিত হয়।

অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন সংসদ সদস্য সামসসুল হক টুকু, বিশেষ অতিথি সংসদ সদস্য রেলপথ মন্ত্রণালয় সম্পৃক্ত সংসদীয় স্থায়ী কমিটির সদস্য মোহাম্মদ সাইফুজ্জামান শিখর, ব্যারিস্টার নিশাদ মাহমুদ, এডভোকেট মাসুম বিল্লাহ প্রমুখ। অনুষ্ঠানে মূল প্রস্তাবনা উপস্থাপন করেন মোয়াজ্জেম হোসেন টিপু।

মোয়াজ্জেম হোসেন টিপু মূল প্রস্তাবণা বর্ননায় জানান, “২০১৭ সালের GATS গবেষণা অনুযায়ী তামাক পণ্য ব্যবহারে অকাল মৃত্যুর সংখ্যা বছরে ১ লক্ষ ৬১ হাজার এবং ৪৪.০% পাবলিক পরিবহনে পরোক্ষ ধূমপানে আক্রান্ত হয়। বর্তমানে বাংলাদেশে ৩৫.৩ শতাংশ মানুষ তামাক ব্যবহার করেন। অর্থনৈতিক দিক থেকে তামাক ব্যবহারে রাজস্ব আয় ২২৮১০ কোটি টাকা বিপরীতে তামাক ব্যবহারজনিত অসুস্থতায় চিকিৎসা ব্যয় ৩০৫৬০ কোটি টাকা।

পাবলিক পরিবহন ও পাবলিক প্লেসে ধূমপান বন্ধ জরুরী। কারণ পাবলিক প্রেস ও পরিবহনে ধূমপানের কারণে অধূমপায়ী বিশেষ করে শিশু ও নারী ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছে। এবং চালকদের চলন্ত অবস্থায় ধূমপানের কারণে দুর্ঘটনার সম্ভাবনা বাড়ছে। পাবলিক পরিবহন ও পাবলিক প্লেসে ধূমপান বন্ধকরনে রয়েছে নানা প্রতিবন্ধকতা। বিদ্যমান আইন প্রয়োগের রয়েছে নানা অসুবিধা। যেমন, কর্তৃত্বপ্রাপ্ত কর্মকর্তাদের কাজের নিয়মিত মনিটরিং ও তদারকির অভাব, তামাক কোম্পানির প্রভাব এবং তামাক নিয়ন্ত্রণ করে কোন গুরুত্ব প্রদান।

আইন প্রয়োগকারী সংস্থা হিসেবে বা আইনের লোক হিসেবে জনগণ পুলিশকেই বেশি চিনে তাই তাদের দেখে মানুষের ভয়ভীতি কাজ করে। এ আইন বাস্তবায়নে প্রাথমিক দায়িত্ব পুলিশের উপর অর্পিত হলে আইনটি প্রচার এবং ব্যবহারের ব্যাপারে যথেষ্ট সাড়া পাবে।

তামাক নিয়ন্ত্রণ আইন বাস্তবায়নের ক্ষেত্রে পুলিশকে সরাসরি জরিমানার ক্ষমতা দেওয়া হয়নি। বিদ্যমান সড়ক পরিবহন আইন ২০১৮ ও অন্যান্য আইনের যথাযথ প্রয়োগের মাধ্যমে পুলিশ বিভাগকে আইন প্রয়োগের ব্যাপারে ক্ষমতার এখতিয়ার আরো বৃদ্ধি করলে তামাক নিয়ন্ত্রণে আশানুরূপ সফলতা আসবে। লাইসেন্স প্রদানের ক্ষেত্রেও ধুমপায়ীদের নিরুৎসাহিত করতে হবে।”

সংসদ সদস্য রেলপথ মন্ত্রণালয় সম্পৃক্ত সংসদীয় স্থায়ী কমিটির সদস্য মোহাম্মদ সাইফুজ্জামান শিখর বলেন, “সারা পৃথিবীতেই ইতিমধ্যে তামাক বিরোধী আন্দোলন শুরু হয়েছে। তামাক মানুষের জীবনের জন্য ক্ষতিকর এটা এখন সবাই বিশ্বাস করে কিন্তু দুর্ভাগ্যজনকভাবে তারাও এটা থেকে বের হয়ে আসতে পারে না। ২০৪০ সালের মধ্যে তামাকমুক্ত বাংলাদেশ এর লক্ষ্যে ধীরে ধীরে তামাকপণ্যের দাম বাড়িয়ে ব্যবহারে নিরুৎসাহিত করা হচ্ছে। দুর্ভাগ্যজনক হলেও সত্যি যে মানুষ জেনে শুনেই বিষ পান করছে। গণপরিবহন গুলোতে আস্তে আস্তে মানুষিক সচেতনতার কারনে ধূমপান কষ্ট সাধ্য হয়ে উঠেছে। ধূমপানের প্রতিবাদের পাশাপাশি পুলিশকে সম্পৃক্ত করতে পারলে তামাক নিয়ন্ত্রণের পথ অনেকটাই সহজ হবে।”

সৈয়দ মাহবুবুল আলম বলেন, “আইনগত দিক থেকে পাবলিক প্লেসে ধূমপান করলে পুলিশ জরিমানা করতে পারবে। ১৯৭৬ সালে ঢাকা মেট্টোপলেটিয়ান পুলিশ অরডিনিয়ান্সে বলা হয়েছে ধূমপানমুক্ত লেখা এলাকায় কেউ যদি ধুমপান করে তবে তা শাস্তিযোগ্য অপরাধ। নাগরিক শিক্ষার জন্য পুলিশকে ক্ষমতা দিয়ে অন দ্যা স্পট জরিমানার ব্যবস্থা করতে হবে। আমাদের দেশে আইন প্রয়োগ খুবই দুর্বল। জরিমানাকে শাস্তি হিসেবে না দেখে সামাজিক সচেতনতার আওতায় নিলে আইনের প্রয়োগ সহজ হবে।”

ব্যারিস্টার নিশাদ মাহমুদ বলেন, “গনপরিবহনের মালিকদের উপর তাদের পরিবহন ধুমপানমুক্ত রাখার দায়িত্ব দেওয়া যেতে পারে, সেক্ষেত্রে তাদের উপর জরিমানা ধরা যেতে পারে। তাদের কাজে বাধার সৃষ্টি হলে তারা পুলিশের সহায়তা নিবে। বাইরের দেশগুলোর মতো ধূমপানের জন্য আলাদা জায়গা থাকতে পারে।”

এডভোকেট মাসুম বিল্লাহ বলেন, “বাংলাদেশের রাস্তায় প্রতিটি মোড়ে মোড়ে পুলিশ থাকে, পুলিশকে যেন ক্ষমতা দেওয়া হয় তারা যেন ধূমপানের সাথে যুক্তদের সরাসরি জরিমানা ধরতে পারে। কারন আমরা অনেক আইন থাকা সত্ত্বেও তা মানি না।”

সংসদ সদস্য সামসসুল হক টুকু বলেন, “বর্তমান সরকারের আইন সংশোধন ও সকল শ্রেণীপেশার বিশেষ বিশেষ দায়িত্ব পালনে ধূমপানের সংখ্যা অনেকটা হ্রাস পেয়েছে। আইন সঠিকভাবে কার্যকর হলে ধুমপানের সংখ্যা আরও হ্রাস পেত। ধুমপানের ক্ষতিকর বিষয়ে সবাইকে সচেতন থাকতে হবে। ধুমপানের জন্য তরুন সমাজ আজ মাদকে আসক্ত হচ্ছে। আইনশৃঙ্খলা বাহিনী দেশের অনেক গুরুত্বপূর্ণ কাজ করছে এবং ধুমপান থেকে ধুমপায়ীদের বিরত রাখার কাজটিও তাদের করতে হবে। আমাদের সবাইকেই দায়িত্বশীল নাগরিক হতে হবে। পারিবারিক সচেতনতা গড়ে তুলতে হবে। আমাদের উদ্দেশ্য বাস্তবায়ন করতে হলে প্রতিটি ক্ষেত্রে কার্যকর ভূমিকা রাখতে। পরিবহন মালিকদেরও সম ভাবে সচেতন হতে হবে এবং তাদের নির্দিষ্ট দায়িত্ব পালন করতে হবে।”

Print Friendly, PDF & Email

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here