তামাকের মূল্যস্তরভিত্তিক কর প্রথা বাতিলের দাবিস্টাফ রিপোর্টার :: বিড়ি, সিগারেট, জর্দা-গুলসহ বিভিন্ন তামাকজাত দ্রব্যে যে স্তরভিত্তিক কর প্রথা রয়েছে, এর ফলে ধূর্ত তামাক কোম্পানিগুলো কর ফাঁকি দেয় তাই বিভ্রান্তিকর ও স্তরভিত্তিক কর কাঠামো বাতিল করে সব তামাকজাত দ্রব্যে একই হারে কর বৃদ্ধির সুপারিশ করেছে জনস্বাস্থ্য ও অর্থনীতি বিশেষজ্ঞবৃন্দ। বক্তারা বলেন, যেহেতু সব তামাকই মানুষের মৃত্যু ঘটায়, তাই সব তামাকের উপরই উচ্চহারে কর বাড়াতে হবে কর বৃদ্ধির ক্ষেত্রে লক্ষ্য রাখতে হবে, যেন এসব পণ্যের প্রকৃত মূল্য বৃদ্ধি পায়
আজ ২৩ এপ্রিল সকালে জাতীয় প্রেসক্লাবে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ইনিষ্টিটিউট অব হেলথ ইকোনোমিক্স (আইএইচই) এবং ওয়ার্ক ফর এ বেটার বাংলাদেশ (ডাব্লি¬উবিবি) ট্রাস্ট এর যৌথ উদ্যোগে “জনস্বাস্থ্য উন্নয়নে তামাকজাত দ্রব্যের উপর কর বৃদ্ধিতে করণীয়” শীর্ষক একটি সেমিনারে এ আহবান জানানো হয়।
ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের স্বাস্থ্য অর্থনীতি ইনস্টিটিউট-এর প্রতিষ্ঠাতা পরিচালক অধ্যাপক ড. সুশীল রঞ্জণ হাওলাদার-এর সভাপতিত্বে সেমিনারে সম্মানিত অতিথি হিসাবে বক্তব্য রাখেন জাতীয় যক্ষা নিরোধ সমিতি (নাটাব) সভাপতি ও বাংলাদেশ তামাক বিরোধী জোটের উপদেষ্টা মোজাফফর হোসেন পল্টু এবং জাতীয় সংসদ সদস্য (এমপি) এডভোকেট নুরজাহান বেগম মুক্তা, এতে প্রবন্ধ উপস্থাপন করেন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের অর্থনীতি বিভাগের অধ্যাপক ড. রুমানা হক।
আলোচনা করেন জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয়ের অতিরিক্ত সচিব মাহবুবুর রহমান, জাতীয় রাজস্ব বোর্ডের কমিশনার ড. মো. সহিদুল ইসলাম, জনস্বাস্থ্য বিষয়ক বৈশ্বিক প্রতিষ্ঠান দি ইউনিয়ন এর কারিগরি পরামর্শক এডভোকেট সৈয়দ মাহবুবুল আলম, ডাব্লিউবিবি ট্রাস্টের পরিচালক গাউস পিয়ারী এতে সঞ্চালনা করেন বাংলাদেশ তামাক বিরোধী জোটের মূখপত্র ‘সমস্বর’ এর নির্বাহী সম্পাদক আমিনুল ইসলাম সুজন।
প্রবন্ধে ড. রুমানা হক বলেন, দক্ষিণ এশিয়ায় স্বল্পদামী সিগারেটের উপর কর বাংলাদেশে কম জর্দা, গুল ও বিড়ির হিসাব ধরলে বাংলাদেশেই পৃথিবীতে সবচাইতে কম মূল্য ও কর তাছাড়া তামাকজাত দ্রব্যের স্তরভিত্তিক কর প্রথা বিদ্যমান থাকায় কর বৃদ্ধির সুফল পাওয়া যায় না তাই জর্দা-গুল-বিড়ি-সিগারেটের স্তরভিত্তিক কর কাঠামো বিলুপ্ত করা দরকার
২০০৮ থেকে ২০১৪ সাল পর্যন্ত পরিসংখ্যান ব্যুরোর তথ্য তুলে ড. রুমানা হক আরো বলেন, বিড়ির উপর সামান্য পরিমাণ কর বাড়ালেও এর প্রকৃত মূল্য বাড়েনি, বরং কমেছে মুদ্রাস্ফিতী ও আয়বৃদ্ধির কারণে ২০০১ থেকে ২০১৩ সাল পর্যন্ত চাল (১ কেজি), মুরগির ডিম (১ হালি), দুধ (১ লিটার) ও সিগারেটের (১০ স্টিকের ১ প্যাকেট) মূল্য বিশ্লেষণ করে বলেন, সিগারেটের প্রকৃত মূল্য অন্যান্য নিত্য প্রয়োজনীয় দ্রব্যের চাইতে কম বেড়েছে অর্থাৎ, অর্থনীতির ভাষায়, সিগারেটের প্রকৃত মূল্য কমে গেছে  এছাড়া তামাকের স্বাস্থ্যকর জনস্বাস্থ্য উন্নয়নে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখতে পারে তাই স্বাস্থ্যকর ২% আরোপ করা দরকার
এড. নুরজাহান বেগম মুক্তা এম.পি বলেন, প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ২০৪০ সালের মধ্যে দেশকে তামাকমুক্ত করার ঘোষণা দিয়েছেন প্রধানমন্ত্রীর ঘোষণা অনুযায়ী দেশকে তামাকমুক্ত করতে হলে তামাকজাত দ্রব্যে কর বাড়াতে হবে। এছাড়া অর্থমন্ত্রী সম্প্রতি বিড়ি কারখানা বিলুপ্তির ইচ্ছা ব্যক্ত করেছেন জনপ্রতিনিধিদের বিড়ি-সিগারেট-জর্দা-গুলের মত প্রাণঘাতী ক্ষতিকর পণ্যে কর বৃদ্ধির পক্ষে কথা বলতে হবে।
মোজাফফর হোসেন পল্টু বলেন, তামাক চাষ খাদ্য উৎপাদন ও পরিবেশের জন্য হুমকি কিন্তু ধূর্ত তামাক কোম্পানিগুলো দাদন দেয়ার মাধ্যমে দরিদ্র কৃষকদের প্রলুব্ধ করার মাধ্যমে তামাক চাষে ধাবিত করছে এ প্রবণতা বন্ধে কঠোর ব্যবস্থা নিতে হবে জর্দা-গুল কারখানাগুলোকে নিয়ন্ত্রণের আওতায় আনতে হবে বিড়ি-সিগারেটসহ তামাক বিক্রয় কেন্দ্রগুলোকে লাইসেন্স (নিবন্ধন) আওতায় আনার মাধ্যমে স্থানীয় সরকার প্রতিষ্ঠানের আয় বাড়ানো যেতে পারে।
অধ্যাপক সুশীল রঞ্জণ হাওলাদার বলেন, তামাকের কর এমনভাবে বাড়াতে হবে, যেন মূল্যের উপর তার প্রভাব পড়ে পাশাপাশি তামাকের যে স্বাস্থ্যকর রয়েছে, সে স্বাস্থ্যকর কোন খাতে ব্যয় হবেÑতাও নির্ধারণ করতে হবে।
এড. সৈয়দ মাহবুবুল আলম বলেন, সব তামাকই মানুষের মৃতু ডেকে আনে যারা তামাক সেবন করেÑতাদের অর্ধেক মানুষ তামাকজনিত বিভিন্ন অসংক্রামক রোগে আক্রান্ত হয়ে মারা যায় তাই মানুষকে তামাক সেবন থেকে নিরুৎসাহিত করতে হলে তামাকজাত দ্রব্যের প্রকৃত মূল্য বাড়াতে হবে।
মাহমুদুর রহমান বলেন, তামাকের কম মূল্যের কারণে পুরুষদের পাশাপশি মহিলাদের মধ্যেও অনেক বেশি ধূমপানে আসক্তি লক্ষ্য করা যাচ্ছে এমতাবস্থায় কঠোরভাবে করারোপ এবং তা আদায় করার মাধ্যমে তামাক ব্যবহার নিয়ন্ত্রনের ব্যবস্থা গ্রহন করা আবশ্যক এছাড়া বছরব্যাপী তামাকবিরোধী সামাজিক আন্দোলন গড়ে তোলার আবশ্যকতা রয়েছে ধূমপানের কারনে অপরিণত মৃত্যু রোধে সরকারকে আরও কঠোরভাবে তামাক নিয়ন্ত্রণে কাজ করতে হবে।
মো. সহিদুল ইসলাম বলেন, এক সময় সংসদ সদস্যরা তামাকে কর না বাড়ানোর সুপারিশ করত সে অবস্থার পরিবর্তন হয়েছে এটা ইতিবাচক জাতীয় রাজস্ব বোর্ড আয় বাড়াতে চায় এক্ষেত্রে তামাকের উপর কর বৃদ্ধির বিষয়টি গুরুত্বপূর্ণ ।
সেমিনারে মুক্ত আলোচনায় অংশগ্রহণ করেন- প্রত্যাশা মাদক বিরোধী সংগঠনের সাধারণ সম্পাদক হেলাল আহমেদ, সোস্যাল এডভান্সমেন্ট ফোরাম (সাফ-কুষ্টিয়া) এর নির্বাহী পরিচালক মীর আবদুর রাজ্জাক, (বিআইসিডি-রাজশাহী) এর নির্বাহী পরিচালক নাজমুল হুদা নয়ন, সাতক্ষীরা মানব কল্যাণ সংস্থার (এসএমকেএস-সাতক্ষীরা) নির্বাহী পরিচালক মো. আবুল হোসেন, (সিয়াম-খুলনা) এর নির্বাহী পরিচালক এড. মাসুম বিল্লাহ, (শ্যাডো-রংপুর) এর নির্বাহী পরিচালক সারওয়ার জামীল খন্দকার, (ডিডিপি-সিরাজগঞ্জ) এর নির্বাহী পরিচালক কাজী সোহেল রানা, (প্রজন্ম  মানাবিক অধিকার উন্নয়ন কেন্দ্র-নওগাঁ) এর নির্বাহী পরিচালক মো. আব্দুর রহমান রিজভী, পল্লী প্রগতী সংস্থা (পিপিএস-যশোর) এর নির্বাহী পরিচালক আবুল কালাম আজাদ, শুচীতা সমাজ উন্নয়ন সংস্থা (শুচিতা-পাবনা) এর নির্বাহী পরিচালক নাসরীন পারভীন প্রমুখ।
Print Friendly, PDF & Email

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here