তরুণ বিজ্ঞানীদের খোঁজে রাজশাহীতে বিসিএসআইআর বিজ্ঞান ও শিল্প প্রযুক্তি মেলা সম্পন্ন হয়েছে। গত শনিবার রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয় পার্শ¦বর্তী রাজশাহী বিজ্ঞান ও শিল্প গবেষণাগার মাঠে চারদিন ব্যাপী এ মেলার শেষ হয়। মেলাতে রাজশাহীর বিভিন্ন স্কুল কলেজের শিক্ষার্থীদের উদ্ভাবনী যন্ত্রপাতি প্রদর্শণ করা হয়। প্রদর্শণী শেষে (ক,খ,গ) তিনটি ক্যাটাগরীতে মোট ৯ জনকে পুরুস্কৃত করা হয়। এতে বিশেষ অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন রাজশাহী সপুরা সিল্ক মিলস্ লিমিটেডের ব্যবস্থাপনা পরিচালক মো: সদর আলী।
সুত্রে জানা যায়, প্রতিবছরের ন্যায় এবারেও গত ১২ জানুয়ারি রাজশাহী বিজ্ঞান ও গবেষণাগার মাঠে বিজ্ঞান ও শিল্প প্রযুক্তি মেলা শুরু হয়। রাজশাহী আদর্শ উচ্চ বিদ্যালয়, রাজশাহী সরকারী সিটি কলেজ, রাজশাহী পাটকল উচ্চ বিদ্যালয়, রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয় স্কুল এন্ড কলেজ, অগ্রণী স্কুল এন্ড কলেজ, মাসকাটদীঘী বহুমুখী উচ্চ বিদ্যালয়, রাজশাহী মহিলা কলেজ, রাজশাহী সরকারী মাদ্রাসা, রাজশাহী কলেজিয়েট স্কুল, মসজিদ মিশন একাডেমী স্কুল, শহীদ জিয়াউর রহমান উচ্চ বিদ্যালয়, খড়খড়ি উচ্চ বিদ্যালয়সহ মোট ৪০ টি স্টলে মহানগরীর বিভিন্ন শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের শিক্ষার্থীরা তাদের উদ্ভাবনী যন্ত্রপাতি প্রদর্শণ করে। বৈদ্যুতিক দরজা, কাপড় শুকানোর মেশিন, পয়:নিষ্কাষণ হতে মাল্টি পারপাস বায়োগ্যাস প্লান্ট, পেট্রোল পাম্প, পঁচা আলু হতে বিদ্যুত উৎপাদন, সেপ্টি রকেট লান্সার, জাহাজের বিপদ সংকেত, সাইকেল থেকে মোবাইল চার্জার, ক্ল্যাপ লাইট, মিথেন গ্যাসসহ বিভিন্ন উদ্ভাবনী যন্ত্রপাতি প্রদর্শন করে। চারদিন ব্যাপী এ বিজ্ঞান যন্ত্রপাতির প্রদর্শণী শেষে পুরুস্কার বিতরণী অনুষ্ঠানের আয়োজন করে।
রাজশাহী বিজ্ঞান ও শিল্প প্রযুক্তি মেলার সদস্য সচিব আব্দুস সামাদের সভাপতিত্বে অনুষ্ঠানে উপস্থিত ছিলেন রাজশাহী বিজ্ঞান ও গবেষণার পরিচালক মো: মোয়াজ্জাম হোসেন, জিয়াউল্লাহ সফিক, বিজ্ঞান ও গবেষণাগারের কর্মকর্তাগণসহ বিভিন্ন শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের শিক্ষকগণ উপস্থিত ছিলেন।
অনূষ্ঠানে বক্তারা বলেন, বাংলাদেশকে ডিজিটাল হিসেবে গড়ে তুলতে আমাদের ক্ষুদে বিজ্ঞানীদের উৎসাহ দিতেই এ বিজ্ঞান মেলার আয়োজন করা হয়ে থাকে। এটা শুধু রাজশাহী মহানগরীতে করলে হবে না বিজ্ঞান গবেষণার জন্য দেশের প্রতিটি জেলায় জেলায় এ মেলার আয়োজন করতে হবে। রাজশাহীর স্থানীয় শিক্ষার্থীদের ছাড়াও অন্যান্য জেলা হতে আগত সকল শিক্ষার্থীকে উন্নত ট্রেনিংয়ের মাধ্যমে দেশের উন্নতির জন্য সকল প্রকার ব্যবস্থা গ্রহণ করতে হবে। তারা আরো বলেন, এ সকল যন্ত্রপাতির উদ্ভাবন শুধু নিজের জন্য করলে চলবে না, দেশ ও জাতির জন্য এ প্রজন্মের শিক্ষার্থীদের এগিয়ে আসতে হবে। নতুন প্রজন্মকে বিজ্ঞান মনস্ক করে গড়ে তুলতে হলে আমাদেরকে অবশ্যই এ দিকে নজর দিতে হবে।
বক্তারা বলেন, ক্ষুদে বিজ্ঞানীরা যে সকল যন্ত্রপাতির আবিস্কার করেছে তা শুধু প্রদর্শণী করলে চলবে না এটাকে আমাদের ব্যবহারিক কাজে লাগাতে হবে। দেশে বিদ্যুতের চাহিদা মেটাতে আমাদের ক্ষুদে বিজ্ঞানীদের আবিস্কৃত পাওয়ার প্লান্ট এবং গ্যাসের চাহিদা মেটাতে মিথেন গ্যাস ব্যবহার করে জাতীয়ভাবে অনেক সাশ্রয় করা সম্ভব হবে। এ মেলায় ব্যক্তির চেয়ে সমাজের কল্যাণের দিকে নজর দেওযার আহ্বান জানান তারা।
অনুষ্ঠান শেষে শিক্ষার্থীদের মাঝে তিনটি ক্যাটাগরিতে মোট ৯ জনকে পুরুস্কৃত করা হয়। ক বিভাগের ১ম স্থান অধিকার করে রাজশাহী সরকারী বালিকা উচ্চ বিদ্যালয়ের তাহিয়া তাওফীক, দ্বিতীয় শিরোইল উচ্চ সরকারী উচ্চ বিদ্যালয়ের সারওয়ার জামান, তৃতীয় বিসিএসআইআরের সেলিনা আকতার। খ বিভাগের অধীনে প্রথম স্থান অধিকার করেন শাপলা কুড়ি ক্লাবের সামিউল ইসলাম বর্ণ, দ্বিতীয় খড়খড়ি উচ্চ বিদ্যালয়ের সজল মাহমুদ, তৃতীয় মাসকাটদীঘী বহুমুখী কারিগরি উচ্চ বিদ্যালয়ের রাশেদ হাসান। গ বিভাগের অধীনে অগ্রণী স্কুল এন্ড কলেজের মুজাহিদুল ইসলাম, দ্বিতীয় সরকারী আদর্শ মহিলা কলেজের মুশতারী জাহান চৈতী, তৃতীয় স্থান অধিকার করেন ভেষজ কীটনাশক উদ্ভাবক রবিউল ইসলাম মিঠুন।
মেলা ঘুড়তে আসা রাবির শিক্ষার্থী আবুযর গিফারী, মোত্তালিব হোসেন বাধন ও নাছরুল ইসলাম নাবিল বলেন, প্রতিবছর এ মেলার আয়োজন করে এলাকার শিক্ষা প্রতিষ্ঠান থেকে যে তরুণ বিজ্ঞানী বের হচ্ছে তারা দেশ ও জাতির উন্নয়নে বিশেষ ভূমিকা পালন করবে। ক্ষুদে বিজ্ঞানীদের উদ্ভাবিত সাইকেলের মাধ্যমে মোবাইল চার্য দেয়া এবং পাওয়ার প্লান্টের মাধ্যমে বিদ্যুত সাশ্রয় যদি বাস্তবায়ন করা যায় তবে দেশের বিদ্যুত সমস্যা অনেকাংশে কমানো সম্ভব হবে।
ইউনাইট নিউজ ২৪ ডট কম/আব্দুল খালেক রিয়াদ/রাবি