ঢাকা: দশম জাতীয় সংসদ নির্বাচনের তফসিল ঘোষণার পরপরই চূড়ান্ত আন্দোলনের রূপরেখা দেবেন বিরোধী জোট নেতা বেগম খালেদা জিয়া। তফসিল ঘোষণা করা হলে সংবাদ সম্মেলনের মাধ্যমে তিনি এ কর্মসূচি ঘোষণা করবেন।

এর আগে গত মঙ্গলবার বেগম জিয়ার নেতৃত্বে বিরোধী জোটের নেতারা রাষ্ট্রপতির সঙ্গে দেখা করে সংলাপের উদ্যোগ নেয়ার অনুরোধ জানান। তবে এরপরই নির্বাচনকালীন সরকার পরিচালনার জন্য রাষ্ট্রপতির অনুমতির কথা জানান প্রধানমন্ত্রী। সঙ্গত কারণেই বিরোধী দল মনে করছে সংলাপের মাধ্যমে সমঝোতা হচ্ছে না। আন্দোলনই এখন একমাত্র ভরসা।

ইতোমধ্যে নির্বাচন কমিশনার মো. শাহনেওয়াজ বলেছেন, আগামী সোমবারের মধ্যে তফসিল ঘোষণা হতে পারে।

ইসির এমন কার্যক্রমের বিরোধিতা করে বিএনপির ভারপ্রাপ্ত মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর বলেছেন, নির্দলীয় সরকারের ব্যবস্থা না করে তফসিল ঘোষণা করা হলে ওই মুহূর্ত থেকেই পুরো দেশ অচল করে দেয়া হবে।

বিএনপির যুগ্ম মহাসচিব অ্যাডভোকেট রুহুল কবির রিজভী আহমেদ বলেছেন, দেশ অচলের আহবানে সারা দেশে প্রস্তুতির ঢেউ পড়েছে।

বিএনপির বিভিন্ন সূত্রে জানা গেছে, পরবর্তী কর্মসূচি সফল করতে চেয়ারপারসন বেগম খালেদা জিয়া বেশকিছু কৌশল অবলম্বন করেছেন। বিগত কর্মসূচিতে নেতাকর্মীদের গা-ছাড়া মনোভাবকে বিবেচনায় রেখেই তিনি নতুন উদ্যোগ নিয়েছেন।

মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীরের ঘনিষ্ঠ একটি সূত্র নাম প্রকাশ না করার শর্তে জানান, তফসিল ঘোষণার পর মুহূর্তে বেগম খালেদা জিয়া সংবাদ সম্মেলন করে কর্মসূচি ঘোষণা করবেন।

সূত্র জানায়, তফসিল ঘোষণার সাথে সাথেই গুলশানের রাজনৈতিক কার্যালয়ে সংবাদ সম্মেলন করবেন বিএনপি চেয়ারপার্সন। তবে বেগম খালেদা জিয়ার ওপর যদি সরকারের বেশি নজরদারি থাকে সে ক্ষেত্রে প্রয়োজনে বাসভবন থেকেই কর্মসূচি ঘোষণা করবেন তিনি। এক্ষেত্রেও যদি কোনো প্রতিবন্ধকতা থাকে তবে দলের ভারপ্রাপ্ত মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর বা দপ্তরের দায়িত্বপ্রাপ্ত রুহুল কবির রিজভী আহমেদও এই নতুন কর্মসূচি ঘোষণা করতে পারেন।

অপর একটি সূত্র জানায়, নির্বাচন কমিশন সচিবালয় ঘেরাও, হরতাল, অবরোধসহ কঠোর কর্মসূচির প্রস্তাব দিয়েছেন বিরোধী জোটের গুরুত্বপূর্ণ নেতারা। তবে কর্মসূচি এখনও চূড়ান্ত হয়নি। পরিস্থিতি অনুযায়ী খালেদা জিয়া কর্মসূচি ঘোষণা করবেন।

এ বিষয়ে দলের স্থায়ী কমিটির সদস্য আসম হান্নান শাহ বলেন, নির্দলীয় সরকারের দাবির আন্দোলন জোরালো হচ্ছে। হরতাল-অবরোধসহ কঠোর আন্দোলন কর্মসূচি ঘোষণা করা হবে।  জোটের নেতারা যে কোনো সিদ্ধান্ত নেওয়ার ভার ম্যাডামকে দিয়েছেন। কারণ সার্বিক পরিস্থিতিতে সব সময় হয়তো জোটের নেতাদের সঙ্গে বৈঠক করা সম্ভব হবে না।

বিএনপির অপর একটি সূত্র জানায়, চূড়ান্ত আন্দোলন সফল করতে প্রয়োজনে খালেদা জিয়া রাজপথে নামবেন। সারা দেশের গুরুত্বপূর্ণ নেতাদের সঙ্গে সার্বক্ষণিক যোগাযোগ রাখবেন। বিশেষ করে ঢাকার আন্দোলন চাঙ্গা করতে বেশ কয়েকজন নেতাকে দায়িত্ব দেয়া হয়েছে।

নাম প্রকাশ না করার শর্তে ঢাকার আন্দোলন চাঙ্গা করার দায়িত্বপ্রাপ্ত এক নেতা বলেন, ‘স্ব-স্ব আসনের মনোনয়ন প্রত্যাশীরা এই আন্দোলনের মাধ্যমে তার যোগ্যতা প্রমাণ করবেন।

জানা গেছে, ঢাকার জন্য খালেদা জিয়া এবার খোকা-সালাম নির্ভর হতে চাইছেন না। এ জন্য বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য আসম হান্নান শাহ, গয়েশ্বর চন্দ্র রায়, মির্জা আব্বাস, উপদেষ্টা পরিষদের সদস্য অধ্যাপক এমএ মান্নান, যুগ্ম মহাসচিব আমান উল্লাহ আমানকে দায়িত্ব দেওয়া হয়েছে।

সূত্র জানায়, যুব দলের কেন্দ্রীয় সাধারণ সম্পাদক সাইফুল আলম নীরব, মহানগর যুব দল নেতা হামিদুর রহমান হামিদ, এসএম জাহাঙ্গীর, মামুন হাসান, ছাত্র দলের কেন্দ্রীয় সভাপতি আব্দুল কাদের ভূঁইয়া জুয়েল ঢাকার আন্দোলন চাঙ্গা করতে ব্যাপক প্রস্তুতি নিচ্ছেন।

Print Friendly, PDF & Email

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here