স্টাফ রিপোর্টার ::  রাজধানীর কুর্মিটোলায় ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের (ঢাবি) দ্বিতীয় বর্ষের ছাত্রী ধর্ষণের ঘটনায় অভিযুক্ত ধর্ষককে গ্রেফতার করেছে র‌্যাব।

গ্রেফতার ব্যক্তির নাম মজনু। মঙ্গলবার রাতে গাজীপুর মহানগরীর টঙ্গী থেকে তাকে আটক করা হয়। বুধবার ধর্ষণের শিকার তরুণী ছবি দেখে ধর্ষককে শনাক্ত করার পর গ্রেফতার দেখানো হয় মজনুকে। দুপুরে তাকে গাজীপুর থেকে আনা হয় কারওয়ান বাজারে র‌্যাব মিডিয়া সেন্টারে।

র‌্যাব জানায়, ধর্ষক একজন ড্রাইভার। তার বয়স আনুমানিক ৩০-৩৫ বছর। তার সামনের দুটি দাত নেই।

ধর্ষণের ঘটনায় ক্যান্টনমেন্ট থানায় ওই ছাত্রীর বাবার দায়ের করা মামলায়ও তার চেহারার বর্ণনা দেয়া হয়। সেখানে বলা হয়েছে, ধর্ষক যুবকের বয়স আনুমানিক ২৫ থেকে ৩০ বছরের মধ্যে। উচ্চতা প্রায় পাঁচ ফুট চার ইঞ্চি, গায়ের রং শ্যামলা। স্বাস্থ্য মাঝারি। ঘটনার সময় তার চুল ছোট ছোট ছিল। স্যান্ডেল পরা এই যুবকের পরনে পুরাতন জিন্সের প্যান্ট ছিল। গায়ে ময়লা কালো রঙের ফুলহাতা জ্যাকেট ছিল।

র‌্যাব জানায়, গ্রেফতার মজনুর সঙ্গে অভিযোগে দেয়া ধর্ষকের চেহারার মিল আছে। এছাড়া তার ছবি দেখে ওই ছাত্রী তাকে ধর্ষক বলে শনাক্ত করে।

প্রাথমিক জিজ্ঞাসাবাদে মজনু ঢাবির ওই শিক্ষার্থীকে ধর্ষণের দায় স্বীকার করেছে। তার দেওয়া তথ্যানুযায়ী, তার বাড়ি নোয়াখালীর হাতিয়ার সন্দ্বীপে। তার বাবা মৃত মাহফুজুর রহমান। মা জীবিত থাকলেও বাড়ির সঙ্গে কোনো যোগাযোগ নেই। মজনু বিবাহিত, তার স্ত্রী মারা গেছেন। ১০ বছর আগে জীবিকার সন্ধানে ঢাকায় আসে সে। স্ত্রীর মৃত্যুর পর থেকে বিভিন্ন ধরনের অপকর্মে জড়িয়ে পড়ে সে।

দুপুরে র‌্যাবের মিডিয়া সেন্টারে ব্রিফিংয়ে র‌্যাবের মুখপাত্র সারওয়ার বিন কাশেম জানান, মজনু মাদকাসক্ত। পেশায় সে নিজেকে দিনমজুর বলে দাবি করলেও ছিনতাই, রাহাজানি ও চুরির মতো অপরাধ কর্মকাণ্ডে সে জড়িত।

জিজ্ঞাসাবাদে মজনু র‍্যাবকে জানিয়েছে, সে নিরক্ষর। ট্রেন থেকে পড়ে গিয়ে তার সামনের দুটি দাঁত ভেঙে যায়। স্ত্রী মারা যাওয়ার পরে সে আর বিয়ে করতে পারেনি। তাই সে এধরনের কাজ করত ।

সরোয়ার বিন কাশেম বলেন, মজনু একজন সিরিয়াল রেপিস্ট। এর আগেও তিনি এই কাজ করেছেন। রাস্তায় প্রতিবন্ধী নারী, ভিক্ষুকদের ধর্ষণ করত মজনু।

‘একই জায়গায় সে এ ধরনের অপরাধ করেছে। প্রতিবন্ধী, ভিক্ষুকসহ বিভিন্ন নারীদের সে আটকে রেখে ধর্ষণ করতো। তাদের হত্যার হুমকিও দিত। মজনু স্বীকার করেছে ঘটনার সময় সে একাই ছিল, ভিকটিমও তেমনই বলেছে। ঘটনার দিন মজনু কুর্মিটোলা হাসপাতাল নিয়ে রাস্তায় বের হওয়ার পর মেয়েটিকে দেখতে পায়। এরপরই সে আলোচিত হয়’-যোগ করেন কাশেম।

মজনুকে গ্রেফতারের বিষয়ে র‍্যাবের ব্যাখ্যা হচ্ছে- ‘মামলাটি ক্লুলেস ছিল। মূলত ভিকটিমের মোবাইলের সূত্র ধরেই তাকে গ্রেফতার করতে আমরা সক্ষম হই। মজনুর কাছ থেকে ভিকটিমের ব্যাগ, পাওয়ারব্যাংক ও মোবাইল উদ্ধার করা হয়। মজনু সেই মোবাইলটি শেওড়া এলাকার অরুনা নামে একজনের কাছে দেয়। অরুনা সেই মোবাইলটি খায়রুল নামে একজনের কাছে বিক্রি করে। সেই মোবাইলের সূত্র ধরেই মজনুকে গ্রেফতার করে র‍্যাব। ওই এলাকায় গিয়ে জানা যায় সে প্রায় ওই এলাকায় ওৎ পেতে থাকত।’

এর আগে মঙ্গলবার রাতে ধর্ষক সন্দেহে মজনুকে গাজীপুর মহানগরীর টঙ্গী থেকে আটক করে র‌্যাব। পরে ধর্ষণের শিকার ছাত্রীর জবানবন্দি মোতাবেক তাদের ধর্ষক হিসেবে শনাক্ত করা হয়।

Print Friendly, PDF & Email

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here