ডেস্ক রিপোর্ট:: প্রাচ্যের অক্সফোর্ড খ্যাত ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তির সুযোগ পেয়েছেন দরিদ্র কাঠমিস্ত্রীর সন্তান রাজিয়া সুলতানা। এতে সবাই খুশি হওয়ার কথা থাকলেও পরিবারের কারো মুখে হাসি নেই। কারণ রাজিয়ার পড়াশোনার খরচ কীভাবে চলবে তা নিয়ে দুশ্চিন্তায় পড়েছেন অভিভাবক। অর্থের অভাবে তার পড়াশোনা অনিশ্চিত হয়ে পড়েছে।
বিশ্ববিদ্যালয়ে পড়ালেখার খরচ বহন করা কাঠমিস্ত্রী বাবার পক্ষে অসম্ভব হয়ে দাঁড়িয়েছে। পড়াশোনা শেষে সরকারি চাকরির স্বপ্ন পূরণে প্রধানমন্ত্রী ও সমাজের বিত্তবানদের সহযোগিতা কামনা করেছেন কাঠমিস্ত্রী বাবা আব্দুর রাজ্জাক ও মেধাবী শিক্ষার্থী রাজিয়া। সোমবার (১২ জুন) দুপুরের দিকে রাজিয়া ও তার অভিভাবক খোকসা উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) রিপন বিশ্বাসের সঙ্গে সরাসরি দেখা করেছেন। এ সময় ভর্তির জন্য তাকে ১০ হাজার টাকা দেন ইউএনও।
অদম্য মেধাবী রাজিয়া সুলতানা কুষ্টিয়ার খোকসা উপজেলার শিমুলিয়া ইউনিয়নের ৪ নম্বর ওয়ার্ডের পাইকপাড়া মির্জাপুর গ্রামের রাজমিস্ত্রী আব্দুর রাজ্জাকের মেয়ে। তিনি ঢাকা বিভাগে ভর্তির সুযোগ পেয়েছেন। ছোটবেলা থেকেই তিনি লেখাপড়ায় খুব ভালো। এ পর্যন্ত সব শ্রেণিতে ভালো রেজাল্ট করেছেন তিনি। তিনি পাইকপাড়া মির্জাপুর সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় থেকে পিইসি, পাইকপাড়া মির্জাপুর মাধ্যমিক বিদ্যালয় থেকে জেএসসি, এসএসসি ও ২০২০-২১ শিক্ষাবর্ষে আলহাজ্ব সাইদুর রহমান মন্টু মহিলা কলেজ থেকে এইচএসসিতে কৃতিত্বের সঙ্গে উত্তীর্ণ হন। রাজিয়া ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের সি ইউনিটে মেধা তালিকায় ৯১৫তম স্থান অধিকার করে ভর্তির সুযোগ পেয়েছেন।
রাজিয়া সুলতানা বলেন, আমার বাবা একজন কাঠমিস্ত্রী। বাবার পক্ষে সংসার চালানোর পাশাপাশি আমার লেখাপড়ার খরচ বহন করা অসম্ভব। বিশ্ববিদ্যালয়ে পড়াশোনা ও থাকা-খাওয়াসহ অন্যান্য খরচ বহন করা বাবার পক্ষে অসম্ভব। এদিকে আমার ভাই মাগুরা পলিটেকনিক ইনস্টিটিউটে পড়াশোনা করে তাকে টাকা দিতে হয়, সংসার খবর চালাতে হয় বাবাকে। আমাদের খরচ চালানোর টাকা আমার পরিবারের নেই। আমি অনেক কষ্ট করে পড়াশোনা করেছি। ১৮ জুন থেকে ৬ জুলাইয়ে মধ্যে ভর্তি হতে হবে। কি করব বুঝতে পারছি না আমি। আমার পড়াশোনা এখন অনিশ্চয়তার মধ্যে। এজন্য সরকার ও দেশের বিত্তবান মানুষের কাছে সাহায্যের আবেদন জানাচ্ছি।
রাজিয়ার বাবা আব্দুর রাজ্জাক বলেন, আমি কাঠমিস্ত্রীর কাজ করি। আমার মেয়ে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে চান্স পেয়েছে। তাকে লেখাপড়া করানোর মতো সামর্থ্য আমার নেই। এছাড়া আমার ছেলে মাগুরা পলিটেকনিক ইনস্টিটিউটে পড়াশোনা করে। অল্প টাকা আয়ে সংসার চালানো ও ছেলেমেয়ের পড়াশোনা খরচ চালানো আমার পক্ষে সম্ভব না। টাকার অভাবে দিশেহারা এখন আমরা।
তিনি আরও বলেন, কাঠমিস্ত্রীর কাজ করে কীভাবে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে পড়াব, কীভাবে আমার এই মেধাবী মেয়ের খরচ চালাব বুঝতে পারছি না। সমাজের বিত্তবান ও সহৃদয়বান ব্যক্তিদের কাছে পাশে দাঁড়ানোর আকুল আবেদন জানাচ্ছি।
অর্থের অভাবে যেন অদম্য মেধাবী রাজিয়া সুলতানার পড়াশোনা বন্ধ হয়ে না যায় সেজন্য সবার সহায়তা কামনা করেছেন তার পরিবার ও এলাকাবাসী।
স্থানীয়রা বলেন, দরিদ্র কাঠমিস্ত্রীর মেয়ে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তির সুযোগ পেয়েছে। কিন্তু তাকে লেখাপড়ার করানো মতো টাকা-পয়সা নেই পরিবারের। তারা চিন্তা করে কোনো কূল পাচ্ছে না, কীভাবে মেয়েকে পড়াশোনা করাবে? কীভাবে বই কিনে দিবে? কীভাবে অন্যান্য খরচ চালাবে? এজন্য আমরাও সাহায্যের জন্য সবার কাছে আবেদন করছি।
এবিষয়ে খোকসা উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) রিপন বিশ্বাস বলেন, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে চান্স পাওয়া রাজিয়া সুলতানার বাবা একজন কাঠমিস্ত্রী। লেখাপড়ার খরচ বহন করা তার পরিবারের পক্ষে সম্ভব না। ওই পরিবার আমাদের সঙ্গে যোগাযোগ করেছে। ভর্তির জন্য ১০ হাজার টাকা প্রদান করা হয়েছে। আমরা তাকে সার্বিকভাবে সহযোগিতা করব। তার পাশে দাঁড়ানোর জন্য বিত্তবানদেরও আহ্বান জানাচ্ছি। টাকার অভাবে যেন কোনো মেধাবী শিক্ষার্থীর পড়াশোনা বন্ধ হবে না। বিষয়টি আমরা গুরুত্বের সঙ্গে দেখব।