ইউনাইটেড নিউজ ২৪ ডেস্ক ::
সিসা দূষণ রোধে এমন উদ্যোগ ও দাবি বাস্তবায়নে সরকারি ও বেসরকারি সংস্থাগুলোর কার্যকর সহযোগিতা প্রয়োজন। সিসা দূষণের বিরুদ্ধে এখনই কার্যকর পদক্ষেপ না নিলে ভবিষ্যৎ প্রজন্মের স্বাস্থ্য ও নিরাপত্তা ঝুঁকির মুখে পড়বে। আন্তর্জাতিক সিসা দূষণ প্রতিরোধ সপ্তাহ উপলক্ষে রাজধানীতে সিসা দূষণের বিরুদ্ধে এক জনসচেতনতামূলক র্যালি ও মানববন্ধনে বক্তারা এসব কথা বলেন।
ঢাকায় শুক্রবার সকালে তেজগাঁও সাতরাস্তার মোড়ে শুক্রবার “ইউনিসেফের সহযোগিতায় আয়োজিত এই কর্মসূচির আয়োজন করে ইয়ুথনেট গ্লোবাল ও পিওর আর্থ বাংলাদেশ। প্রতিপাদ্য ছিল “সিসা দূষণ বন্ধ হলে, বাড়বে শিশু বুদ্ধি-বলে।”
তরুণ, তরুণ শিক্ষার্থীসহ প্রায় ৫০ জনের অংশগ্রহণে আয়োজিত এই র্যালিটি তেজগাঁওয়ের গুরুত্বপূর্ণ এলাকা প্রদক্ষিণ করে মানববন্ধনের মাধ্যমে শেষ হয়। অংশগ্রহণকারীরা ব্যানার ও প্ল্যাকার্ড হাতে নিয়ে স্লোগান দেন “সিসা দূষণ প্রতিরোধে, আমরা আছি একসাথে।” এসময় সিসা দূষণ প্রতিরোধে সরকারের কাছে পাঁচটি প্রধান দাবি জানিয়েছেন বক্তারা।
র্যালির আয়োজকরা জানান, সিসা দূষণ বাংলাদেশের জন্য এক ভয়াবহ স্বাস্থ্যঝুঁকি তৈরি করছে, যা বিশেষত শিশুদের মস্তিষ্কের বিকাশে মারাত্মক প্রভাব ফেলে। এক গবেষণা অনুসারে, দেশে প্রায় ৩ কোটি ৬০ লাখ শিশু সিসার উচ্চমাত্রায় ভুগছে, যা তাদের মানসিক বিকাশে স্থায়ী ক্ষতি করতে পারে।
আইসিডিডিআর,বি-এর গবেষণায় দেখা যায়, ঢাকার প্রায় ৮০ শতাংশ শিশুর রক্তে উচ্চমাত্রার সিসার উপস্থিতি রয়েছে, যা তাদের স্নায়বিক ও শারীরিক উন্নয়নে স্থায়ী ক্ষতি করে। রিসার্চ ইনভেস্টিগেটর মো. মুসা বাকের বলেন, “পাঁচ বছরের কম বয়সী শিশুদের ক্ষেত্রে সিসার প্রভাব স্থায়ী প্রতিবন্ধকতার কারণ হতে পারে।”
বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার তথ্যানুযায়ী, সিসা দূষণের কারণে প্রতি বছর বাংলাদেশে আনুমানিক ১ লাখ ৪০ হাজার মানুষের মৃত্যু ঘটে। এছাড়াও, সিসা দূষণের কারণে দেশের অর্থনীতিতে প্রতি বছর প্রায় ২৮.৬ বিলিয়ন ডলারের ক্ষতি হচ্ছে।
ইয়ুথনেট ফর ক্লাইমেট জাস্টিসের ঢাকা ইউনিটের সদস্য সুজানা জহির রাফা বলেন, “গর্ভবতী নারীদের জন্য সিসা দূষণ মারাত্মক ঝুঁকি তৈরি করে, যা গর্ভপাতের ঝুঁকি বাড়ায় ও শিশুর বিকাশে বাধা সৃষ্টি করে। ভবিষ্যৎ প্রজন্মকে সুরক্ষা দিতে এখনই আমাদের সচেতন হতে হবে।”
পিওর আর্থ বাংলাদেশের কান্ট্রি ডিরেক্টর ড. মাহফুজুর রহমান বলেন, “তরুণরাই আগামী দিনের স্থপতি। তরুণদের সক্রিয় অংশগ্রহণই ভবিষ্যতে সিসামুক্ত একটি নিরাপদ পরিবেশ নিশ্চিত করবে।”
ইয়ুথনেট গ্লোবালের নির্বাহী সমন্বয়ক সোহানুর রহমান বলেন, “আমরা শিশুদের স্বাস্থ্য ও ভবিষ্যতের জন্য লড়াই করছি। সিসা দূষণ প্রতিরোধে পদক্ষেপ নেয়ার এখনই সময়।”
এসময় সোহানুর রহমান সিসা দূষণ প্রতিরোধে সরকারের কাছে পাঁচটি প্রধান দাবি জানান। তিনি বলেন, সিসামুক্ত পণ্য তৈরির জন্য বিশেষ করে শিশুদের খেলনা, অ্যালুমিনিয়ামের বাসনপত্র, এবং দেয়াল রঙের মান নিশ্চিত করতে হবে। এছাড়া, নিরাপদ উপায়ে সিসা-অ্যাসিড ব্যাটারি রিসাইক্লিং ব্যবস্থা প্রতিষ্ঠা ও অবৈধ রিসাইক্লিং কার্যক্রম বন্ধ করার আহ্বান জানানো হয়।
সিসা কারখানা বন্ধে সরকারের তৎপরতাকে স্বাগত জানিয়ে তিনি সিসা দূষিত অঞ্চলগুলো চিহ্নিত করে পরিষ্কারের জন্য কার্যকর পর্যবেক্ষণ ব্যবস্থার দাবি করেন এবং জাতীয় পর্যায়ে সচেতনতা বৃদ্ধির ওপর জোর দেন ।