
আরিফ চৌধুরী শুভ।।
রাজধানী ঢাকায় প্রথমবারের মতো উন্নয়ন ইতিহাস বিষয়ে আন্তর্জাতিক সেমিনার অনুষ্ঠিত হয়েছে। যুক্তরাষ্ট্র ভিত্তিক শিক্ষা ও গবেষণামূলক প্রতিষ্ঠান ‘গ্লোবাল সেন্টার ফর ইনোভেশন এন্ড লার্নিং (জিসিএফআইএল)’ এবং ‘ওপেন একসেস বাংলাদেশ’ এর যৌথ আয়োজনে অনুুষ্ঠিত সেমিনারের বিষয় ছিল ‘Development History and Bangladesh: Why History Matters for Development Practice?’ ২০ মে ২০২২, শুক্রবার বিকাল ৪ টায় রাজধানীর বাংলামোটরস্থ বিশ্বসাহিত্য কেন্দ্রে সেমিনারটি অনুষ্ঠিত হয়েছে।

সেমিনারটিতে শিক্ষক, গবেষক, ইতিহাসবিদ এবং শিক্ষার্থী ছাড়াও বিভিন্ন অঙ্গণের মানুষ উপস্থিত ছিলেন। সেমিনারে নির্ধারিত বিষয়ে মূল প্রবন্ধ উপস্থাপন করেন, মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের জেমস ম্যাডিসন ইউনিভার্সিটির ইতিহাস বিভাগের অধ্যাপক ড. মাইকেল গুবশের।

এছাড়াও প্যানেল স্পিকার হিসেবে আলোচনা করেন ব্র্যাক বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রফেসর ইমেরিটাস ড. মনজুর আহমেদ, বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিকেল বিশ্ববিদ্যালয়ের ইন্টারভেনশনাল হেপাটোলজি বিভাগের প্রধান প্রফেসর ডা. মামুন আল মাহতাব এবং যমুনা টিভির বিশেষ প্রতিনিধি, সাংবাদিক মোঃ মাহফুজুর রহমান মিশু। সেমিনারের শেষ পর্বে উন্মুক্ত প্রশ্নপর্ব ছিল অংশগ্রহণকারীদের জন্য।

ড. গুবশের তার তথ্যপূর্ণ আলোচনায় ইতিহাস চর্চার গুরুত্ব তুলে ধরেন। তিনি বলেন, বাংলাদেশের মত উন্নয়নশীল দেশগুলো বিভিন্ন ইতিহাসকে স্ট্যাডি করে নিজেদের উন্নয়ন ত্বরান্বীত করছে। দেশের সরকারের পাশাপাশি বিভিন্ন এনজিও সামগ্রিক জীবনমানের দৃশ্যমান উন্নয়ন করে যাচ্ছে। স্বাধীনতা পরবর্তী বর্তমান বাংলাদেশের অগ্রগতিও উন্নয়নের জন্য ইতিহাস। তাই দেশের উন্নয়নের জন্য সঠিক ইতিহাস সংরক্ষণ ও শেখার গুরুত্ব অপরিসীম।
অধ্যাপক ড. গুবশের বক্তব্যের সূত্র ধরেই প্যানেল স্পিকাররা নিজেদের মতামত ব্যক্ত করেন। কিভাবে সুপ্রাচীন কালের বিবর্তনের মাধ্যমে বর্তমান বাংলা অঞ্চল, জনগোষ্ঠী ও জাতিসত্তার পরিচয় পেয়েছি আমরা তা তাঁদের বক্তব্যে উঠে আসে। একই সাথে সঠিক ইতিহাস চর্চা একটি দেশ ও সমাজের উন্নয়নের পথে কতোটা সহায়ক সেসব বিষয়ে বিভিন্ন তথ্য উপাত্ত দিয়ে মতামত তুলে ধরেন।
প্রফেসর মাইকেল এর গবেষণার বড় অংশ জুড়ে স্থান পেয়েছে ১৯৭১-৮০ এর মধ্যবর্তী সময় যা তিনি প্রশ্নোত্তর পর্বে স্বীকার করেন। মূলত মাইকেলের গবেষণায় কলোনাইজেশনের ভেতর দিয়ে শতশত বছরের ভাঙ্গাগড়ার মাধ্যমে খুবই কম সময়ে একটি দেশ যে জন্ম নিয়েছে, সেই সত্য ইতিহাসটির আলেঅকপাত ঘটেছে।

অন্যান্য বক্তারা প্রশ্নোত্তর পর্বে বলেন, স্বাধীন বাংলার স্বর্ণযুগ বির্নিমাণের সূত্র অনেক আগে হলেও, পূর্ণতা পেয়েছে ১৯৭১-৮০ এর মধ্যবর্তী সময়ে। কিন্তু বার বারই প্রকৃত ইতিহাস চাপা পড়েছে সংরক্ষণ ও সঠিক ব্যক্তির উদ্যোগের অভাবে। প্রকাশনাগুলো পাঠ্য প্রস্তুকে যে তথ্য দিয়েছে, সেটিই যদি কেবল আমাদের ইতিহাস হতো, তাহলে গবেষণার দরকার ছিল না। কিন্তু গবেষণার মাধ্যমেই কেবল সত্য ইতিহাসগুলোও এখনকার প্রজন্মের জন্য লিপিবদ্ধ হয়েছে। ১৯৯৬ এর পূর্বের ইতিহাস আর এর পরের ইতিহাসের তুলনা করলেই এর সত্যতা পাওয়া যায়।

বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিকেল বিশ্ববিদ্যালয়ের ইন্টারভেনশনাল হেপাটোলজি বিভাগের প্রধান প্রফেসর ডা. মামুন আল মাহতাব বলেন, ১৯৯৬ এর আগ পর্যন্ত বাংলাদেশের স্বাধীনতার ঘোষক কে, সেটিই ছিল প্রজন্মের কাছে অস্পষ্ট। কিন্তু বর্তমান সরকার ক্ষমতায় আসার পর সঠিক ইতিহাস জানানোর উদ্যোগ নিয়ে ছিলো সবার আগে। নতুবা আজ এই প্রজন্ম কখনো জানারই সুযোগ থাকতো না, বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানই ছিলেন এদেশের স্বাধীনতার স্থপতি ও ঘোষক। এভাবে কেবলমাত্র সঠিক ইতিহাসই আমাদের সামনে এগিয়ে নিয়ে যায় নতুন ইতিহাস নির্মাণের জন্য।

তিনি আরো বলেন, অসত্য ইতিহাস হঠাৎ আলোড়ন সৃষ্টি করতে পারে বড়জোর, কিন্তু দীর্ঘস্থায়ী হয় না। ইতিহাস সব সময় ডিটেকটিভরাই লেখেন।
যমুনা টিভির বিশেষ প্রতিনিধি, সাংবাদিক মোঃ মাহফুজুর রহমান মিশু উন্নয়নের জন্য ইতিহাস কেন গুরুত্বপূর্ণ বিভিন্ন দৃষ্টিকোণ থেকে তা ব্যাখ্যা করেন। তিনি ইতিহাস লেখকদের অনুরোধ করে বলেন, কেউ যদি ইতিহাস জানতে চায়, তবে সে যেন সঠিক ইতিহাসটি জানে। কেউ যদি ইতিহাস লেখতে চায়, তবে সে যেন সঠিক ইতিহাসটি লেখেন। এছাড়া কেউ যদি ইতিহাস সংরক্ষণ করতে চায়, সে যেন সঠিক ইতিহাসটিই পরবর্তী প্রজন্মের জন্য সংরক্ষণ করেন। তবেই উন্নয়নের জন্য ইতিহাস একটি জাতির অগ্রগতিতে স্থায়ী অবদান রাখবে।
