পাকিস্তানে জঙ্গীদের হত্যার জন্য চালকবিহীন বিমান বা ড্রোন ব্যাবহারের পক্ষে কথা বলেছেন মার্কিন প্রেসিডেন্ট ওবামা৻ তিনি বলেন, ড্রোন হামলার ফলে সুনির্দিষ্টভাবে আল-কায়দা এবং তাদের সমর্থকদের টার্গেট করা সম্ভব হচ্ছে৻ গুগল আয়োজিত ইন্টারনেট চ্যাটরুমে এক প্রশ্নোত্তরের সময় এ মন্তব্য করেন মার্কিন প্রেসিডেন্ট ৻
ড্রোন হামলা নিয়ে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র সচরাচর প্রকাশ্যে কথাবার্তা বলে না৻ এটাকে একটা একটি গোপন তৎপরতা হিসেবেই দেখা হয়, এবং প্রেসিডেন্ট ওবামার সময়ে এই ড্রোন হামলার তীব্রতা এবং সংক্যা দুইই ব্যাপকভাবে বেড়েছে৻
এই ড্রোন অপারেশন মূলত পরিচালনা করে সি আই এ, এবং এর প্রধান লক্ষ্যবস্তু হলো আফগান-পাকিস্তান সীমান্তে পার্বত্য এলাকাগুলোয় অবস্থানকারী তালেবান ও আল-কায়েদা জঙ্গীরা৻ কিন্তু এ নিয়ে খুব বেশি তথ্য যুক্তরাষ্ট্রের পক্ষ থেকে কখনোই জানানো হয় না৻ এতে আল-কায়েদা বা তালেবান নেতাদের অনেকে নিহত হয়েছেন ঠিকই, কিন্তু এতে নির্বিচারে বেসামরিক লোকজনও হতাহত হয়েছে এবং বিশেষ করে পাকিস্তানে এই ড্রোন হামলা ব্যাপক ক্রোধের সৃষ্টি করেছে৻
প্রেসিডেন্ট ওবামা বলছেন, আমি এটা নিশ্চিত করতে চাই যেন জনগণ এটা উপলব্ধি করেন যে ড্রোন হামলার কারণে বিপুলসংখ্যক বেসামরিক লোকজনের মৃত্যু হয় নি৻ বেশির ভাগ ক্ষেত্রেই এ সব আঘাত ছিল অত্যন্ত নির্ভুল, এবং তা ছিল আল-কায়েদা এবং তার সহযোগীদের বিরুদ্ধে৻ কিভাবে এই অস্ত্র প্রয়োগ করা হচ্ছে সে ব্যাপারে আমরা অত্যন্ত যত্নবান – কারণ অনেকের ধারণা যে আমরা নির্বিচারে এ সব আক্রমণ চালিয়ে যাচ্ছি৻
প্রেসিডেন্ট ওবামাকে ওই ওয়েব আলোচনায় একজন প্রশ্ন করেছিলেন – ড্রোন হামলার কারণে বেসামরিক লোকের মৃত্যু হচ্ছে, এবং এর ফলে পাকিস্তানের সার্বভৌমত্ব লংঘিত হচ্ছে কিনা৻ মি. ওবামা স্বীকার করেন যে তারা পাকিস্তানের ভূখন্ডের ভেতরে থাকা জঙ্গীদের হত্যার জন্য চালকবিহীন বিমান ব্যবহার করছেন৻ কিন্তু তিনি এর পাশাপাশি তিনি বলেণ যে এটির ব্যব্হার কঠোর নিয়ন্ত্রণের মধ্যেই আছে৻
মি. ওবামা বলেণ, এটা একটা নির্দিষ্ট এবং স্থির লক্ষ্য নিয়ে চালানো হচ্ছে – তাদের বিরুদ্ধে যারা সক্রিয় সন্ত্রাসীদের তালিকায় আছে, এবং যারা আমেরিকানদের ক্ষতি করার চেষ্টা করছে, আমেরিকানদের স্থাপনায় বা ঘাঁটির মতো জায়গাগুলোতে আঘাত হানার চেষ্টা করছে৻ এটা সবার বোঝা দরকার যে এ ব্যাপারটা খুবই কড়া নিয়ন্ত্রণের মধ্যে রাখা হয়৻ এটা এমন কিছু নয় যে কোথাও একটা ঘরে কিছু লোক বসে আছে এবং সব সিদ্ধান্ত নিচ্ছে৻ এটা আল-কায়েদার বিরুদ্ধে আমাদের লড়াইয়ের যে সার্বিক কর্তৃপক্ষ তারই অংশ, তার বাইরের কিছু নয়৻
বিবিসির বিশ্লেষক স্টিভ কিংস্টন বলছেন, ড্রোন হামলার মতো বিষয় নিয়ে এত খোলাখুলি মার্কিন প্রশাসনের কাউকে কথা বলতে খুব একটা শোনা যায় না৻
তিনি বলেন, ওবামা প্রশাসনের রীতি অনুযায়ী ড্রোন আক্রমণ নিয়ে প্রকাশ্যে আলোচনা বলা হয় না, কাজেই এই আলোচনার সময় স্বয়ং প্রেসিডেন্ট যখন বললেন, যে পাকিস্তান-আফগান সীমান্তের পার্বত্য উপজাতীয় এলাকায় বহু ড্রোন হামলা চালানো হয়েছে, তখন অনেকেই বিস্মিত হয়েছেন৻ কারণ বিশেষ করে পাকিস্তানে চালানো মার্কিন কার্যক্রমের তথ্য অত্যন্ত গোপন রাখা হয়৻
এর পক্ষে যুক্তি দিয়ে প্রেসিডেন্ট ওবামা বলেন, ওই দুর্গম পার্বত্য এলাকায় আল-কায়েদার বিরুদ্ধে অন্য কোন উপায়ে অভিযান চালাতে গেলে তা আরো বেশি হতো৻
মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র শুধু যে পাকিস্তানেই আক্রমণ ও পর্যবেক্ষণের কাজে ড্রোন ব্যবহার করে তা নয়, এটা ব্যবহুত হচ্ছে ইরাক ও ইয়েমেনেও৻ এমন এক দিনে এ প্রসঙ্গ আলোচিত হচ্ছে যেদিন ইয়েমেনের দক্ষিণাঞ্চলীয় আবিয়ান প্রদেশে এক ড্রোন হামলায় ১৩ জন আল-কায়েদা জঙ্গী নিহত হয়েছে বলে খবর পাওয়া যাচ্ছে৻
ইউনাইটেড নিউজ ২৪ ডট কম/আন্তর্জাতিক ডেস্ক