ইউনাইটেড নিউজ ২৪ ডট কম
আন্তর্জাতিক ডেস্ক
ভারতের প্রধানমন্ত্রী মনমোহন সিং আজ মণিপুর রাজ্যে এক সফরে গিয়ে ঘোষণা করেছেন যে বরাক নদীর ওপরে টিপাইমুখ বাঁধ তৈরী হবেই৻
আজ শনিবার উত্তরপূর্বাঞ্চলীয় রাজ্য মণিপুরে এক জনসভায় ভাষণ দিতে গিয়ে মনমোহন সিং বলেন যে ওই প্রকল্পের পরিবেশ সংক্রান্ত ছাড়পত্র ইতিমধ্যেই দেওয়া হয়েছে, বন দপ্তরের ছাড়পত্র দেওয়ার কাজ চলছে৻
বাঁধ বিরোধী আন্দোলনের নেতারা ভারতের প্রধানমন্ত্রীর ঘোষণাকে অগণতান্ত্রিক বলে আখ্যা দিয়ে অভিযোগ করছেন পরিবেশ সংক্রান্ত ছাড়পত্র দেওয়ার আগে স্থানীয় মানুষদের প্রতিবাদ নথিভুক্ত করা হয়নি, নিরাপত্তাবাহিনীর সাহায্যে স্থানীয় মানুষের মুখ বন্ধ করে দেওয়া হয়েছিল৻
প্রধানমন্ত্রী মনমোহন সিং অবশ্য এদিন আরও জানিয়েছেন যে টিপাইমুখে বাঁধ ও জলবিদ্যুৎ কেন্দ্র তৈরীর কাজ সম্পন্ন করবে সম্প্রতি গঠিত জাতীয় জলবিদ্যুৎ নিগম বা এন এইচ পি সি , মনিপুর সরকার আর এস জে ভি এনের যৌথ উদ্যোগের কোম্পানিটি৻
টিপাইমুখ বাঁধ বিরোধী আন্দোলনের নেতারা অবশ্য বলছেন যে পরিবেশ সংক্রান্ত ছাড়পত্র দেওয়া হলেও এনভায়রনমেন্ট ইমপ্যাক্ট এনালিসিস বা পরিবেশের ওপরে প্রভাবের বিশ্লেষণ করার সময়ে নিয়ম অনুযায়ী স্থানীয় মানুষের প্রতিবাদ লিপিবদ্ধ করা হয়নি৻
প্রায় দুদশক ধরে টিপাইমুখ বাঁধ তৈরীর বিরোধিতায় সরব মণিপুরের বিজ্ঞানী আর কে রঞ্জন বিবিসিকে বলছিলেন পরিবেশের ওপরে ওই বাঁধের ঠিক কী প্রভাব পড়বে, তা বিশ্লেষণ করার জন্য আগে থেকেই প্রাপ্ত কিছু তথ্যের ওপরে নির্ভর করা হয়েছে – যার অনেকাংশই ভুল তথ্য৻
তিনি মন্তব্য করেন, ‘সরকারের উচিত ছিল মানুষের সঙ্গে আলোচনা করা.. তাঁদের কাছ থেকে সম্মতি আদায় করা৻ তা করা হয়নি৻ প্রত্যেকটি জনশুনানিতে নিরাপত্তা কর্মীরা স্থানীয় মানুষকে ঢুকতে বাধা দিয়েছেন – যাতে নিজেদের মতামত তাঁরা না জানাতে পারেন৻`
পরিবেশ সংক্রান্ত ছাড়পত্র পাওয়ার জন্য সংগঠিত ওইসব জনশুনানিগুলিতে সংবাদমাধ্যমেরও প্রবেশাধিকার ছিল না বলে জানান আর কে রঞ্জন৻
নদীর ভাটি অঞ্চলে – আসামের কাছাড়ের কিছু মানুষ মনে করেন যে ওই বাঁধ হলে প্রতি বছরের বন্যা থেকে তাঁরা রক্ষা পাবেন – যদিও সেই মত মানেন না আবার কাছাড়েরই অনেক মানুষ৻
তবে এই প্রকল্পের বিরুদ্ধে সব থেকে সরব টিপাইমুখ গ্রাম সহ বরাক নদীর উজানের বাসিন্দারা৻
পরিবেশবিদরা মনে করেন, বাঁধ আর সংলগ্ন জলাধার তৈরী হলে বিরাট এলাকার পাহাড়-গ্রাম-প্রাণীসম্পদ চিরকালের মতো ধ্বংস তো হবেই, সঙ্গে জীবিকা হারাবেন বহু মানুষ৻ অথচ এই সামাজিক ক্ষয়ক্ষতির কোনও হিসাবই করা হয় নি৻
আর কে রঞ্জন যেমন এ প্রসঙ্গে বলছিলেন, ‘পরিবেশের ওপরে ক্ষয়ক্ষতির সমীক্ষার সঙ্গেই সমাজজীবনে এর প্রভাব কী পড়বে, তারও বিশ্লেষণ করা উচিত ছিল৻ আজ পর্যন্ত সেই কাজটা করা হয় নি৻ `
টিপাইমুখের বিরুদ্ধে প্রতিবাদ তীব্র হচ্ছে ভাটির দেশ বাংলাদেশেও
কিছু স্বার্থান্বেষী মহল – বিশেষত বড় বড় বাঁধ তৈরী হলে যে মহল লাভবান হবে, তাদের চাপেই সরকার এই বাঁধ তৈরী করতে এগিয়ে যাচ্ছে বলে মনে করছে বাঁধ বিরোধী আন্দোলনের অন্যতম প্রধান নেতা বিজ্ঞানী আর কে রঞ্জন৻
ভূবিজ্ঞানীরা বলছেন যে টিপাইমুখ গ্রামটি অত্যন্ত ভূমিকম্পপ্রবণ৻ আর যে রকফিল ড্যাম টিপাইমুখে তৈরী হবে, তা ভূমিকম্পের ফলে ভেঙ্গে গেলে উজানে থাকা আসাম আর বাংলাদেশের বিস্তীর্ণ অঞ্চলের ক্ষতি হওয়ার আশঙ্কা থেকে যাচ্ছে৻
ভারত অবশ্য বার বার আশ্বস্ত করেছে যে ওই প্রকল্প থেকে বাংলাদেশের কোনও ক্ষতি হয় – এমন কোনও কাজ তারা করবে না৻
উল্লেখ্য, মনমোহন সিং আজ যেখানে ভাষণ দিয়েছেন, সেই মণিপুরেই বরাক নদীর ওপরে ১৫০০ মেগাওয়াট ক্ষমতাসম্পন্ন টিপাইমুখ প্রকল্পটি তৈরী হওয়ার কথা৻
ওই রাজ্যের সরকার আগেই জানিয়েছিল যে তারা সেখানে বাঁধ তৈরী করতে বদ্ধপরিকর, এদিন দেশের প্রধানমন্ত্রীও একই কথা ঘোষণা করলেন৻