উত্তর পূর্ব ভারতের মণিপুরে, বরাক নদীর ওপরে টিপাইমুখ বাঁধ ও জলবিদ্যুৎ কেন্দ্র নির্মাণের জন্য ভারতের জাতীয় জলবিদ্যুৎ নিগম, মণিপুর সরকার ও আরও একটি রাষ্ট্রায়ত্ত্ব সংস্থা একটি যৌথ উদ্যোগের কোম্পানি গঠন করেছে৻

ভারতের বিদ্যুৎমন্ত্রী ও মণিপুরের মুখ্যমন্ত্রীর উপস্থিতিতে সম্প্রতি ওই চুক্তি সই হয়েছে বলে  জানা গেছে৻

ভারতের জাতীয় জলবিদ্যুৎ নিগম, এন এইচ পি সি, রাষ্ট্রায়ত্ত্ব জলবিদ্যুৎ সংস্থা এস জে ভি এন ও মণিপুর সরকারের মধ্যে সই হওয়া চুক্তিটিতে বলা হয়েছে যে টিপাইমুখ বাঁধ ও জলবিদ্যুৎ উৎপাদন কেন্দ্রটি তৈরি করবে নতুন জয়েন্ট ভেঞ্জার কোম্পানিটি৻

কিছুদিন আগে স্বাক্ষরিত হলেও শুক্রবার বিবিসি বাংলার হাতে চুক্তি স্বাক্ষরের বিস্তারিত বিবরণ এসেছে, যাতে বলা হয়েছে যে নতুন যৌথ উদ্যোগের কোম্পানিটিতে এন এইচ পি সি-র ৬৯%, এস জে ভি এনের ২৬% আর মণিপুর সরকারের ৫% শেয়ার থাকবে৻

চুক্তি স্বাক্ষরের বিষয়টি স্বীকার করেছেন জাতীয় জলবিদ্যুৎ নিগমের মুখপাত্র জতিন্দর ম্যাগো৻

মণিপুর সরকারের মুখপাত্র ও রাজ্যের সেচ ও বন্যা নিয়ন্ত্রণ মন্ত্রী এন বীরেন সিং বিবিসিকে জানিয়েছেন যে তাঁরা টিপাইমুখ প্রকল্প গড়ে তুলতে বদ্ধ পরিকর৻

“সরকারের নীতি খুবই পরিস্কার, টিপাইমুখ প্রকল্প হবেই৻ কেন্দ্রীয় সরকারের আর্থিক সহায়তায়, বিশেষত উত্তরপূর্ব ভারত উন্নয়ন দপ্তর এর জন্য টাকা দেবে৻”

মণিপুর সরকারের মুখপাত্র ও মন্ত্রী বীরেন সিং আরো বলেছেন প্রকল্পটি তৈরি হবে এন এইচ পি সি-র নেতৃত্বে৻ রাজ্য সরকার চেষ্টা করছে টিপাইমুখ প্রকল্পটিকে ভারতের প্রধানমন্ত্রী যাতে জাতীয় প্রকল্প হিসাবে ঘোষণা করেন।

বাঁধ নির্মাণের জন্য নতুন যৌথ কোম্পানি তৈরির আগেই ভারতের সীমান্তবর্তী সড়ক নির্মান করে যে আধাসামরিক বাহিনী – সেই বর্ডার রোডস অর্গানাইজেশন একটি জরিপ করাচ্ছে, যার ভিত্তিতে টিপাইমুখ প্রকল্প তৈরিতে যেসব ভারী যন্ত্রপাতি লাগবে, তা বহন করার ক্ষমতাশালী রাস্তা আর সেতু নির্মাণ, ও বাঁধের জলাধার সংলগ্ন জাতীয় মহাসড়কটি ডুবে গেলে কোথা দিয়ে নতুন রাস্তা বা সেতু তৈরী হবে, সেগুলোর পরিকল্পনা তৈরি হবে৻

সরকার টিপাইমুখ বাঁধ নির্মাণের কাজে এগিয়ে গেলেও দীর্ঘদিন ধরে টিপাইমুখ বাঁধ নির্মাণের বিরোধিতা করে আসছেন মণিপুরের অনেক বিজ্ঞানী ও পরিবেশবিদ৻

তাঁরা বলছেন বার্মা থেকে আসা থুইভাই ও বরাক নদীর সংযোগস্থলের গ্রাম টিপাইমুখে জলাধার ও বিদ্যুৎ প্রকল্প হলে বিরাট এলাকার পাহাড়-জঙ্গল জলে ডুবে যাবে ও অনেক লুপ্তপ্রায় প্রাণীসম্পদ ধ্বংস হবে৻ গৃহহীন হবেন আর জীবিকা হারাবেন বহু মানুষ৻

ভূবিজ্ঞানীরা বলছেন টিপাইমুখ অত্যন্ত ভূমিকম্প প্রবণ এলাকা। যদি বাঁধ নির্মানের পরে সেটি ভূমিকম্পে ক্ষতিগ্রস্ত হয়, তাহলে ভাটি অঞ্চলে থাকা আসাম ও বাংলাদেশের বড়সড় ক্ষতি হয়ে যাবে৻

টিপাইমুখ প্রকল্প বিরোধী আন্দোলনের অন্যতম নেতা রামানন্দ ওয়াংখেইরাকপাম সাম্প্রতিক চুক্তি সাক্ষরের বিষয়ে প্রতিক্রিয়া জানাতে গিয়ে বলেন বিরোধিতার জায়গাগুলো সমাধানের কোনও চেষ্টাই সরকার করে নি।

“দীর্ঘদিন ধরে টিপাইমুখ প্রকল্পের বিরোধিতার একটা মূল কারণ ছিল স্থানীয় মানুষ বা ভাটি অঞ্চলের অর্থাৎ আসাম আর বাংলাদেশের মানুষ। এইসব মানুষের সঙ্গে কোনও আলোচনা না করেই প্রকল্প রূপায়নের চেষ্টা হচ্ছিল৻ এখন সেগুলো না করেই আবারও নতুন চুক্তি সই করার মধ্যে কোনও যুক্তি খুঁজে পাওয়া যাচ্ছে না,” বলেন মিঃ ওয়াংখেইরাকপাম।

তবে আসামের কাছাড় অঞ্চলের অনেক মানুষ আবার প্রতিবছরের বন্যার হাত থেকে রক্ষা পাওয়ার জন্য টিপাইমুখ বাঁধ নির্মাণকে সমর্থনও করেন৻

জাতীয় জলবিদ্যুৎ নিগম বলছে যে টিপাইমুখ প্রকল্পটির সাহায্যে জলবিদ্যুৎ উৎপাদনের সঙ্গেই বরাক নদীতে বন্যা নিয়ন্ত্রণও করা যাবে৻ ওই প্রকল্পে ১৬২ মিটার উঁচু বাঁধ থাকবে, বিদ্যুৎ উৎপাদনের ৬ টি ইউনিট থাকবে – যার প্রতিটির ২৫০ মেগাওয়াট করে বিদ্যুৎ উৎপাদনের ক্ষমতা থাকবে৻

ইউনাইটেড নিউজ ২৪ ডট কম/ইউএন ডেস্ক

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here