স্টাফ রিপোর্টার :: জয় বাংলা’কে জাতীয় স্লোগান ঘোষণা করে রায় দিয়েছেন হাইকোর্ট। আগামী তিন মাসের মধ্যে এ রায় কার্যকর করতে সরকারের সংশ্নিষ্টদের প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ নিতে বলা হয়েছে। পাশাপাশি তাদের রায় বাস্তবায়নের অগ্রগতি প্রতিবেদনও একই সময়ের মধ্যে সুপ্রিম কোর্টের রেজিস্ট্রার জেনারেলের কাছে দাখিলের নির্দেশ দেওয়া হয়েছে।
বিচারপতি এফআরএম নাজমুল আহাসান ও বিচারপতি কেএম কামরুল কাদের সমন্বয়ে গঠিত হাইকোর্ট বেঞ্চ মঙ্গলবার এ-সংক্রান্ত রুলের চূড়ান্ত শুনানি নিয়ে এ রায় দেন।
‘জয় বাংলা’কে জাতীয় স্লোগান হিসেবে ঘোষণা চেয়ে ২০১৭ সালে হাইকোর্টে রিট করেন সুপ্রিম কোর্টের আইনজীবী ড. বশির আহমেদ। পরে ওই বছরের ৪ ডিসেম্বর হাইকোর্ট রুল জারি করেন। গতকাল ওই রুল নিষ্পত্তি রায় দেন হাইকোর্ট।
রায়ে বলা হয়, রাষ্ট্রের সর্বোচ্চ পর্যায় থেকে সর্বস্তরের রাষ্ট্রীয় অনুষ্ঠানে ‘জয় বাংলা’ স্লোগান বলতে ও দিতে হবে। রায় ঘোষণার সময় আদালত বলেন, ‘আমরা ঘোষণা করছি যে, ‘জয় বাংলা’ বাংলাদেশের জাতীয় স্লোগান হবে। সব জাতীয় দিবস এবং উপযুক্ত ক্ষেত্রে সাংবিধানিক পদাধিকারীগণ এবং রাষ্ট্রীয় সব কর্মকর্তা সরকারি অনুষ্ঠানের বক্তব্য শেষে যেন ‘জয় বাংলা’ স্লোগান উচ্চারণ করেন, সে জন্য সংশ্নিষ্ট বিবাদীরা যথাযথ পদক্ষেপ গ্রহণ করবেন। এ ছাড়া সব শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে অ্যাসেমব্লি সমাপ্তির পর ছাত্র-শিক্ষকরা যেন ‘জয় বাংলা’ স্লোগান উচ্চারণ করেন, সে জন্যও বিবাদীরা যথাযথ পদক্ষেপ গ্রহণ করবেন।’ আদালত আরও বলেন, “জাতীয় স্লোগান হিসেবে ‘জয় বাংলা’কে ব্যবহার করতে দ্বিধা কোথায়? আমাদের স্বাধীনতা সংগ্রামের সঙ্গে এ স্লোগান ওতপ্রোতভাবে জড়িত।” রায় ঘোষণার পর আদালত থেকে বেরিয়ে ‘জয় বাংলা’ স্লোগান দেন রিটকারীসহ উপস্থিত আইনজীবীরা। রায়ে সন্তোষও প্রকাশ করেন তারা।
আদালতে রিটের পক্ষে শুনানি করেন আইনজীবী ড. বশির আহমেদ। রাষ্ট্রপক্ষে শুনানিতে ছিলেন অ্যাটর্নি জেনারেল মাহবুবে আলম, ডেপুটি অ্যাটর্নি জেনারেল বিশ্বজিৎ দেবনাথ, আবদুল্লাহ আল মাহমুদ বাশার ও সহকারী অ্যাটর্নি জেনারেল এম সাইফুল আলম। এ ছাড়া রুলের শুনানিতে আদালতের অনুমতি নিয়ে এর আগে সুপ্রিম কোর্টের জ্যেষ্ঠ আইনজীবী ইউসুফ হোসেন হুমায়ুন, সাবেক আইনমন্ত্রী শফিক আহমেদ, আবদুল মতিন খসরু, সুপ্রিম কোর্ট আইনজীবী সমিতির সভাপতি এএম আমিন উদ্দিনও তাদের মত তুলে ধরেন।
রায়ের পর রিটকারী আইনজীবী ড. বশির আহমেদ সাংবাদিকদের বলেন, ‘জয় বাংলা’ স্লোগান আমাদের মুক্তিযুদ্ধের অনুপ্রেরণা। জাতীয় ঐক্যের স্লোগান এটি। হাইকোর্টের রায়ের মাধ্যমে এটাই স্বীকৃতি পেয়েছে। রায়ের উদ্ৃব্দতি দিয়ে বশির আহমেদ আরও বলেন, আদালত বলেছেন ইতিহাস বিকৃতি করে কখনও তা দাবিয়ে রাখা যায় না। সকল স্তরের পাঠ্যবইয়ে বঙ্গবন্ধুর ভাষণ থাকা প্রয়োজন। পূর্ণাঙ্গ রায়ে এ বিষয়ে বিস্তারিত থাকবে বলেও জানান তিনি।
রায়ের পর সবেক মন্ত্রী ও সুপ্রিম কোর্টের জ্যেষ্ঠ আইনজীবী আবদুল মতিন খসরু বলেন, একাত্তরে মুক্তিযুদ্ধে দলমত নির্বিশেষে সবার হৃদয় উৎসারিত স্লোগান ছিল ‘জয় বাংলা’। হাইকোর্টের রায়ের মধ্য দিয়ে এটি জাতীয় স্লোগান হিসেবে স্বীকৃতি পেল। তিনি আরও বলেন, বিশ্বের বিভিন্ন দেশে জাতীয় স্লোগান রয়েছে। পাশের দেশ ভারতেও জাতীয় স্লোগান রয়েছে। তাই ‘জয় বাংলা’কে জাতীয় স্লোগান হিসেবে স্বীকৃতির এ রায় যুগান্তকারী।
সুপ্রিম কোর্ট আইনজীবী সমিতির সভাপতি এএম আমিন উদ্দিন বলেন, বর্তমান সংবিধানে ১৫০ অনুচ্ছেদ দিয়ে বঙ্গবন্ধুর ৭ মার্চের ভাষণটিকে সংবিধানের অংশ করে নেওয়া হয়েছে। সেই ভাষণের শেষ অংশ হচ্ছে ‘জয় বাংলা’। সুতরাং সংবিধান অনুযায়ী ‘জয় বাংলা’ সংবিধানের অংশ। হাইকোর্টের এ রায়ের পর ‘জয় বাংলা’ স্লোগান জাতীয় স্লোগান হিসেবে আইনে পরিণত হলো।