দীর্ঘ এক যুগ পর প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা জয়পুরহাট আসছেন আজ। প্রধানমন্ত্রীর আগমনে উন্নয়ন বঞ্চিত জেলাবাসী দেখছে নানান স্বপ্ন। প্রধানমন্ত্রী হিসেবে নির্বাচিত হবার পর এই প্রথম জয়পুরহাট আসছেন শেখ হাসিনা। তাই তার শুভ আগমন উপলক্ষে জয়পুরহাট সেজেছে বর্ণিল সাজে। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার আগমন ও জনসভাকে কেন্দ্র করে দলীয় ব্যানার, তোরণ ও ডিজিটাল বিলবোর্ডে ছেয়ে গেছে শহরের সব রাস্তা। বিশেষ করে সদর রাস্তায় বিভিন্ন ধরনের ডিজিটাল তোরণও ব্যনার শোভা পাচ্ছে বেশী।

বর্তমান সরকারের ৩ বছর পর প্রধানমন্ত্রীর আগমন উপলক্ষে তার কাছে জয়পুরহাটের মানুষের প্রত্যশা অনেক। এ সফরকে কেন্দ্র করে জেলার উন্নয়নে কি ঘোষণা দিবেন প্রধানমন্ত্রী এ নিয়ে নানা জল্পনা-কল্পনা চলছে সর্বত্রই। ভারত সীমান্ত ঘেষা খাদ্য উদ্বৃত্ত ছোট জেলা জয়পুরহাট। বিপুল সম্ভবনাময় এ জেলায় বিভিন্ন সুযোগ সুবিধা থাকা সত্বেও প্রতিনিধিত্বের অভাবে গড়ে উঠেনি ভারী কোন শিল্প কলকারখানা ও প্রতিষ্ঠান । তাই জয়পুরহাটবাসী বঙ্গবন্ধুকন্যা প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার কাছে আজ প্রানের দাবী জানাবেন।

জয়পুরহাট জেলা আওয়ামীলীগ ইতোসধ্যেই দফায় দফাই বর্ধিত সভা মিটিং ও জনসভা করে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার আগমনকে সফল করতে সকল প্রস্ত্তি সম্পন্ন করেছে। সাধারন জনগনের দাবীর সাথে তারা একাত্ততা ঘোষনা করে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার নিকট জয়পুরহাটবাসীর পক্ষ থেকে ২৫ দফা প্রস্তাবনা জানাবেন। প্রস্তাবনার মধ্যে প্রাণের দাবী জয়পুরহাট মেডিকেল কলেজ হাসপাতাল স্থাপন। আর এই প্রত্যাশার অনেক বাস্তবতাও রয়েছে। জয়পুরহাট জেলা আধুনিক হাসপাতালে মেডিকেল কলেজ স্থাপনের প্রয়োজনীয় অবকাঠামো বিদ্যমান, প্রথম ২ বছর ছাত্র-ছাত্রীদের জন্য ক্লাস রুম, টিউটোরিয়াল রুম এবং প্রশাসনিক অবকাঠামো ও রয়েছে। তৃতীয় বর্ষের ছাত্র-ছাত্রীদের ক্লিনিক্যাল ক্লাসের জন্য প্রয়োজনীয় ২’শ ৫০ শয্যা হাসপাতাল অবকাঠামো রয়েছে। প্রথম বর্ষ হতেই ছাত্র-ছাত্রীদের জন্য আবাসিক ব্যবস্থা রয়েছে। জয়পুরহাট আধুনিক হাসপাতালে ২’শ ৫০ শয্যা বিশিষ্ট হাসপাতালের উত্তর বকে ভাটিক্যাল এক্সটেনশন করে তৃতীয়, চতুর্থ ও পঞ্চম বর্ষের জন্য ক্লাস রুম, টিউটোরিয়াল রুম, পরীক্ষাগার পর্যায়ক্রমে নির্মান করা সম্ভব। এর জন্য অতিরিক্ত কোন নতুন স্থাপনা নির্মান করার প্রয়োজন হবে না। হাসপাতালে প্রতি ৫ বেডের বিপরীতে একজন ছাত্র-ছাত্রী ভর্তি করার বিধান বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃক স্বীকৃত থাকায় এখানে ৫০ জন ছাত্র-ছাত্রী ভর্তি করা এই মহুর্তে সম্ভব। একই কাঠামো নিয়ে স্থাপিত ফেনী এবং কক্সবাজার হাসপাতালকে ইতিমধ্যে মেডিকেল কলেজে রূপান্তর করা হয়েছে। জয়পুরহাট জেলা আধুনিক হাসপাতাল কে মেডিকেল হাসপাতালে রূপান্তরিত করা হলে এই মুহুর্তে ভৌত অবকাঠামো নির্মান খাতে ও জনবল নিয়োগে সরকারের অতিরিক্ত কোন অর্থ বরাদ্দেরও প্রয়োজন হবে না। সর্বপরি জয়পুরহাট জেলা আধুনিক হাসপাতালটি দেশের মধ্যে একটি মডেল হাসপাতাল হিসেবে পরিচিত। এ হাসপাতাল স্বাস্থ্যসেবার মান বিশেষ করে জরুরী প্রসুতি সেবার জন্য সারাদেশের মধ্যে ৭ বার প্রথম পুরুস্কার পেয়েছে। এছাড়াও বগুড়া থেকে জয়পুরহাট নিকটবর্তী হওয়ায় গ্যাস লাইন চালু সহ অন্যান্য দাবীগুলো হলো-জয়পুরহাটে ড. এম ওয়াজেদ আলী বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয় স্থাপন, এলজিইডির মাধ্যমে জেলার পাঁচটি উপজেলায় ৩’শ কি.মি গ্রামীণ রাস্তা নির্মাণ, জেলার ছোট যমুনা, তুলসীগঙ্গা ও শ্রী নদী পুনঃ খনন এবং রাবার ড্যাম স্থাপন, শেখ কামাল স্টেডিয়াম নাম করণে একটি অত্যাধুনিক স্টেডিয়াম নির্মাণ এবং বর্তমান স্টেডিয়ামটিকে সুলতানা কামাল ইনডোর স্টেডিয়াম হিসেবে ঘোষণা, জেলার বিকাশমান পোল্ট্রি শিল্পের উন্নয়নের লক্ষ্যে একটি পোল্ট্রি রিসার্স ইনস্টিটিউট স্থাপন, সুপরিসর ক্যাম্পাসে জয়পুরহাট সরকারি বালিকা বিদ্যালয় স্থানাস্তর, শেখ রাসেল নামকরণে ১ হাজার আসন বিশিষ্ট একটি অত্যাধুনিক অডিটরিয়াম নির্মাণ, হিলি-জয়পুরহাট-বগুড়া সড়কটিকে জাতীয় মহাসড়কে উন্নীতকরণ, ক্ষেতলাল ও পাঁচবিবি পৌরসভার নতুন ভবন  নির্মাণ, জয়পুরহাটে একটি ট্রমা সেন্টার স্থাপন, নান্দাইল দীঘিকে আধুনিক পর্যটন কেন্দ্র হিসেবে ঘোষণা, জামালগঞ্জ কয়লা খনি সম্পর্কে সরকারের ইতিবাচক সিদ্ধান্ত গ্রহণ, জয়পুরহাটে একটি তথ্য প্রযুুক্তি পার্ক (ওঞ চধৎশ) স্থাপন, শহরের মূল রাস্তাটি প্রশস্ত করে দ্বিমুখী যান চলাচলের (ঞড়ি ডধু ঞৎধভভরপ) ব্যবস্থা গ্রহণ, জয়পুরহাট, আক্কেলপুর, পাঁচবিবি ও তিলকপুর রেলওয়ে স্টেশনের আধুনিকায়ন এবং তিলকপুর স্টেশনকে ক্লোজিং ডাউনের আওতামুক্ত করণ, জেলা শহরের পলী বিদ্যুৎ এলাকা হতে খনজনপুর-পাহাড়পুর রোড পর্যন্ত বাইপাস সড়ক নির্মাণ, জয়পুরহাট নার্সিং ইনস্টিটিউটকে নার্সিং কলেজে রূপান্তর, জেলার পাঁচটি উপজেলা স্বাস্থ্য কমপেক্সে ৫টি এ্যাম্বুলেন্স সরবরাহ, জয়পুরহাট কারাগারকে একটি আধুনিক ও পূর্ণাঙ্গ জেলা কারগারে রূপান্তর, কালাই ও ক্ষেতলাল উপজেলায় ১(এক) লাখ মেট্রিক টন ধারণ ক্ষমতাসম্পন্ন দু’টি কোল্ড স্টোরেজ নির্মাণ, জয়পুরহাটে ইনস্টিটিউট অফ হেলথ টেকনোলজি চালুকরণ, জয়পুরহাট চিনিকলে উচ্চক্ষমতাসম্পন্ন সৌর প্যানেল স্থাপন।

জয়পুরহাট জেলা আওয়ামীলীগের সাধারন সম্পাদক ও জেলা পরিষদের প্রশাসক এসএম সোলাইমান আলী জানান, শহরে প্রায় একশ’টি তোরণ ও কয়েকশ ডিজিটাল পোষ্টারের গেইট নির্মান করা হয়েছে। দীর্ঘ এক যুগ পর আসছেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা, সেজন্য নেতাকর্মীদের মধ্যে ফিরে এসেছে প্রানচাঞ্চল্য।

জয়পুরহাটের সংরক্ষিত মহিলা সংসদ সদস্য মাহফুজা মন্ডল রিনা জানান, তার পক্ষ থেকে প্রধান মন্ত্রীর কাছে গ্যাস সংযোগের দাবীই প্রধান এছাড়া তিনি সর্বোচ্চ দাবী করবেন মেডিকেল কলেজ প্রতিষ্ঠার।

জয়পুরহাট জেলা আওয়ামীলীগের সভাপতি এ্যাড. শামছুল আলম দুদু জানান, তিনি জয়পুরহাটে মেডিকেল কলেজ, বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয় এবং রাস্তাঘাট পাকাকরন ও বিদ্যুৎ সংযোগের দাবী করবেন প্রধানমন্ত্রী কাছে। একই দাবী করেছেন জেলা আওয়ামীলীগের সাধারন সম্পাদক ও জয়পুরহাট জেলা পরিষদের প্রশাসক এস এম সোলাইমান আলী। তিনি জানান, জয়পুরহাটকে প্রধানমন্ত্রী ভালবাসেন সেজন্য কোন আসন না পেয়েও তিনি এখানে অনেক কিছু দিয়েছেন। জনসভা থেকে প্রধানমন্ত্রী জয়পুরহাটবাসীকে প্রত্যাশিত কিছু দিয়ে যাবেন্।

আওয়ামীলীগরে কেন্দ্রীয় সাংগঠনিক সম্পাদক আবু সাঈদ আল মাহমুদ স্বপন জানান, তার পক্ষ থেকে প্রধানমন্ত্রীর কাছে উল্লেখযোগ্য বা প্রধান দাবী রয়েছে মেডিকেল কলেজ ও বিশ্ববিদ্যালয়। এছাড়া তিনি আরো জানান, জয়পুরহাটের গ্রামীন অবকাঠামো উন্নয়নের জন্য তিনি প্রধানমন্ত্রীর কাছে বেশ কিছু দাবী উথ¥াপন করবেন।

ইউনাইটেড নিউজ ২৪ ডট কম/এস এম শফিকুল ইসলাম/জয়পুরহাট

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here