কমরেড জ্যোতি বসুর মৃত্যুর আজ ২ বছর। ২০১০ সালের ১৭ জানুয়ারি সকালে কলকাতার একটি বেসরকারি হাসপাতালে পশ্চিমবঙ্গের সাবেক মুখ্যমন্ত্রী তথা বর্ষীয়ান ওই বাম নেতার মৃত্যু হয়। সে বছরের ১ জানুয়ারি সন্ধ্যায় প্রচণ্ড শ্বাসকষ্টের কারণে তাঁকে হাসপাতালে ভর্তি করা হয়েছিল। সবাই উন্মুখ হয়ে ছিলেন, জ্যোতি বসুর শারীরিক অবস্থার উন্নতির জন্য প্রার্থনা করেছিলেন। কিন্তু শরীরের প্রায় সব গুরুত্বপূর্ণ অঙ্গ-প্রত্যঙ্গ ১৬ দিনে ক্রমশ অকেজো হয়ে গিয়েছিল। শুধু ভালো ছিল তাঁর মস্তিষ্ক। যে মস্তিষ্কের মেধা ও রাজনৈতিক বুদ্ধি দিয়ে ২১ জুন ১৯৭৭ থেকে ৬ নভেম্বর ২০০০ সাল পর্যন্ত টানা ২৩ বছর পশ্চিমবঙ্গের মুখ্যমন্ত্রীর কুর্সিতে বসেছিলেন। যে বুদ্ধির কাছে শত বছরের প্রাচীন দল কংগ্রেস এবং বিজেপির মতো বিরোধীদেরও নিবৃত্ত করতে পরেছেন, কোনো বির্তকে না জড়িয়ে। যে ‘দক্ষতা’ রাজ্যের প্রকৃত ‘জনশাসক’ হিসেবে তাঁর স্বীকৃতি এনেছে, পরপর পাঁচবার ক্ষমতায় এনেছে তাঁরই মস্তিষ্কপ্রসূত বামফ্রন্টের জোট সরকারকে।

শুধু প্রাদেশিক দলের বর্ষীয়ান নেতা হিসেবে নন, যে আন্তর্জাতিকতা লালনের মাধ্যমে একজন আন্তর্জাতিকমানের নেতা হিসেবে প্রতিষ্ঠা পাওয়া সম্ভব; সবটাই ছিল তাঁর ওই মস্তিষ্কে। আর সে কারণে হয়তো দেহের গুরুত্বপূর্ণ অঙ্গের মৃত্যু হওয়ার পরও টানা ১৬ দিন মস্তিষ্ক বেঁচে যাওয়ার জন্য লড়াই চালিয়েছিল। ৯৬ বছরের বার্ধ্যকজনিত মৃত্যুকে মেনে না নেওয়া ছাড়া আর কীই-বা উপায় ছিল জ্যোতি বসুর কয়েক কোটি অনুগামী তথা মার্কসবাদী কমিউনিস্ট পার্টির সদস্যদের।

১৭ জানুয়ারি সকাল পৌনে ১১টায় বিমান বসু সাংবাদিকদের কাঁদতে কাঁদতে বলেন, ‘জ্যোতি বাবু আর নেই। আমাদের রেখে চলে গিয়েছেন।’ বিমান বসুর উচ্চারিত ওই ‘দুটি বাক্য’ কয়েক সেকেন্ডের মধ্যে গোটা বিশ্বে ছড়িয়ে পড়েছিল। ভারতের অন্যরাজ্যগুলোতে তো বটেই, জ্যোতি বসুর মৃত্যুতে বাংলাদেশও শোকগ্রস্ত হয়ে পড়েছিল। কারণ জ্যোতি বসুর পৈতৃক বাড়ি নারায়ণগঞ্জের বারদি গ্রামে। জ্যোতি বসুর জন্মও নাকি সেখানেই হয়েছে। তবে এমন তথ্যের সরকারি কোনো স্বীকৃতি নেই। কারণ সরকারিভাবে জ্যোতি বসুর জন্ম (১৯১৪ সালের ৮ জুলাই) শহর কলকাতায়ই।

বিভিন্ন আয়োজনের মাধ্যমে আজ জ্যোতি বসুর মৃত্যুর ২ বছর স্মরণ করছে পশ্চিমবঙ্গ রাজ্য সরকার। এর মধ্যে জ্যোতি বসুর নামে কলকাতার অদূরে নিউ টাউন শহরের নামকরণ করা হয়েছে ‘জ্যোতিবসু নগর’। সিপিএমের উদ্যোগে সেখানে গড়া হচ্ছে ‘জ্যোতি বসু সেন্টার ফর সোশ্যাল স্টাডিজ অ্যান্ড রিসার্চ’ নামের এক আন্তর্জাতিকমানের গবেষণাকেন্দ্র। সেখানে জ্যোতি বসু সম্পর্কে বহু তথ্য মিলবে। থাকবে আন্তর্জাতিক মানের এক সভাকক্ষ। লাইব্রেরি এবং অতিথিনিবাসও। আজ সোমবার থেকে মানুষের কাছ থেকে অর্থ সংগ্রহ করে গবেষণাকেন্দ্র তৈরি করবে সিপিএম।

জীবনের বেশির ভাগ সময় দিয়েছিলেন মানুষের জন্য, আর মৃত্যুর পরও দেহ-অস্থি-মস্তিষ্ক_সবই দিয়ে গিয়েছেন মানুষকে। কলকাতার পিজি হাসপাতালে তাঁর দেহ নিয়ে এখন গবেষণা করেন আগামীদিনের চিকিৎসকরা। এমন মানবিক গুণের কারণে জ্যোতি বসু রাজনীতির ঊধর্ উঠে, সবার, সব দলের নেতা হিসেবে নিজের স্থান করে নিয়েছিলেন। আর তাই তাঁর মৃত্যুর শোক মিছিলে শামিল হয়েছিলেন সব দলের শীর্ষ নেতৃত্ব, সাধারণ মানুষ, পেশাজীবী সংগঠন ও আন্তর্জাতিক নেতৃত্ব। মহান ওই ব্যক্তির অনুপস্থিতি পশ্চিমবঙ্গবাসী হৃদয় দিয়ে অনুভব করবেন, সন্দেহ নেই। শারীরিক অনুপস্থিতি থাকলেও জ্যোতি বসুর দীর্ঘ রাজনৈতিক ও বর্ণময় জীবনের নানা ঘটনা দেশ-বিদেশের মানুষের কাছে যুগ যুগ ধরে ‘অমর’ থাকবে।

ইউনাইটেড নিউজ ২৪ ডট কম/স্টাফ রিপোর্টার

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here