সামিন আরহাম , খেলা প্রতিনিধি :: ডেভন কনওয়ে ও রাচিন রবীন্দ্রর জোড়া সেঞ্চুরিতে আজ থেকে শুরু হওয়া ১৩তম ওয়ানডে বিশ্বকাপে যাত্রা শুরু করলো গতবারের রানার্স-আপ নিউজিল্যান্ড। বিশ্বকাপের উদ্বোধনী ম্যাচে নিউজিল্যান্ড ৯ উইকেটে বড় ব্যবধানে হারিয়েছে বর্তমান চ্যাম্পিয়ন ইংল্যান্ডকে।

জো রুটের হাফ-সেঞ্চুরি ও লোয়ার অর্ডার ব্যাটারদের দৃঢ়তায় টস হেরে প্রথমে ব্যাট করে ৫০ ওভারে ৯ উইকেটে ২৮২ রান করে ইংল্যান্ড। রুট সর্বোচ্চ ৭৭ রান করেন। জবাবে ৮২ বল বাকী রেখেই জয়ের স্বাদ পায় নিউজিল্যান্ড। কনওয়ে ১৫২ ও রবীন্দ্র ১২৩ রানে অপরাজিত থাকেন। দ্বিতীয় উইকেটে অবিচ্ছিন্ন ২৭৩ রানের জুটি গড়েন কনওয়ে ও রবীন্দ্র।

আহমেদাবাদের নরেন্দ্র মোদি স্টেডিয়ামে টস জিতে প্রথমে বোলিং করার সিদ্বান্ত নেন নিউজিল্যান্ডের ভারপ্রাপ্ত অধিনায়ক টম লাথাম। পেসার ট্রেন্ট বোল্টের করা ইনিংসের প্রথম ওভারের প্রথম বলে কোন রান নিতে না পারলেও, পরের ডেলিভারিতে লং লেগ দিয়ে ছক্কা আদায় করে নেন ইংল্যান্ডের ওপেনার জনি বেয়ারস্টো।  ওভারে আরও ১টি চারে দলকে ১২ রান এনে দেন তিনি।
প্রথম ওভারে ১২ রান এলেও পরের দিকে রান তোলার গতি কমে যায় ইংল্যান্ডের। ৭ ওভার শেষে ৩৯ রান পায় ইংলিশরা। অষ্টম ওভারের চতুর্থ বলে আরেক ওপেনার ডেভিড মালানকে ১৪ রানে শিকার করে নিউজিল্যান্ডকে প্রথম সাফল্য এনে দেন পেসার ম্যাট হেনরি।

ভালো শুরুর পরও বেশি দূর যেতে পারেননি বেয়ারস্টোও। ১৩তম ওভারে স্পিনার মিচেল স্যান্টনারের বলে আউট হবার আগে ৪টি চার ও ১টি ছক্কায় ৩৫ বলে ৩৩ রান করেন বেয়ারস্টো।

১৭তম ওভারে প্রথমবারের মত আক্রমনে আসা নিউজিল্যান্ড স্পিনার রাচিন রবীন্দ্রর করা তৃতীয় ও চতুর্থ বলে বাউন্ডারি এবং পঞ্চম বলে ছক্কা মারেন ব্রুক। তবে ওভারের শেষ বলে ডেভন কনওয়েকে ক্যাচ দিয়ে আউট হওয়ার আগে  ৪টি চার ও ১টি ছক্কায় ১৬ বলে ২৫ রান করেন ব্রুক।

ব্রুকের বিদায়ে উইকেটে এসে বেশিক্ষণ টিকতে পারেননি মঈন আলি। অকেশনাল অপ-স্পিনার গ্লেন ফিলিপসের বলে বোল্ড হন ১৭ বলে ১১ রান করা মঈন। এতে ১১৮ রানে চতুর্থ উইকেটে পরিনত হয়  ইংল্যান্ড।

বড় জুটির লক্ষ্যে পঞ্চম উইকেটে নিউজিল্যান্ডের বোলারদের সামনে প্রতিরোধ গড়ে তুলেন জো রুট ও অধিনায়ক জশ বাটলার। তাদের হাফ-সেঞ্চুরির জুটিতে ২শর দ্বারপ্রান্তে পৌঁছে যায় ইংল্যান্ড। ৩৪তম ওভারে বাটলারকে ৪৩ রানে থামিয়ে নিউজিল্যান্ডকে ব্রেক-থ্রু এনে দেন হেনরি। ৪২ বলের ইনিংসে ২টি করে চার-ছক্কা হাকান বাটলার। জুটিতে ৭২ বলে ৭০ রান যোগ করেন রুট-বাটলার। এই জুটিতেই ৫৭ বল খেলে ওয়ানডেতে ৩৭তম হাফ-সেঞ্চুরির দেখা পান রুট।

বাটলারের বিদায়ের পর লিয়াম লিভিংস্টোনকে নিয়ে আবারও জুটি গড়ার চেষ্টা করেন রুট। কিন্তু সেটি বড় হতে দেননি বোল্ট। লং অফে হেনরিকে ক্যাচ দিয়ে ২০ রানে থামেন লিভিংস্টোন। জুটিতে ৩৩ বলে ৩৩ রান যোগ করেন লিভিংস্টোন-রুট।

হাফ-সেঞ্চুরির পর ইনিংস বড় করার চেষ্টারত রুট ৪২তম ওভারে ফিলিপসের ডেলিভারিতে রিভার্স সুইপ করতে গিয়ে বোল্ড হন। তবে আউট হওয়ার আগে ৪টি চার ও ১টি ছক্কায় ৮৬ বলে দলের পক্ষে সর্বোচ্চ  ৭৭ রান করেন রুট।

দলীয় ২২৯ রানে সপ্তম ব্যাটার হিসেবে রুট ফেরার পর লোয়ার অর্ডার ব্যাটারদের ৫৩ রান পায় ইংল্যান্ড। শেষ উইকেটে ২৬ বলে অবিচ্ছিন্ন ৩০ রান তুলেন আদিল রশিদ ও মার্ক উড। এতে ৫০ ওভারে ৯ উইকেটে ২৮২ রানের চ্যালেঞ্জিং সংগ্রহ পায় ইংল্যান্ড।

লোয়ার অর্ডারে স্যাম কারান ১৪, ক্রিস ওকস ১১, আদিল রশিদ অপরাজিত ১৫ এবং মার্ক উড অনবদ্য ১৩ রান করেন। নিউজিল্যান্ডের হেনরি ৪৮ রানে ৩টি, স্যান্টনার ৩৭ রানে ও ফিলিপস ১৭ রানে ২টি করে উইকেট নেন।

২৮৩ রানের টার্গেটে ইনিংসের প্রথম বলেই চার মারেন কনওয়ে। এরপর তিনি  পঞ্চম বলে আরও একবার বলকে সীমানা ছাড়া করলে  প্রথম ওভার থেকে ১০ রান পায় নিউজিল্যান্ড। কিন্তু দ্বিতীয় ওভারের প্রথম বলে পেসার কারানের বলে উইকেটের পেছনে বাটলারকে ক্যাচ দিয়ে  প্যাভিলিয়নে ফেরেন রানের খাতা  খুলতে না পারা উইল ইয়ং।

ইয়ংয়ের বিদায়ে তিন নম্বরে ক্রিজে আসেন প্রস্তুতি ম্যাচে পাকিস্তানের বিপক্ষে ওপেনার হিসেবে ৯৭ রান করা রবীন্দ্র। কনওয়েকে নিয়ে নিউজিল্যান্ডের চাকা দ্রুত ঘুড়াতে থাকেন রবীন্দ্র। ১৩তম ওভারে দলীয় ১শ রান স্পর্শ করেন  নিউজিল্যান্ড। ২০ ওভার শেষে দেড়শ এবং ২৭তম ওভারে ২শ রান পায় নিউজিল্যান্ড।

২৭তম ওভারেই নিজের মুখোমুখি হওয়া ৮৩তম বলে ওয়ানডেতে পঞ্চম সেঞ্চুরি পূর্ণ করেন কনওয়ে। ৩১তম ওভারে ৮২ বলে ক্যারিয়ারের ১৩তম ওয়ানডেতে প্রথম সেঞ্চুরির দেখা পান রবীন্দ্র। নিউজিল্যান্ডের পক্ষে সবচেয়ে কম বয়সী খেলোয়াড় হিসেবে সেঞ্চুরির রেকর্ড গড়লেন ২৩ বছর ৩২১ বয়সী রবীন্দ্র।

সেঞ্চুরির পর দ্রুত ম্যাচ শেষ করার দিকে মনোযাগ দেন কনওয়ে ও রবীন্দ্র। ৩৫তম ওভারে ২০ ও ৩৬তম ওভারে ১৬ রান তুলেন তারা। ৩৭তম ওভারের দ্বিতীয় বলে(৮২ বল বাকি থাকতে) নিউজিল্যান্ডের জয় নিশ্চিত করেন তারা। দ্বিতীয় উইকেটে ২১১ বলে অবিচ্ছিন্ন ২৭৩ রানের জুটি গড়েন কনওয়ে ও রবীন্দ্র।

ক্যারিয়ার সেরা ইনিংসে ১৯টি চার ও ৩টি ছক্কায় ১২১ বলে ১৫২ রানে অপরাজিত থাকেন   কনওয়ে। ৯৬ বল খেলে ১১টি চার ও ৫টি ছক্কায় অনবদ্য ১২৩ রান করেন রবীন্দ্র।

সংক্ষিপ্ত স্কোর কার্ড :
ইংল্যান্ড : ২৮২/৯, ৫০ ওভার (রুট ৭৭, বাটলার ৪৩, হেনরি ৩/৪৮)
নিউজিল্যান্ড : ২৮৩/১, ৩৬.২ ওভার (কনওয়ে ১৫২*, রবীন্দ্র ১২৩*, কারান ১/৪৭)
ফল : নিউজিল্যান্ড ৯ উইকেটে জয়ী।
ম্যাচ সেরা: রাচিন রবীন্দ্র (নিউজিল্যান্ড)

Print Friendly, PDF & Email

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here