ইয়ানূর রহমান, যশোর প্রতিনিধি ::
জীবন-মৃত্যুর সন্ধিক্ষণে রয়েছেন সাংবাদিকদের ট্রেড ইউনিয়ন আন্দোলনে যশোরের এক সময়ের দাপুটে নেতা মহিদুল ইসলাম মন্টু। প্রেসক্লাব যশোরের সদস্য ও সাংবাদিকদের বিভিন্ন সংগঠনে সভাপতি ও সাধারণ সম্পাদক হিসেবে দায়িত্ব পালনকারী এই নেতা বাকরুদ্ধ আর শারীরিক নানা জটিলতা নিয়ে শয্যাশায়ী। যশোরের চৌগাছা উপজেলার নারায়নপুর ইউনিয়নে বোনের বাড়িতে অবস্থান করছেন তিনি।
বৃহস্পতিবার প্রেসক্লাব যশোরের সভাপতি জাহিদ হাসান টুকুনের নেতৃত্বে একটি টিম সাংবাদিক নেতা মহিদুল ইসলাম মন্টুকে দেখতে হোগলাডাঙ্গা গ্রামে যায়। ওই প্রতিনিধি দলে আরও ছিলেন সহসভাপতি নূর ইসলাম, যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক সরোয়ার হোসেন, দপ্তর সম্পাদক তৌহিদ জামান, নির্বাহী সদস্য শহীদ জয় এবং সাজেদ রহমান বকুল।
গ্রামে যেয়ে দেখা যায়, বোনের বাড়ির ছোট্ট একটি বারান্দায় কঙ্গালসার মহিদুল ইসলাম মন্টু শুয়ে আছেন। তার দুই হাত উপরের দিকে কোকড়ানো অবস্থায় আকাশের দিকে তোলা। পা সামান্য ভাজ করা। একাধারে তিনি হাত আর পা একসাথে নাড়াচাড়া করছেন। যতক্ষণ এই টিম তার পাশে ছিল ততক্ষণ তাকে একইভাবে নাড়াচাড়া করতে দেখা যায়। আগতদের চিনতে পারছেন কিনা জানতে চাইলে শুধু ফ্যাল ফ্যাল করে তাকিয়ে থাকছিলেন। মাঝেমধ্যে মাথা ঘুরিয়ে দেখছিলেন।
বোন মাজেদা বেগম এবং বোনজামাই অবসরপ্রাপ্ত শিক্ষক মো. সফিউদ্দিন জানান, প্রায় ছয় মাস হলো মহিদুল ইসলাম মন্টুকে যশোর শহরের বাড়ি থেকে তারা নিয়ে আসেন। সে সময় মন্টু টেনে টেনে কথা বলতে পারলেও এখন তার কথা বন্ধ হয়ে গেছে। ২০ দিন মতো হলো তিনি এই পরিস্থিতিতে আছেন। এখন সারাক্ষণ শুধু হাত-পা নাড়ান।
তারা জানান, গ্রামে নিয়ে যাওয়ার পর চিকিৎসার জন্যে তাকে ঢাকায় নিয়ে যাওয়া হয়েছিল। কিন্তু, কোন উন্নতি না হয়ে দিন দিন অবনতি হয়েছে। বর্তমানে অবস্থা খুবই খারাপ। চিকিৎসক জানিয়েছেন তার মাথার শিরায় রক্ত জমে রয়েছে। একটি
কিডনি আগে থেকে ড্যামেজ হয়ে আছে। অন্য একটিতে পাথর জমেছে। গ্রামে নিয়ে যাওয়ার পর তিনি তিনবার স্ট্রোক করেন বলেও জানান স্বজনেরা। এরপরই তিনি অনেকটা প্যারালাইজড হয়ে গেছেন।
পরিবারের সদস্যরা মহিদুল ইসলাম মন্টুর জন্যে সবার কাছে দোয়া প্রার্থণা করেছেন। একইভাবে প্রেসক্লাব যশোর নেতৃবৃন্দও তার জন্যে সকলের কাছে দোয়া চেয়েছেন।
মহিদুল ইসলাম মন্টু প্রেসক্লাব যশোরের বিভিন্ন গুরুত্বপূর্ণ পদে বিভিন্ন সময় দায়িত্ব পালন করেছেন। ছিলেন অবিভক্ত যশোর সাংবাদিক ইউনিয়নের একাধিকবার নির্বাচিত সাধারণ সম্পাদক। সংগঠনের সর্বশেষ কমিটিতেও তিনি শহীদ সাংবাদিক শামছুর রহমান কেবলের সাথে যশোর সাংবাদিক ইউনিয়নকে নেতৃত্ব দিয়েছেন। এই সংগঠন বিভক্ত হওয়ার পর সাংবাদিক ইউনিয়ন যশোর গঠিত হলে তিনি ছিলেন এই সংগঠনের একাধিকবারের সাধারণ সম্পাদক ও সভাপতি।
এছাড়া তিনি বাংলাদেশ ফেডারেল সাংবাদিক ইউনিয়নেও গুরুত্বপূর্ণ পদে দায়িত্ব পালন করেছেন। বর্তমানে তিনি যশোর জেলা সাংবাদিক ইউনিয়নের উপদেষ্টা মন্ডলীর অন্যতম সদস্য।
যশোরের সাংবাদিকসহ সংবাদপত্রসেবীদের নানা আন্দোলন সংগ্রামে মহিদুল ইসলাম মন্টু বরাবরই ছিলেন উচ্চকণ্ঠ। সেই তিনিই আজ জীবন-মৃত্যুর সন্ধিক্ষণে মানবেতর জীবন যাপন করছেন।