গত ৩ সেপ্টেম্বর রাতে ঠিক রাত এগারোটায় হঠাৎ অসুস্থ্য হয়ে বাসার পাশেই জাতীয় হৃদরোগ ইনস্টিটিউট ও হাসপাতালে গেলাম। এটি ছিল জীবনে প্রথমবারের মতো কোনো সরকারি হাসপাতালে আমার চিকিৎসা নিতে যাওয়া। গিয়েই নার্সরা তরিঘরি করে আমার ইসিজি করা শুরু করবেন একগাদা মানুষের সামনে, আমি বাধা দেয়ায় শুনতে হলো তাদের ধমক।
আমি যথেষ্ট অসুস্থ্য তারপরও মহিলাকে জবাব দিলাম। একপর্যায়ে তিনি আমিকে বলে বসলেন, আমি রোগী না হলে এতক্ষনে তিনি আমার গায়ে হাত তুলতেন। এই অবস্থা দেখে, মুহুর্তেই ফিরে গেলাম সেই সব ঘটনায়, রোগী আর ডাক্তারের মধ্যে সংঘর্ষ নিয়ে যেসব ঘটনার কথা আমি শুনেছি। বুঝতে পারলাম, কত সহজেই এরা রোগীর গায়ে হাত তুলতে পারে এবং একজন রোগীর প্রতি কতটা খারাপ আচরণ করতে পারে।
আমি যদি ভুল ব্যাখ্যা না্ দেই, তাহলে যেকোনো রোগীই নাকি ঔষুধের গুনে অর্ধেক আর চিকিৎসকের ব্যবহারে অর্র্ধেক সুস্থ্য হয়ে ওঠে। কিন্তু আমি যদি গুরুতর কোনো হৃদরোগী হতাম, তাহলে আমি নিশ্চিত ওই নার্সের ব্যবহারে ওই মুহুর্তে হার্ট অ্যাটাক করে আমি মারা যেতাম।
যাই হোক, আমার শাশুড়ি আমাকে আস্তে করে ধরে নিয়ে ডাক্তারের কাছে নিয়ে গেলেন। আমার উঁচু বিছানায় উঠতে এবং নামতে কষ্ট হচ্ছিলো বলে, নার্স আমাকে বলছিল, আপনি তো হাটতে হাটতে হাসপাতালে ঢুকলেন, আর এইটুকুতেই আপনার এতো সময় লাগছে! আমি হতাশ হইলাম এই জমিদার নার্সের কথা শুনে, নার্স রোগীদের ধরে বিছানায় উঠাবে, খাওয়াবে, হাত ধরে নিয়ে হাঁটাবে এগুলো বোধ হয় এখন শুধুই নাটক আর সিনেমার দৃশ্য।
এই দৃশ্য বোধ হয় সরকারি হাসপাতালে বাস্তব নয়, তবে আমি জানি না এটিই সরকারি হাসপাতালগুলোর সাভাবিক দৃশ্য কি না! ডাক্তার ঔষধ দেয়ার পর, আমি কিছুটা সুস্থ্য বোধ করলাম, জরুরি বিভাগে ময়লা বিছানায় কিছুক্ষণ শুয়ে থাকতে হলো। এরপর আবার ডাক্তার আমার সাথে কথা বললেন, তখন আমি তাকে আমার অসুখের পাশাপাশি সেই নার্সের বিষয়টিও জানালাম।
চিকিৎসকের প্রতিক্রিয়ায় আমি আরও হতাশ হলাম, তিনি মোটামুটি ভয়ই পাচ্ছিলেন এই নার্স না জানি ঝগড়া শুরু করে দেয়, যাই হোক আমি তার নাম জানতে চাইলাম। সে চেষ্টাও ব্যর্থ হলো।
এই পুরো ঘটনার কোনো জায়গাতেই আমি নিজেকে সাংবাদিক হিসেবে পরিচয় দেই নি। তবে রোগী হিসেবে এই হাসপাতালে না আসলে, চিকিৎসার নামে রোগীদের সাথে এইসব জমিদার নার্সরা কত অমানবিক ব্যবহার করে তা বুঝতে পারতাম না।
বরঞ্চ, রোগী ডাক্তারকে মেরেছে তা নিয়ে আমি কখনও কখনও বিরক্তই হয়েছি। কিন্তু এমন ঘটনা কি প্রায়ই ঘটে, যখন রোগীর আত্মীয় স্বজন উত্তেজিত হয়ে ডাক্তার, নার্সদের গায়ে হাত তোলে? আমি নিশ্চিত, আমার বর ওই সময় ঢাকায় থাকলে, অথবা আমার বড় বোন আমার সাথে থাকলে ওই নার্স তার যথাযথ শিক্ষা পেত!
আফসোস! আমার শাশুড়ি খুবই নিরীহ মানুষ!
এত তিক্ত অভিজ্ঞতার মাঝেও, সুখকর বিষয় হলো, আমার কোনো হৃদরোগ ধরা পরে নি বলেই আমি হয়তো হার্ট অ্যাটাক করে মারা যাই নি। ডাক্তার বললেন, আমি টেনশন করি, তবে কি টেনশন করি আমার জানা নাই।
ওই মুহুর্তে হয়তো, এটাই ভাবছিলাম, পান থেকে চুন খসলেই আমরা বেসরকারি হাসপাতাল নিয়ে কত লেখালিখি করি।
অথচ, এইসব বেসরকারি হাসপাতাল না থাকলে আমরা কই যেতাম! সেই সাথে সেইসব ভাগ্য বিড়ম্বিত রোগীদের কথা ভেবে কষ্ট পাচ্ছিলাম, যাদের এইসব জমিদার নার্স, ডাক্তারের কাছে না গিয়ে উপায় নেই…..
লেখক: সাংবাদিক, ইন্ডিপেন্ডেন্ট টেলিভিশন।