স্টাফ রিপোর্টার :: ‘বিয়ে করতে চেয়েছি, সময় সুযোগ-পরিস্থিতি হয়নি। পৃথিবী ঘুরতে ঘুরতে গিয়ে বিয়ের দিকে মনোযোগী হতে পারিনি। জীবনের মানে বিয়ের মধ্যে নিহিত নয়- এটা আমি বিশ্বাস করি। তবে এটাও মনে রাখতে হবে, পৃথিবীর অনেক নারীই বিয়ে করেনি। মাদার তেরেসাও বিয়ে না করে মানবতার কল্যাণে জীবনের মানে খুঁজে পেয়েছেন।’
সম্প্রতি সুইডেন থেকে ইউনাইটেড নিউজকে এভাবেই মনের একান্ত কথাগুলো বলছিলেন- বাংলাদেশি পতাকাবাহী প্রথম বিশ্বজয়ী পরিভ্রাজক নাজমুন নাহার।
লাল-সবুজের পতাকা হতে পৃথিবীর পথে পথে ঘুরে বেড়ানো নাজমুন নাহার ইতোমধ্যে পৃথিবীর ১০৮টি দেশ ভ্রমণ শেষ করেছেন। এ সময় তিনি ইউনাইটেড নিউজকে আরো বলেন, ‘আমি মায়ের গর্ভে থাকতে আমার মা স্বপ্নে দেখতেন আমি উড়ছি। আমার জন্ম হয়েছে ভোরের আলোতে। উজ্জল তারকার দিক স্মরণ করে আমার নাম রাখা হয়- নাজমুন নাহার। এখন আমার মা স্বপ্ন দেখেন তার মেয়ে চাঁদেও যেতে পারেন।’
নাজমুন নাহারের জন্ম ১৯৭৯ সালের ১২ ডিসেম্বর লক্ষ্মীপুর সদর উপজেলার গঙ্গাপুরে। ব্যবসায়ী বাবা মোহাম্মদ আমিন ২০১০ সালে পৃথিবী ছেড়ে গেছেন। মা তাহেরা আমিন। তিন ভাই, পাঁচ বোনের মধ্যে নাজমুন নাহার সবার ছোট।
তিনি বলেন, ‘সন্তানের জন্য বাবা-মা’য়ের ইন্সপায়ারেশন খুবই জরুরী। ছোট বেলায় বাবা আমাকে খুব ঘুরাতেন। পঞ্চম শ্রেণীতে জেলা বৃত্তি পাওয়ার পরে- সারা দিন কোলে নিয়ে আমাকে ঘুরিয়েছেন। দু:খ লাগে বাবা আমার অর্জনগুলো দেখে যেতে পারেননি। মাকে সাথে নিয়ে পৃথিবীর ১৪টি দেশ ভ্রমণ করেছি। এটি আমার শ্রেষ্ঠ ভালো লাগা’
দালাল বাজার নবীন কিশোর উচ্চ বিদ্যালয় থেকে ১৯৯৪ সালে স্টার মার্কসহ এসএসসি এবং লক্ষ্মীপুর সরকারি কলেজ থেকে ১৯৯৬ সালে কৃতিত্বের সঙ্গে এইচএসসি পাস করেন তিনি। পরে রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয় থেকে রাষ্ট্রবিজ্ঞানে স্নাতকোত্তর ডিগ্রি অর্জনের পর কিছু দিন সাংবাদিকতা করেন।
নাজমুন নাহার বলেন, ‘আমি ছোট বেলায় সাইকেল চালাতাম। বাবা কখনো নিষেধ করতেন না। আমার আগ্রহকে বাবা কখনো বাধা দিতেন না। বাবা আমাকে আদর্শ শিক্ষা দিয়ে গেছেন। বাবা বলতো- তোমাকে লড়াকু হতে হবে। এই ধরনের কথাগুলো আমাকে উদ্বুদ্ধ করেছে। আমার বাবা আমার বন্ধু ছিলেন। আমারও তাই মনে হয়- প্রতিটি পরিবারের বাবাকে মেয়ে সন্তানের ভালো বন্ধু হতে হবে। এতে করে সন্তানের ভুল করার প্রবণতা কমে যাবে।’
২০০৬ সালে শিক্ষাবৃত্তি নিয়ে উচ্চতর পড়াশোনার জন্য নাজমুন নাহার সুইডেন যান। সেখানে লুন্ড বিশ্ববিদ্যালয় থেকে এশিয়ান স্টাডিজ বিষয়ে স্নাতকোত্তর ডিগ্রি অর্জন করেন। বর্তমানে সুইডেনে একটি বেসরকারি কোম্পানিতে খন্ডকালীন চাকুরি করছেন। আর চাকুরির জমানো অর্থ দিয়েই পৃথিবীর পথে পথে ঘুরে বেড়াচ্ছেন নাজমুন নাহার। ভ্রমণ কণ্যা হিসেবে পরিচিতি পেলেও বিদেশের মাটিতে পেয়েছেন ‘ফ্ল্যাগ গার্ল’ উপাধি। এখন তার স্বপ্ন জাতিসংঘের তালিকাভূক্ত ১৯৩ দেশ ঘুরে দেখা।
তিনি আরো বলেন, ‘মানুষের কাছে না গেলে, সাথে না মিশলে, তাদের সংস্কৃতি সম্পর্কে জানা যায় না, বোঝা যায় না। আমি শুধু পৃথিবী ঘুরছি তা নয়, আমি পৃথিবীর সবগুলো মানুষের মধ্যে একটি বার্তা ছড়িয়ে দিতে চাই, সবাইকে সবার ভালো চিন্তা করতে হবে। মানুষ ও বিশ্ব শান্তির জন্য চিন্তা করতে হবে’
উল্লেখ্য, ২০০০ সালে ভারতের ভূপালে ইন্টারন্যাশনাল অ্যাডভেঞ্চার কর্মসূচিতে অংশ নেওয়ার মধ্য দিয়ে পৃথিবী দেখার শুরু হয় নাজমুন নাহারের। ২০১৮ সালের ১ জুন তিনি শততম দেশ ভ্রমণের করেন আফ্রিকার জিম্বাবুয়ে পরিভ্রমণের মধ্য দিয়ে।