যমুনা ও ব্রহ্মপুত্র নদের ভাঙ্গন কবলিত দরিদ্র জেলা হিসেবে জামালপুরের পরিচিত দেশ বিদেশে। হযরত শাহ জামাল (র:) নামানুসারে এ জেলার নামকরণ হয়েছে। ৭টি উপজেলা, ৬টি পৌর সভা, ৮টি থানা, ৬৮টি ইউনিয়ন, ১৩৬২টি গ্রাম নিয়ে জামালপুর গঠিত। ক্যালেন্ডারের পাতা অনুযায়ী ২০১১সনে জামালপুরের সার্বিক আইন শৃঙ্খলা পরিস্থিতি পর্যালোচনা করলে দেখা যায় এখানে গত সনে কোন রাজনৈতিক হত্যাকান্ড ঘটেছি। তবে যে সব হত্যাকান্ডের ঘটনা ঘটেছে তা শুধু পারিবারিক ঝগড়া বিবাদ, টাকা পয়সা ও জমিজমা এবং নারী নির্যাতনকে কেন্দ্র করেই।
এক পরিসংখ্যানে জানা গেছে, ২০১১ সালে জামালপুর জেলায় নারী নির্যাতন, জমি সংক্রান্ত, পূর্ব শত্র“তা, ডাকাতিসহ অন্যান্য খুন ও আতœহত্যার ঘটনা ঘটেছে সর্বমোট ৪৬টি। এছাড়া ডাকাতি ৫টি, দস্যুতা ৭টি, নারী নির্যাতন (ধর্ষণ-১০৯, এসিড-১ ও অন্যান্য-৪০০) ৫১০টি, অপহরণ ১৩, সিধেল চুরি-৩৫ টি, পুলিশ লাঞ্ছিত ৪টি, চুরি (গবাদী পশু, গাড়ী, তার ও অন্যান্য) ৭৪টি, দ্রুত বিচার ১৩টি, উদ্ধার জনিত মামলাঃ- অস্ত্র আইন ৪টি, বিস্ফোরক আইনে ১, মাদকদ্রব্য আইনে ২৩৩, চোরা চালান ৬৫।
জামালপুর জেলায় ২০১১ সালে সব মিলিয়ে মামলা হয়েছে ২৪৩৮। গত বছর চাঞ্চলকর ঘটনা হচ্ছে জামালপুর-ময়মনসিংহ রুটে আন্তঃনগর অগ্নিবীণা ও কমিউটার ট্রেনে দুর্ধর্ষ গণ-ডাকাতি, স্কুল শিক্ষিকা নওশাদ ইয়াছমিন রিমি দুর্বৃত্তদের হাতে খুন ও শহরের চালাপাড়ায় একই পরিবারের তিনজনকে নৃশংসভাবে খুন।
৭ সেপ্টেম্বর জামালপুর-ময়মনসিংহ রুটে আন্তঃনগর অগ্নিবীণা ও কমিউটার ট্রেনে দুর্ধর্ষ গণ-ডাকাতি হয়েছে। ডাকাতরা বিশ্ববিদ্যালয় পড়–য়া দু’শিক্ষার্থীসহ চার জনকে হত্যা করে চলন্ত ট্রেন থেকে লাশ ফেলে দেয়।
২২ সেপ্টেম্বর সদর উপজেলার কেন্দুয়া ইউনিয়নের কুটামনি পশ্চিম পাড়া এলাকার শামসুল হকের কন্যা স্কুল শিক্ষিকা নওশাদ ইয়াছমিন রিমি দুর্বৃত্তদের হাতে খুন হয় এবং
১৯ নভেম্বর শহরের চালাপাড়ায় একই পরিবারের তিনজনকে নৃশংসভাবে খুন করা হয়েছে। সৎ মায়ের অত্যাচারে অতিষ্ঠ হয়ে নিপুন (২৫) তার তিন বন্ধু শাকিল, তাপস ও আল আমিনকে ১৫ হাজার টাকায় ভাড়া করে নিয়ে গিয়ে পরিকল্পিতভাবে পিতা ফেরদৌস আলম, সৎ মা বন্যা ওরফে রতœা ও দু’বছরের সৎ ভাই প্রণয়কে খুন করে।
এছাড়াও ২০ জানুয়ারী জেলার বকশিগঞ্জে একখন্ড জমিকে কেন্দ্র করে ছোট ভাই আক্কাছ আলী (৩২)’র হাতে বড় ভাই দেলোয়ার হোসেন (৩৫) খুন হয়েছে।
৩১ জানুয়ারী সদর উপজেলার রশিদপুর ইউনিয়নের তুলশিপুর গ্রামে এক সন্তানের জননী গৃহবধু হামেদা বেগমকে শ্বাসরোদ্ধ করে হত্যা করা হয়।
৬ ফেব্র“য়ারী জেলার ইসলামপুর উপজেলার নাপিতেরচর সরকার পাড়া গ্রামে চতুর্থ শ্রেণীর ছাত্রী রিপা আক্তার (১০)কে গলা কেটে হত্যা করেছে দুর্বৃত্তরা।
৭ ফেব্র“য়ারী জেলার মাদারগঞ্জ উপজেলার জোড়খালী ইউনিয়নের একটি পুকুর থেকে মানুষের খুলিসহ শরীরের বিভিন্ন অংশের হাড় গোড় উদ্ধার করে পুলিশ।
২৩ ফেব্র“য়ারী শহরের শাহপুর থেকে খোরশেদ আলম (৩৫) নামে এক অটোরিক্সা চালকের লাশ উদ্ধার করে পুলিশ। তার বাড়ি শহরের লাঙ্গলজোড়া গ্রামে।
২৪ ফেব্র“য়ারী জেলার মেলান্দহের ঠ্যাংগে হাফেজিয়া মাদ্রাসার রাশেদুল ইসলাম (১৩) রহস্যজনক মৃত্যু হয়েছে। বাড়ী থেকে আধা কিলো দূরে মুকুল নামে এক পল্লী চিকিৎসকের বাড়ির ঘরের খাটের নীচ থেকে তার লাশ উদ্ধার করে পুলিশ।
২৬ ফেব্র“য়ারী জেলার মাদারগঞ্জ উপজেলার পশ্চিম জোড়খালী গ্রামে আশামনি (১৮) নামে এক গৃহবধুকে পাষন্ড স্বামী নূর আলম যৌতুকের জন্য নির্যাতন করে মেরে ফেলেছে।
৫ মার্চ রসুনের ক্ষেত খাওয়ানোকে কেন্দ্র করে সদর উপজেলার কেন্দুয়া ইউনিয়নের চর মৌহাডাঙ্গায় এক ব্যক্তিকে পিটিয়ে হত্যা করা হয়েছে। মোস্তফা ভুইয়ার ছাগল প্রতিবেশী মোফাজ্জলের রসুনের ক্ষেত খাওয়া নিয়ে উভয়ের মধ্যে তর্ক বিতর্ক বাধে। একপর্যায়ে বেধরক পিটুনিতে ঘটনাস্থলেই মোফাজ্জাল মারা যায়।
৬ মার্চ জেলার মাদারগঞ্জ থানা পুলিশ উপজেলার সিধুলী ইউনিয়নের ডাকাতিয়া গ্রামের আজিজল (৪৫) নামের এক কৃষকের হাত পা বাধা লাশ উদ্ধার করেছে।
১১ মার্চ জেলার সরিষাবাড়ি থানা পুলিশ উপজেলার ভাটারা গ্রামের ঝিনাই নদীর চরে বালুর নীচ থেকে অজ্ঞাত এক যুবকের লাশ উদ্ধার করে।
১৪ মার্চ জেলার বকশীগঞ্জ উপজেলার জাগির পাড়া গ্রামে পুলিশ গম ক্ষেত থেকে অজ্ঞাত এক যুবকের গলিত লাশ উদ্ধার করে।
২৯ মার্চ জমি সংক্রান্ত বিরোধে জেলার ইসলামপুর উপজেলার গাইবান্ধা ইউনিয়নের কড়ইতলা গ্রামে শামছুল সর্দার তার সহোদর বড় ভাই মজিবর সর্দারকে খুন করে।
৪ এপ্রিল জেলার মেলান্দহ উপজেলার ঘোষের পাড়া ইউনিয়নে এক সপ্তাহ নিখোজে পর সাত বছরের শিশু হাসির গলিত লাশ পুলিশ ঝিনাই নদী থেকে উদ্ধার করে।
১৬ মে সদর উপজেলার বাঁশচড়া ইউনিয়নের বৈঠামারী আটাপাড়া গ্রামের গৃহবধু জাহানারা (৪০) গলায় দড়ি দিয়ে আত্মহত্যা করে।
২০ মে জেলার বকশীগঞ্জ উপজেলার নতুন টুপকারচর গ্রামে একটি মোবাইলের জন্য স্ত্রীর সাথে রাগ করে স্বামী মোস্তাফা(৪০) পাঁচ মাস বয়সের নিজ সন্তানকে খুন করে। একই দিন সরিষাবাড়ি উপজেলার আওনা ইউনিয়নের মেন্দারবের গ্রামের মৃত আব্দুল হামিদের পুত্র শ্রমিক ইউসুফ আলী (১৭)কে পোগলদীঘা ইউনিয়নের পাখিপারা গ্রামে শ্বাসরোধ করে খুন করা হয়েছে।
২০ জুন ইসলামপুর উপজেলার ডিগ্রীরচর খলিফাপাড়া গ্রামে মোজাফ্ফর ওরফে বুচা (৬০) কে ডেকে নিয়ে শহিদুর রহমান খুন করে। ২৯ জুলাই জেলার মাদারগঞ্জ উপজেলার চরপাকেরদহ ইউনিয়নের ঝাড়কাটা গ্রামে একটি স্যালো মেশিন ঘরে ঠান্ডু মিয়া (২৪) নামে এক কৃষি শ্রমিককে জবাই করে হত্যা করা হয়েছে।
৩০ জুলাই সদর উপজেলার ঘোড়াধাপ ইউনিয়নের ঝোকা গ্রামের মৃত হাসমত আলীর কলেজ ছাত্র আসাদুজ্জামান (১৭) কীটনাশক পান করে আত্মহত্যা করে।
৬ আগস্ট জেলার মাদারগঞ্জ উপজেলার কড়ইচুড়া ইউনিয়নের বড় ভাংবাড়ি গ্রামের মতি (৬০) নামের এক দিন মজুরকে আব্দুল বারিক পুরুষলিঙ্গে লাথি মেরে হত্যা করে।
৯ আগস্ট সদর উপজেলার শরিফপুর ইউনিয়নের রনরামপুর গ্রামে স্ত্রীর সহায়তায় অবসরপ্রাপ্ত স্কুল শিক্ষক হযরত আলী (৬০)কে শ্বাসরোধ করে খুন করা হয়।
১৯ আগস্ট সদর উপজেলার সাউনিয়া বাঁশচড়া গ্রামে যৌতুকলোভী স্বামী ও পরিবারের লোকজন শারীরিক নির্যাতনের পর গৃহবধু নাছিমা আক্তার (২১) কে শ্বাসরোধ করে হত্যা করে।
২০ আগস্ট সদর উপজেলার দিগপাইত ইউনিয়নের ছোনটিয়া সাউনিয়া বাঁশচড়া গ্রামে গৃহবধু নাছিমা (২৫)কে শ্বশুড় বাড়ির লোকজন বিষ পান করিয়ে খুন করে।
২২ আগস্ট সদর উপজেলার ইটাইল গ্রামের দুদু (৩০) ভারুয়াখালি বাজার থেকে বিষ কিনে পথে মধ্যে খেয়ে আত্মহত্যা করে।
৩০ আগস্ট সদর উপজেলার দিগপাইত ইউনিয়নের পূর্বপাড় দিঘুলী হাজী বাড়ি গ্রামে আরিফ (২২) নেশা খাওয়ার টাকা না পেয়ে ফাসিতে ঝুলে আত্মহত্যা করে।
২৬ সেপ্টেম্বর দোকানে টাকা চুরির কথিত ঘটনাকে কেন্দ্র করে জেলার বকশিগঞ্জ উপজেলায় শাহীন নামে এক কিশোর শ্রমিককে দোকান মালিক মজিবর রহমান শাহীন পিটিয়ে হত্যা করে।
৫ অক্টোবর সদর উপজেলার নরুন্দি ইউনিয়নের হাজীপাড়া গ্রামের জসিম উদ্দিন ওরফে কতু (৪৫)কে তুচ্ছ ঘটনায় তার সহোদর ভাই জলিল খুন করে।
৮ অক্টোবর স্বামী পরিত্যক্তা কবিতা (১৯) জামালপুর স্টেশনে ট্রেনের নীচে ঝাপ দিয়ে আত্মহত্যা করে। ৯ অক্টোবর জেলার মাদারগঞ্জে কাতলামারী রাস্তা ডাইবেশন খাল থেকে অজ্ঞাত এক ব্যক্তির গলিত লাশ উদ্ধার করে পুলিশ।
১৪ অক্টোবর সদর উপজেলার নরুন্দি রেল স্টেশনে ২৫৪নং ডাউন ময়মনসিংহগামী ট্রেনের নিচে কাটা পড়ে ঘোড়াধাপ ইউনিয়নের হরিপুর গ্রামের মৃত বিল্লাল উদ্দিনের পুত্র নজরুল ইসলাম (৩৫)’র মৃত্যু হয়। ১৯ অক্টোবর সদর উপজেলার শাহবাজপুর ইউনিয়নের কৈাডোলা গ্রামে এক সন্তানের জননী রোজিনা (২৫) নামের এক গৃহবধুকে পিটিয়ে হত্যা করেছে পাষন্ড স্বামী ও তার পরিবারের লোকজন।
২ ডিসেম্বর জেলার বকশিগঞ্জ উপজেলার বাট্টাজোড় আকন্দপাড়া গ্রামে বিষাক্ত খাবার খেয়ে আছিয়া নামের এক গৃহবধুর মর্মান্তিক মৃত্যু হয়েছে। অভিযোগ রয়েছে শতীন খাবারে বিষ মিশিয়ে আছিয়াকে খুন করেছে।
১৫ ডিসেম্বর জেলার মেলান্দহ বাজারের ধ্র“ব জ্যোতি ঘোষ মুকুলের বাড়ির আঙ্গিনার একটি ঝোপের আড়াল থেকে এক যুবকের লাশ উদ্ধার করে পুলিশ। মৃত্যের নাম হামিদুল ইসলাম (২৫)। পিতা জহুরুল ইসলাম। বাড়ী মেলান্দহের আদিপৈত মোল্লাবাড়ি। ৩ ভাই, ১ বোনের মধ্যে সে বড়।
জামালপুর জেলার আইন শৃঙ্খলা পরিস্থিত সন্তোষজনক উল্লেখ করে পুলিশ সুপার আব্দুর রাজ্জাক জানান, গত বছর জেলায় কোনো রাজনৈতিক খুন হয়নি। যেসব খুন হয়েছে তা জমি সংক্রান্ত, নারী নির্যাতন ও শত্র“তাবশত।
ইউনাইটেড নিউজ ২৪ ডট কম/ছাইদুর রহমান/জামালপুর।