জামালপুরের প্রত্যন্ত অঞ্চলের গায়ের বধূদের নিপুন ও নিখুঁত হাতের ছোঁয়ায় তৈরি নকশি কাঁথা এখন সারা দেশের চাহিদা মিটিয়ে  আন্তর্জাতিক বাজারে প্রবেশ  করেছে। আর সম্ভাবনার নতুন দ্বার উম্মোচন করে বর্তমানে ক্ষুদ্র ও মাঝারি শিল্পে পরিণত হয়েছে নকশী কাঁথাশিল্প।

অপরূপ সৌন্দয্যের এই নকশী কাঁথা পার্শ্ববর্তী ভারত, নেপাল, শ্রীলঙ্কা ছাড়াও সু-দূর ইউরোপ-আমেরিকাসহ বিশ্বের উন্নত দেশগুলোতে ছড়িয়ে পড়ছে।  গ্রামবাংলার ঐতিহ্য এই নকশি কাঁথা তৈরীতে গাঁয়ের বধূরা এখন আর ঘরে বসে নেই। বর্তমানে তারা বাণিজ্যিকভাবে নকশিকাঁথা তৈরি করছেন।

জামালপুর জেলা সদরসহ বিভিন্ন উপজেলাগুলোতে এলাকার দরিদ্র, মধ্যবিত্ত এমনকি শিক্ষিত মহিলারাও পেশা হিসেবে বেছে নিয়েছে কারুশিল্পকে। আশির দশকে সীমিত আকারে কারুশিল্প জামালপুরে তার যাত্রা শুরু করে। বর্তমানে এর চাহিদা ব্যাপকহারে বৃদ্ধি পাওয়ায় নতুন নতুন শিল্প উদ্যোক্তার আবির্ভাব হয়েছে।

কারুশিল্পকে ঘিরে জামালপুর জেলায় সৃষ্টি হয়েছে ছোট-বড় প্রায় পাঁচ শতাধিক নারী উদ্যোক্তা, যাদের মাধ্যমে ঘরে বসে থাকা শত শত নারী  কর্মসংস্থানের সুবর্ণ সুযোগ পেয়েছে। এ কারু শিল্পকে ঘিরে এখন জেলার অলি-গলিতে দৃষ্টি নন্দন বিভিন্ন ব্যবসা প্রতিষ্ঠান গড়ে উঠেছে।

রাজধানী ঢাকাসহ দেশের বিভিন্ন স্থান থেকে আগত ব্যবসায়ীরা কারম্নশিল্পী ও উদ্যোক্তাদের কাছে নানা ডিজাইনের নকশি কাঁথা, বিছানার চাঁদর, সোফার কুশন, পাপোশ, ওয়ালম্যাট, ফতুয়া,নকসা করা রকমারী পাঞ্জাবী মহিলাদের হ্যান্ড ব্যাগসহ নানা পোষাক ক্রয় করে নিচেছন। বিভিন্ন ধর্মীয় উৎসবে এসকল কারুশিল্পের তৈরী পোষাকের চাহিদা ব্যাপকহারে রেড়ে যায়।

জামালপুরের কারুশিল্পের উন্নয়নে এবং নারী উদ্যোক্তাদের আর্থিক সচ্ছলতা জন্য বাংলাদেশ ব্যাংকের গভর্নর ডঃ আতিউর রহমানের নির্দেশে ন্যাশনাল ব্যাংক সমপ্রতি এসএমই ঋণ প্রদান কার্যক্রম শুরু করেছে। ইতোমধ্যে অনেক উদ্যোক্তা মোটা অঙ্কের ব্যাংক ঋণ নিয়ে তাদের ব্যবসার প্রসার ঘটিয়েছেন।

আমলাপাড়া, বসাকপাড়া, কলেজরোড, বকুলতলা, জিগাতলা, মুন্সিপাড়া, মিয়াপাড়া, দড়িপাড়া, বেলটিয়া, পাথালিয়া,পাঁচরাস্তা মোড়সহ শহরের বিভিন্ন স্থানে বর্তমানে হস্তশিল্পের আকর্ষনীয় শো-রুম গড়ে উঠেছে।

নারী উদ্যোক্তাদের ঋণ বিতরণ প্রসঙ্গে জামালপুর ন্যাশনাল ব্যাংকের ম্যানেজার জিএম মাহ্বুবুর রশীদ জানান, এ শিল্পটির প্রসারে আমরা ইতোমধ্যে ৪৫৩জন নারী উদ্যোক্তদের সাড়ে পাঁচ কোটি টাকা ঋণ সহায়তা প্রদান করেছি। তিনি আরো জানান, যোগ্য ব্যক্তিদের ঋণ দান অব্যাহত রয়েছে।

কয়েকজন নারী উদ্যোক্তা বলেন, কারু শিল্পের জন্য ঋণ প্রদান সুবিধা অব্যাহত থাকলে মোটা অঙ্কের পুঁজি, বিনিয়োগের মাধ্যমে দেশ-বিদেশে ব্যবসা পরিচালনা করে বৈদেশিক মুদ্রা অর্জন করা সম্ভব। বর্তমানে জামালপুরে ঘরে বসে ব্যবসা পরিচালনা করার সুযোগ সৃষ্টি হওয়ায় জেলার অনেক কর্মমূখী নারী তাদের ব্যবসার প্রসার ঘটিয়ে এখন নিজেরা স্বাবলম্বী হয়েছেন।

এ ছাড়া দীপ্ত  কুটির, শতদল, রংধনু, প্রত্যয়, প্রতীক, তিমু,পারুল,মা,সৈনিক,আজকের কারুকাজ, মমতাজ এবং সৃষ্টি হস্তশিল্পের নারী উদ্যোক্তারা ইতোমধ্যে ব্যংক হতে ঋণ সহায়তা নিয়ে তাদের ব্যবসার প্রসার ঘটাতে সক্ষম হয়েছেন।

এ ব্যাপারে শহরের জিগাতলা এলাকার সফল এক নারী উদ্যোক্তা ‘মালিহা’ হস্ত শিল্পের স্বত্ত্বাধিকারী ছাইদা বেগম শ্যামা বলেন, দীর্ঘ ১৫ বৎসর যাবৎ তিনি এ ব্যবসার সাথে জড়িত আছেন। প্রথম দিকে  ২০/৩০জন মহিলা কর্মী নিয়ে তিনি তার ব্যবসা শুরু করলেও বর্তমানে তার কর্মী সংখ্যা প্রায় ২’শতাধিক।

তিনি  জানান, তার তৈরী কারুশিল্প সামগ্রী এখন দেশের গন্ডি পেরিয়ে সুদূর সুইডেনের বাজারেও স্থান করে নিয়েছে। তিনি বলেন, সুইডেন নাগরিক ক্রিষ্টিনা আমার একজন বড় ক্রেতা, তার মাধ্যমেই আমি সেখানকার বাজার ধরতে সক্ষম হয়েছি।

ইউনাইটেড নিউজ ২৪ ডট কম/ছাইদুর রহমান/জামালপুর

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here