বাংলা প্রেস, নিউ ইয়র্ক থেকে :: বিশ্ব শরণার্থী দিবস উপলক্ষে বাংলাদেশে আশ্রয়গ্রহণকারী রোহিঙ্গা উদ্বাস্তুদের মর্মস্পর্শী ঘটনা নিয়ে পূর্ণদৈর্ঘ্য চলচ্চিত্র ‘জন্মভূমি’ প্রদর্শিত হয়েছে। জাতিসংঘে বাংলাদেশের স্থায়ী মিশনের উদ্যোগে এটি প্রদর্শিত হয়। স্থানীয় সময় সোমবার জাতিসংঘের অর্থনৈতিক ও সামাজিক পরিষদ কক্ষে বেঙ্গল মাল্টিমিডিয়া প্রযোজিত ও প্রসূন রহমান পরিচালিত এই চলচ্চিত্র প্রদর্শিত হয়েছে। এতে সহ-আয়োজক ছিল কেনিয়া ও জাতিসংঘের শরণার্থী বিষয়ক হাই-কমিশন (ইউএনএইচসিআর)। প্রবাসী বাংলাদেশি ছাড়াও কূটনীতিক ও জাতিসংঘের কর্মীরা এই প্রদর্শনীতে উপস্থিত ছিলেন।
প্রাণ বাঁচাতে মিয়ানমার থেকে পালিয়ে এসে কক্সবাজারের কুটপালং রোহিঙ্গা ক্যাম্পে আশ্রিত অন্ত:স্বত্তা রোহিঙ্গা নারী সোফিয়া’র নিজ জন্মভূমি মিয়ানমারের রাখাইন রাজ্যে ফিরে যাওয়ার আকুতি এবং আগত সন্তানতে জন্মভূমি ছাড়া অন্য কোথাও জন্ম না দেওয়ার তীব্র আকাঙ্খা ও দৃঢ়তা ফুটিয়ে তোলার পাশাপাশি চলচ্চিত্রটিতে তুলে ধরা হয়েছে বিশ্বের সবচেয়ে ভাগ্যবিড়ম্বিত এই জনগোষ্ঠীর অসহায়ত্বের কথা। প্রসুন রহমানের গল্প ও পরিচালনায় বেঙ্গল মাল্টিমিডিয়ার এই ডকু-ফিকশন চলচ্চিত্রটি প্রযোজনা করেন সৈয়দ আশিক রহমান।
চলচ্চিত্রটি প্রদর্শনের আগে রোহিঙ্গাসহ বিশ্বের জোরপূর্বক বাস্তুচ্যুত শরণার্থীদের বিষয়ে ও চলচ্চিত্রটির প্রেক্ষাপট নিয়ে এক সংক্ষিপ্ত আলোচনা অনুষ্ঠিত হয়। এতে স্বাগত বক্তব্য রাখেন জাতিসংঘে নিযুক্ত বাংলাদেশের স্থায়ী প্রতিনিধি রাষ্ট্রদূত মাসুদ বিন মোমেন। আলোচনা পর্বে অংশ নেন জাতিসংঘে নিযুক্ত সুইজারল্যান্ডের স্থায়ী প্রতিনিধি রাষ্ট্রদূত জার্গ লাউবার, কেনিয়ার উপ-স্থায়ী প্রতিনিধি রাষ্ট্রদূত কোকি মুলি গ্রিগনন, ইউএনএইচসিআর এর সিনিয়র পলিসি অ্যাডভাইজর অর্জুন জেইন, আরটিভি’র সিইও সৈয়দ আশিক রহমান, চলচ্চিত্রটির যুক্তরাষ্ট্রের পরিবেশক রাজ হামিদ এবং টিন বিউটি ইন্টারন্যাশনাল মিজ্ ভারত ২০০৯ ইন্দোনেশিয়ান-আমেরিকান কিশোরী সুজান কচ।
প্রদত্ত বক্তব্যে রাষ্ট্রদূত মাসুদ রোহিঙ্গা বিষয়ে বাস্তব দৃশ্যপট তুলে ধরেন। তাঁর বক্তব্যে উঠে আসে নারী শিশুসহ রোহিঙ্গাদের উপর সংঘটিত অবর্ণনীয় সহিংসতার কথা। তিনি বাস্তুচ্যুত রোহিঙ্গাদের মানবিক আশ্রয়দানের ক্ষেত্রে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার উদারতা ও মানবিকতার কথা তুলে ধরেন এবং তাদের নিজভূমিতে নিরাপত্তা ও মর্যাদার সাথে স্বেচ্ছায় প্রত্যাবাসনের ক্ষেত্রে বিশ্ব সম্প্রদায়কে এগিয়ে আসার জন্য প্রধানমন্ত্রীর আহŸানের পূনরুল্লেখ করেন। রাষ্ট্রদূত মাসুদ বলেন এই চলচ্চিত্রটি যেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার অনুভূতিকেই প্রতিফলিত করছে।
জাতিসংঘে নিযুক্ত সুইজারল্যান্ডের স্থায়ী প্রতিনিধি রাষ্ট্রদূত জার্গ লাউবার সুইজারল্যান্ডকে একটি অভিবাসন বান্ধব দেশ হিসেবে উল্লেখ করে নিয়মিত, নিয়মতান্ত্রিক ও নিরাপদ অভিবাসনের ক্ষেত্রে গৃহীত বৈশ্বিক অভিবাসন কম্প্যাক্ট এর বাস্তবায়ন ও এই কম্প্যাক্টে শরণার্থী অধিকারের আরও বিষয় অন্তর্ভুক্ত করার প্রয়োজনীয়তার কথা উল্লেখ করেন। রোহিঙ্গাদের ক্ষেত্রে তাঁর সরকার গৃহীত মানবিক সহযোগিতা পদক্ষেপের কথা তুলে ধরেন তিনি।
কেনিয়ার উপ-স্থায়ী প্রতিনিধি রাষ্ট্রদূত কোকি মুলি গ্রিগনন তাঁর বক্তব্যেও গ্লোবাল মাইগ্রেশন কম্প্যাক্ট এর কথা উল্লেখ করেন। ইউএনএইচসিআর এর সিনিয়র পলিসি অ্যাডভাইজর অর্জুন জেইন বিশ্ব শরণার্থী পরিস্থিতি এবং এক্ষেত্রে প্রতিষ্ঠানটির ভূমিকার কথা তুলে ধরেন।
মিজ্ টিন ইন্টারন্যাশনাল বিউটি ও মিজ্ ভারত নিউইয়র্ক ২০০৯ সুজান কচ রোহিঙ্গা সঙ্কটের আদ্যপান্ত তুলে ধরেন। এই কিশোরীর সাবলিল ও হৃদয়স্পর্শী বর্ণনা সকলেরই দৃষ্টি কাড়ে। সুজান তার বক্তব্যে রোহিঙ্গা সমস্যার সমাধান করতে আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়ের প্রতি জোর আহবান জানান। অবিলম্বে বাংলাদেশে অবস্থানরত সব রোহিঙ্গা উদ্বাস্তুর নিরাপদ স্বদেশ প্রত্যাবর্তন নিশ্চিত করার উদ্যোগ নিতে জাতিসংঘের প্রতি আহ্বান জানায় সে।
আরটিভির সিইও আশিক রহমান রোহিঙ্গা সঙ্কটে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার রাষ্ট্রনায়োকোচিত ভূমিকার পাশাপাশি এই ডকু-ফিকশন চলচ্চিত্রটি নির্মাণের প্রেক্ষাপট তুলে ধরেন।
সিনেমাটির মূল চরিত্র সোফিয়া যেন বিশ্বের সকল নির্মম সহিংসতার শিকার এবং জোরপূর্বক বাস্তুচ্যুত মানুষের কন্ঠস্বরকেই প্রতিফলিত করছে মর্মে মন্তব্য করেন বক্তাগণ। জাতিসংঘের সদস্যদেশসমূহের স্থায়ী প্রতিনিধি ও কূটনীতিকগণ, নিউইয়র্কস্থ বিভিন্ন দেশের কনসাল জেনারেল, জাতিসংঘের কর্মকর্তা, নিউইয়র্কস্থ যুক্তরাষ্ট্রের মূল ধারার মানবাধিকার কর্মী, লেখক, চলচ্চিত্রকার, ডকুমেন্টারি ফিল্ম মেকার, টিভি উপস্থাপক, অভিনেত্রী, মডেল ও শিল্পীগণ অনুষ্ঠানটিতে অংশগ্রহণ করেন।
যুক্তরাষ্ট্র সফররত বাংলাদেশের সংসদ সদস্য ইসরাফিল আলম ও সাবেক সংসদ সদস্য মাহজাবিন খালেদ এসময় উপস্থিত ছিলেন। বাংলাদেশ স্থায়ী মিশনের কর্মকর্তা ও কর্মচারি, জাতিসংঘ সদরদপ্তরে কর্মরত বাংলাদেশের সামরিক ও বেসামরিক কর্মকর্তা এবং নিউইয়র্কস্থ বাংলাদেশ কনস্যুলেট জেনারেল এর কনসাল জেনারেল মিজ্ সাদিয়া ফয়জুন্নেছাসহ সহ কনস্যুলেটের অন্যান্য কর্মকর্তাগণ অনুষ্ঠানটিতে অংশগ্রহণ করেন।
এছাড়া বিপুল সংখ্যক নিউইয়র্ক প্রবাসী বাংলাদেশী নাগরিক বিশেষ করে প্রবাসী মুক্তিযোদ্ধা, যুক্তরাষ্ট্র আওয়ামী লীগের নেতৃবৃন্দ ও সুশীল সমাজের প্রতিনিধিগণও অনুষ্ঠানটিতে যোগ দেন।