‘রিয়েল লাইফ হিরো’ আঁখি

সোহানুর রহমান :: বিশ্ব মানবিক দিবস উপলক্ষে খুলনার রূপসা চরের যুবতী আঁখি সহ বাংলাদেশের আরও তিন যুবককে জাতিসংঘ ‘রিয়েল লাইফ হিরো’ হিসাবে স্বীকৃতি দিয়েছে। বাংলাদেশের অন্য তিন যুবক হলেন, প্রাক্তন ডাকসু সদস্য তানবীর হাসান শৈকত, ব্র্যাকের প্রকৌশলী রিজভী হাসান এবং অনুবাদক সিফাত নূর।

রূপসা চড়ের বস্তিতে বসবাসরত মাসুদ মোল্লার দ্বিতীয় কন্যা আঁখি (১৭) জানায় “যখন করোনা ভাইরাস শুরু হয়েছিল, বাজারে মাস্ক পাওয়া যাচ্ছিল না, কিছু কিছু দোকানে পাওয়া গেলেও সেগুলির দাম ছিল অনেক, আমাদের এলাকার দরিদ্র লোকেরা সেগুলি কিনতে পারতোনা। যখন জানলাম যে করোনা থেকে মুক্ত থাকতে অবশ্যই মাস্ক পরতে হবে তাই আমি নিজেই মাস্ক তৈরি করে কম দামে বিক্রি করার সিদ্ধান্ত নিয়েছিলাম, যাতে এলাকার দরিদ্র জনগণ সবাই মাস্ক পরতে পারে।”

সে আরও বলেছে, “যাদের একদম টাকা পয়সা নাই, তাদেরকে আমি বিনামূল্যে আমার তৈরিকৃত মাস্ক দিয়েছি।”

আখির বাবা মাসুদ মোল্লা (৪৭) চিংড়ি প্রক্রিয়াজাতকরণ কারখানায় কাজ করতেন, সেখানে কর্মরত অবস্থায় সে দুর্ঘটনার শিকার হন এবং শারীরিকভাবে অক্ষম হয়ে পরেন। আখির মা আনোয়ারা বেগমও (৪০) চিংড়ি প্রক্রিয়াজাতকরণ কারখানায় কাজ করতেন কিন্তু তার একার রোজগারে সংসার চালান অসম্ভব হয়ে উঠে। আঁখি তখন মাত্র পঞ্চম শ্রেণী পাশ করেছে, সে মাকে সাহায্য করার জন্য তার বড় বোনের সঙ্গে একটা চিংড়ি প্রক্রিয়াজাতকরণ কারখানায় কাজে যোগ দেয় ফলে তার স্কুলে যাওয়া বন্ধ হয়ে যায়। দুবছর আগে ওয়ার্ল্ড ভিশন পরিচালিত জীবনের জন্য প্রকল্পের কর্মী আবেদা সুলতানা আঁখিকে চিংড়ি প্রক্রিয়াজাতকরণ কারখানায় কাজ করতে দেখেন এবং সেখান থেকে উদ্ধার করে স্কুলে ভর্তি করার উদ্যোগ নেন। কিন্তু আখির বয়স বেশী হয়ে যাওয়ায় কোন স্কুলে তাকে ভর্তি করানো যায়নি। অবশেষে আখির আগ্রহ দেখে ওয়ার্ল্ড ভিশন পরিচালিত জীবনের জন্য প্রকল্পের মাধ্যমে তাকে সেলাই প্রশিক্ষণ দেওয়ার ব্যবস্থা করেন। প্রশিক্ষণ শেষে আঁখি যাতে তার নিজ ব্যবসা শুরু করতে পারে তার জন্য ঐ প্রকল্প হতে তাকে একটি সেলাই মেশিন কিছু থান কাপড় দেওয়া হয়। শুরু হয় আখির পোশাক তৈরির ব্যবসা, ঘরে বসেই এলাকার লোকজনের পোশাক সেলাই করে মাসে গড়ে ৩০০০ টাকা রোজগার করত। আখির এই রোজগারে তাদের সংসার সুখের মুখ দেখতে শুরু করে।

আঁখি জানায় “কিন্তু করোনা ভাইরাস যখন আমাদের দেশে ছড়িয়ে পড়তে শুরু করে, তখন সব কিছুই স্তব্ধ হয়ে যায়। চিংড়ি প্রক্রিয়াজাতকরণ কারখানাও বন্ধ হয়ে যায় তাই আমার মা ও বোনের রোজগারও বন্ধ হয়ে যায়, আমিও আমার ছোট দোকানটি বন্ধ করে দিতে বাদ্য হই। ঘরে বসেই আমি আমার সেলাইয়ের কাজগুলি চালিয়ে নিয়ে যাচ্ছি কিন্তু ক্রেতা কমে যাওয়ায় আমার আয় কমেছে। এক সময় করোনা ভাইরাস মোকাবেলায় এলাকার গরীব জনগণকে সাহায্য করার জন্য পোশাক সেলায়ের পাশাপাশি কাপড় দিয়ে মাস্ক তৈরি করা শুরু করি।”

গত ১৯ আগস্ট ২০২০ জাতি সংঘ বিশ্ব মানবিক দিবস উপলক্ষে বাংলাদেশের অন্য তিনজনের সাথে আঁখিকে রিয়েল লাইফ হিরো হিসাবে স্বীকৃতি দেয়। তার এই সাফল্যকে বাংলাদেশের বিভিন্ন গণমাধ্যম গুরুত্বের সঙ্গে প্রচার করেছে, বিবিসি বাংলা গত ২০ আগস্ট আখির একটি সাক্ষাৎকার প্রবাহ অনুষ্ঠানে প্রচার করেছে। বিবিসি বাংলা বলেছে জাতিসংঘ মনে করে করোনা ভাইরাস মোকাবেলায় আঁখিদের মত এই রিয়েল লাইফ হিরোদের উদ্যোগ অনাদেরকেও উৎসাহ যোগাবে।

Print Friendly, PDF & Email

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here