জাহিদ আবেদীন বাবু, কেশবপুর (যশোর) থেকে ::
যশোরের কেশবপুরে তীব্র শীতের মধ্যেও পুরোদমে চলছে বোরো আবাদ। বন্যা ও দীর্ঘ স্থায়ী জলাবদ্ধতার ক্ষতি পুষিয়ে নিতেই পুরুষের পাশাপাশি নারীরাও বোরো আবাদে ব্যস্ত সময় পার করছেন। জলাবদ্ধতার কারণে ২ হাজার হেক্টর জমিতে বোরো আবাদ অনিশ্চিত হয়ে পড়েছে। সেচ পাম্পের সাহায্যে জলাবদ্ধ বিল গুলোর পানি নিষ্কাশন করে বোরো চাষের উপযোগী করার চেষ্টা চলছে। এ চেষ্টা সফল হলে, বোরো আবাদের লক্ষ্যমাত্রা অর্জিত হবে বলে কৃষি অফিস আশা করছে।
জানা গেছে, গত বর্ষা মৌসুমে অতি বৃষ্টিতে কেশবপুর উপজেলার পৌর শহরসহ ১০৪ টি গ্রাম প্লাবিত হয়। এ বৃষ্টির পানি পলিতে ভরাট হয়ে যাওয়া বুড়িভদ্রা, আপার ভদ্রা, হরিহর, শ্রীনদী দিয়ে নিষ্কাশিত না হওয়ায় সৃষ্টি হয় জলাবদ্ধতা। এ জলাবদ্ধতা দীর্ঘ স্থায়ীরুপ নেয়ায় গ্রীষ্মকালীন ধান, সবজি সহ বিভিন্ন ফসল পানিতে পচে নষ্ট হয়ে যায়। ফলে কৃষকেরা ব্যাপক আর্থিক ক্ষতির শিকার হয়। এ ক্ষতি পুষিয়ে নিতে কৃষকেরা বোরো ধান চাষ করছে। জলাবদ্ধ বিলের পানি সেচ পাম্পের সাহায্যে নিষ্কাশন করে বোরো আবাদের উপযোগী করতে চেষ্টা করছে কৃষকরা।
উপজেলা কৃষি অফিস সূত্রে জানা গেছে, চলতি বছর কেশবপুর উপজেলায় চলতি মৌসুমে ১৪ হাজার ৪২৫ হেক্টর জমিতে ইরি বোরো আবাদের লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করা হয়েছে। এর জন্য কৃষকরা ৭২০ হেক্টর জমিতে বোরো বীজতলা তৈরি করেছে। বীজতলায় চারা রোপণের উপযুক্ত হওয়ায় কৃষকেরা পুরোপুরি ইরি বোরো রোপণ নিয়ে ব্যস্ত হয়ে পড়েছেন । ইতোমধ্যে ৩ হাজার কৃষকদের মাঝে সরকারের দেয়া বিনামূল্যে বীজ ও সার, কৃষি অফিস থেকে বিতরণ করা হয়েছে।
মঙ্গলবার (৭ জানুয়ারি) উপজেলার বিভিন্ন এলাকায় ঘুরে দেখা গেছে, কৃষকরা কেউ বোরো আবাদের জন্য জমি তৈরি করছে, কেউ বা বোরোর চারা রোপণ করছে। কেউ আবার ইঞ্জিন চালিত পাওয়ার টিলার ও ট্রাক্টর দিয়ে জমি চাষ করছে।
উপজেলার জাহানপুর গ্রামের কৃষক খলিলুর রহমান বলেন, আমাদের এলাকায় ইরি বোরো ধান চাষ ছাড়া তেমন ফসল হয়না। এজন্য কৃষকরা তীব্র শীত উপেক্ষা করে বোরোধান আবাদে ব্যস্ত সময় পার করছে।
বাঁশবাড়িয়া গ্রামের কৃষক আলাউদ্দিন বলেন, পদ্ম বিলে ৬ বিঘা জমিতে ইরি বোরো ধান আবাদ করার সিদ্ধান্ত নেয়া হয়েছে। এর মধ্যে ৩ বিঘা জমিতে চারা রোপণ করা হয়ে গেছে।
চালিতাবাড়িয়া গ্রামের কৃষক আব্দুর রাজ্জাক বলেন, সময়ের সাথে আধুনিকতার ছোঁয়া এখন গ্রামাঞ্চলে পৌঁছে গেছে। এখন ফসল ফলানোর ক্ষেত্রে অন্যান্য প্রযুক্তির পাশাপাশি জমি তৈরিতে ট্রাক্টর, পাওয়ার টিলার গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করছে। চলতি বোরো মৌসুমে ট্রাক্টর বা পাওয়ার টিলার দিয়ে চাষ করা ৭ বিঘা জমিতে ইরি ধান রোপণ করার কাজ শুরু করেছি। বর্তমানে উপজেলা জুড়ে কৃষকরা ইরি বোরো ধান আবাদে ব্যস্ত সময় পার করছে।
এ ব্যাপারে যশোর পানি উন্নয়ন বোর্ডের নির্বাহী প্রকৌশলী পলাশ কুমার ব্যানার্জি বলেন, জলাবদ্ধতা নিরসনে হরিহর নদীর ৩৫ কিলোমিটার ও আপার ভদ্রা নদীর ১৮ কিলোমিটার খনন করা হবে।
এ ব্যাপারে উপজেলা কৃষি কর্মকর্তার দায়িত্বে থাকা অতিরিক্ত কৃষি কর্মকর্তা জাহাঙ্গীর হোসেন বলেন, এ বছর কেশবপুর উপজেলায় বোরোধান আবাদের জন্য ৭২০ হেক্টর জমিতে বোরো বীজতলা তৈরির পর পুরোদমে ইরি বোরো ধানের চারা রোপণ নিয়ে ব্যস্ত সময় পার করছেন কৃষকরা। এবার এ উপজেলায় ১৪ হাজার ৪২৫ হেক্টর জমিতে ইরি বোরো আবাদের লক্ষ্য মাত্রা নির্ধারণ করা হয়েছে। আবহাওয়া অনুকূলে থাকলে এ লক্ষ্যমাত্রা অর্জিত হবে।