ছেলে হত্যার বিচার আমি আল্লাহর হাতে ছেড়ে দিয়েছি। আল্লাহই আমার ছেলের খুনীদের বিচার করবে। চরম হতাশা ও এক বুক বেদনা দিনে কথা গুলো ব্যক্ত করলেন, সোনামনি আব্দুল্যাহ’র বাবা মিরু শিকদার।
জামালপুর সদর উপজেলার নান্দিনা রেল ষ্টেশনের পিছনে বালিয়াপাড়া গ্রামের বাসিন্দা মিরু শিকদার। মিরম্ন শিকদারের দুই পক্ষের স্ত্রীর সন্তানদের মধ্যে আব্দুল্যাহ(৭) সবার ছোট্ট। সে নান্দিনা কলেজ রোডে অবস্তিত নূরাণি প্রি-ক্যাডেট স্কুলের প্রথম শ্রেণীর ছাত্র ছিল। মেধাবী ও চতুর প্রকৃতির ছেলে হিসেবে আব্দুল্যাহকে সবাই চিন্তা। স্কুলের প্রথম বেঞ্চে বসার জন্য প্রায়ই সকালের নাস্তা না খেয়েই আব্দুল্যাহ তার অন্যান্য সকল সহপাঠির আগে স্কুলে গিয়ে বইখাতা ভর্তি স্কুল ব্যাগ রেখে দিত। পরে ৯টায় ক্লাস শুরম্নর আগে তার মা টিফিন ক্যারিয়ারে খাবার নিয়ে ছেলেকে খাইয়ে আসত।
২০১০ সনের ৭ ফেব্রুয়ারি ঘটনা। প্রতিদিনের ন্যায় আব্দুল্যাহ তার স্কুল ব্যাগে বই খাতা নিয়ে তার নূরাণী প্রি-ক্যাডেট স্কুলে যায়। সকাল সাড়ে ৮টার দিকে আব্দুল্যাহ মা টিফিন ক্যারিয়ারে খাবার নিয়ে গিয়ে দেখে বেঞ্চে তার ব্যাগ থাকলেও সে নেই। স্কুলের ভিতর ও বাইরে অনেক খোঁজা খুঁজি করেও তাকে কোথাও পাওয়া যায়নি। অভিভাবকসহ স্কুলের শিক্ষক শিক্ষিকা ছাত্রছাত্রীরা তাকে তার খোঁজ না পাওয়ায় চরম হতাশা ও দিগ বিগ ছুটতে থাকে। এলাকায় মাইকিং করে আব্দুল্যাহ নিখোঁজ সংবাদ প্রচার করা হয়। কিন্ত কোথাও তাকে পাওয়া যায়নি।
পরদিন ৮ ফেবু্রয়ারি ভোরে নান্দিনা খড়খড়িয়া উত্তরপাড়ার ব্রহ্মপুত্র নদের পাড়ে একটি ঝোপ ঝাড়ের ভিতর একটি শিশুর ক্ষত বিক্ষত লাশ পড়ে থাকতে দেখে স্থানীয়রা আগের দিন মাইকিং করা নিখোঁজ ছেলের পরিবারের কাছে। পরিবারের সদস্যসহ হাজারো জনতা লাশ পড়ে থাকার সংবাদ পেয়ে দ্রুত ঘটনাস্থলে গিয়ে মিরু শিকদার তার ছেলের মৃতদেহ সনাক্ত করে।
এ ঘটনার খবর পেয়ে জামালপুর সদর থানা পুলিশ ঘটনাস্থল থেকে নিহত আব্দুল্যাহর লাশ উদ্ধার করে। লাশের পেছনের একটা অংশ রাতে বেলায় শিয়াল কুকুরে খেয়ে ফেলে। ময়না তদনত্ম শেষে লাশ দাফন করা হয়। স্থানীয়দের ও পুলিশের ধারণা আব্দুল্যাকে কেউ স্কুল থেকে কোন কিছুর প্রলোভন দেখিয়ে অপহরণ করে। এবং অজ্ঞাত স্থানে তাকে শ্বাসরোধে হত্যা করে লাশ ব্রহ্মপুত্রের পাড়ে গর্তে ফেলে দেয়।
এদিকে, আব্দুল্যাহ হত্যার বিচারের দাবিতে জেলা মানবাধিকার সংগঠনগুলোর সহাযোগিতায় নান্দিনা এলাকাবাসী, স্কুল, কলেজের হাজার হাজার শিক্ষার্থী মানববন্ধন কর্মসূচী পালন করে। মানববন্ধন র্কমসূচী পালনের পর সদর থানা পুলিশ গোপন সংবাদের ভিত্তিতে আব্দুল্যাহ’র বড়বোন জামাই (দুলাভাই) আবুল কালাম (৪০)সহ বেশ কয়েকজনকে জিজ্ঞাসাবাদের জন্য আটক করে। কিন্ত স্থানীয় প্রভাবশালীদের হস্তক্ষেপে লাখ লাখ টাকা খরচ করলে আবুল কালামরা পুলিশের হাত থেকে ওই যাত্রায় রড়্গা পায়। পরে ঘটনাটি ক্রমেই ধামাচাপা পড়তে শুরু করে।
আব্দুল্যাহ’র আপন চাচা নান্দিনা বাজারের কসমেটিক্স ব্যবসায়ী জয়নাল আবেদীন বাদী হয়ে জামালপুর সদর থানায় কারো নাম উলেস্নখ না করে একটি অভিযোগ দায়ের করেন। কিন্ত আব্দুল্যাহ হত্যার দুই বছর অতিবাহিত হওয়ার পরেও এ হত্যাকান্ডের রহস্য আজও পুলিশ উদঘাটন করতে পারেনি।
বর্তমানে মামলার অবস্থা সম্পর্কে প্রশ্ন করা আব্দুল্যাহ বাবা মিরু শিকদার ইউনাইটেড নিউজকে জানান, আমরা জানিনা মামলার কি অবস্থা। মামলার বাদী জয়নাল আবেদীন বলেন, মামলার কাগজপত্র আমার হাতে নেই। তাছাড়া মামলা নম্বর কত এবং তদনত্মকারী কর্মকর্তা কে তাও আমি জানিনা। তদবীর করা, খোঁজ খবর থেকেও বিরত রয়েছেন বাদী পড়্গ। এই প্রতিবেদকের সাথে আলাপ চারিতায় নিহত আব্দুল্যাহ দু:খের সাথে বলেন, আমরা এই মামলা নিয়ে বেশি বাড়াবাড়ী করলে হয়তো আমাদের নান্দিনা ছেড়ে নিজ বসত বিক্রমপুরে চলে যেতে হবে পারে। জয়নাল এর বেশি কিছু বলতে রাজি হয়নি।
মামলা সম্পর্কে ওয়াকিবহাল না থাকায় বিষয়ে মিরু শিকদার কান্না জড়িত কণ্ঠে বলেন, আমি আমার ছেলে হত্যার বিচার আল্লাহ’র উপর ছেড়ে দিয়েছি। সেই এর বিচার করবে। অপরদিকে, স্কুল ছাত্র আব্দুল্যাহ হত্যার বিচার ও এর রহস্য অনুদঘাটিত থাকায় এলাকাবাসীর মাঝে এনিয়ে বিরূপ প্রতিক্রিয়ার সৃষ্টি হয়েছে।
এদিকে, জামালপুর সদর থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মজিবুর রহমান মজুমদার
ইউনাইটেড নিউজকে জানিয়েছেন, বিষয়টি আমি খতিয়ে দেখব।
ইউনাইটেড নিউজ ২৪ ডট কম/ছাইদুর রহমান/জামালপুর