‘ছেলেধরা আতঙ্ক, এটি একটি গুজব’

জহিরুল ইসলাম শিবলু, লক্ষ্মীপুর প্রতিনিধি:: সম্প্রতি লক্ষ্মীপুর জেলা জুড়ে ছেলেধরা গুজব ছড়িয়ে আতঙ্ক সৃষ্টি করছেন একটি মহল। এতে স্কুল-কলেজের ছাত্র-ছাত্রী ও তাদের অভিভাবকদের মাঝে আতঙ্ক বিরাজ করছে। এনিয়ে জেলায় ছেলেধরা বিষয়ে যে আটটি ঘটনা ঘটেছে, প্রতিটি ঘটনায় যাদের আটক করা হয়েছে তারা প্রত্যেকে ঘটনার শিকার হয়ে আটক হয়েছেন। তারা কেউ ছেলেধরার কেউ নয়, তাদের মধ্যে অনেকেই মানসিক রোগী। একটি বিশেষ মহল সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম ফেইজবুকে গুজব ছড়িয়ে মানুষকে আতঙ্কিত করে সরকার ও আইনশৃংঙ্খলা বাহিনীকে বিভ্রান্ত করছেন। তাই প্রকৃত ঘটনা না যেনে আতঙ্কিত না হয়ে সকলে স্বাভাবিক জীবন-যাপন করতে জেলাবাসীর প্রতি অনুরোধ করেন পুলিশ সুপার।

মঙ্গলবার সকালে জেলায় কর্মরত সাংবাদিকদের সাথে জেলার সার্বিক আইনশৃংঙ্খলা বিষয়ে পুলিশ সুপার আ স ম মাহাতাব উদ্দিন এক মত বিনিময় সভায় এই অনুরোধ জানান।

এ সময় সাংবাদিকরা তাদের বক্তব্যে বলেন, গত কয়েক বছর থেকে এক একটি সময় এক একটি গুজব ছড়িয়ে আন্দোলনের নামে দেশের আইনশৃংঙ্খলা পরিস্থিতি অসি’তিশীল করতে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে কাজ করছে একটি মহল। তারই ধারাবাহিকতায় দেশের গর্ব পদ্মা সেতু করতে মানুষের হত্যা করে রক্তের প্রয়োজন এমন গুজব ছড়িয়ে লক্ষ্মীপুর জেলাব্যাপী আতঙ্ক ছড়াচ্ছে তারা। এতে অভিভাবকরা তাদের সন্তানদের কে নিয়ে আতঙ্কিত হয়ে পড়েছেন। আর এই আতঙ্কের সুযোগ নিয়ে একটি মহল অপরিচিত লোকজনদেরকে ছেলেধরা বলে গণ-পিটুনি দিয়ে পুলিশে সোপর্দ করছেন। এ সব ঘটনা উল্লেখ করে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে নানা রকম পোষ্ট দিচ্ছেন সরকার বিরোধী একটি মহল। তাই তাদেরকে চিহ্নিত করে আটকের মাধ্যমে অপ-প্রচার থেকে বিরত রাখা যায়, তাহলে গুজবের এই আতঙ্ক থেকে রক্ষা পাবে সাধারণ মানুষ।

পরে পুলিশ সুপার আ স ম মাহাতাব উদ্দিন তার বক্তব্যে বলেন, লক্ষ্মীপুরে এ পর্যন্ত ছেলেধরা বিষয়ে আতঙ্ক ছড়িয়ে আটটি ঘটনা ঘটানো হয়েছে। তারমধ্যে সোমবার রাতে ভবানীগঞ্জের এক মহিলা লক্ষ্মীপুরে একটি মেসে গত আট মাস যাবত বুয়ার কাজ করে আসছেন। রাতে তিনি মোবাইলে কথা বলার সময় অপরিচিত দেখে এলাকার লোকজন তাকে ছেলেধরা বলে আটক করে মারধর করে। পরে পুলিশ গিয়ে তার পরিচয় নিলে প্রকৃত ঘটনা উদঘাটন করা হয়। মিয়ার বেড়ি নামকস্থানে মানসিক প্রতিবন্ধী এক ব্যক্তিকে মারধর করা হয়। এছাড়াও প্রত্যেকটি ঘটনায় আতঙ্কিত হয়ে অপরিচিত লোক দেখে তাদেরকে মারধর করছেন স্থানীয়রা।

তিনি এসব ঘটনায় গুজব ছড়ানোকারীদের দায়ী করেছেন। তাই যে বা যারা আইনশৃংঙ্খলা বাহিনীকে বিব্রত করতে এই সব গুজব ছড়াচ্ছে, তাদেরকে চিহ্নিত করে আইনের আওতায় আনা হবে। ছেলেধরা বলে কোন ঘটনা লক্ষ্মীপুরে ঘটেনি, তাই সকলকে গুজবে কান না দিয়ে স্বাভাবিক জীবন-যাপনের অনুরোধ জানান। জেলার সার্বিক আইনশৃংঙ্খলা পরিস্থিতি স্বাভাবিক রয়েছে বলেও তিনি জানান।

এ সময় এনএসআই উপ-পরিচালক মানিক কুমার দে, অতিরিক্ত পুলিশ সুপার (সদর সার্কেল) মো. আনোয়ার হোসেন, জেলা পুলিশের বিশেষ শাখার কর্মকর্তা ইকবাল হোসেন, সদর থানার ভাপ্রাপ্ত কর্মকর্তা আজিজুর রহামান, ডিবি পুলিশের ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা মোক্তার হোসেন, লক্ষ্মীপুর প্রেসক্লাবের সভাপতি কামাল উদ্দিন হাওলাদর, সাধারণ সম্পাদক সাইদুল ইসলাম পাবেলসহ জেলায় কর্মরত সাংবাদিকবৃন্দ উপস্থিত ছিলেন।

Print Friendly, PDF & Email

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here