হোসেইন জামাল

হোসেইন জামালঃ দুই সতীনের সংসারে স্বামীকে রগচটা হলে চলে না। স্ত্রীদ্বয়ের মেজাজ বুঝে চলতে হয়। অন্যথায় সংসারে চিতার আগুন অনিবার্য। দক্ষিণ এশিয়ায় বাংলাদেশের অবস্থা এখন দুই সতীনের সংসারের মতো।

একদিকে বড়দা ভারত, অন্যদিকে উন্নয়নের অংশীদার চীন। এদেশের স্বাধীনতায় ভারতের অবদান আছে, সেটা বলার অপেক্ষা রাখে না। হয়তো সেই দাবি থেকেই প্রতিদিন সীমান্তে দুই একটা মানুষকে পাখির মতো গুলি করে মারে। এটা তাদের হক বা অধিকার বলা চলে।

আমরা ওতোটা অকৃতজ্ঞ নই। তাই পারতপক্ষে এর প্রতিবাদ করি না। তবে গত চার-পাঁচ বছর তাদের আচরণ ছিল মনিবতূল্য। মনে হচ্ছে তাদের দয়ায় আমরা বেঁচে আছি। আমাদেরও বহুবিধ সমস্যা আছে, তাই খুব বেশি আস্ফালন দেখানোর জো নেই।

তবে সাম্প্রতিক চীন-ভারত যুদ্ধ এই পরিস্থিতিকে কিছুটা সহজ করে দিয়েছে। আগে যেখানে ভারতের একচেটিয়া আধিপত্য ছিল, তাতে ভাগ বসাতে চাইছে চীন। এটা ভূরাজনৈতিক খেলা। এখানে হনহন করে কারো পক্ষ নেওয়া চলে না।

মনে রাখতে হবে দক্ষিণ এশিয়ায় আমরা মেজ ভাইয়ের চরিত্রে আছি। বড়দা ভারত, সেজদা শ্রীলঙ্কা, এরপর নেপাল, ভুটান, মালদ্বীপ পর্যায়ক্রমে। বড়দার আচরণ যখন অনাকাঙ্খিত, তখন প্রতিবেশী চীন তো এগিয়ে আসবেই। বর্তমানে সেটাই ঘটছে।

তাই সাবধানে পা ফেলতে হবে। বর্তমান যুদ্ধময় পরিস্থিতিতে নেপাল, ভুটান ও শ্রীলঙ্কার চরিত্র পরিস্কার। তারা চীনের পক্ষে। পুচকে মালদ্বীপ ভারতের পক্ষে নয়, আবার বিপক্ষেও নয়। তারা দক্ষিণ এশিয়ার যুদ্ধ যুদ্ধ খেলায় দুধভাত মানে উভয়পক্ষে। কিন্তু বাংলাদেশ একটা বড় ফ্যাক্টর।

তাই মোক্ষম ঢিলটা ছুড়েছে আনন্দবাজার পত্রিকা। বাংলাদেশকে পক্ষে টানতে ভিক্ষা দিচ্ছে চীন-এমন একটা নিরানন্দ সংবাদ ছেপেছে পত্রিকাটি। যদিও ভিক্ষাবৃত্তিতে দক্ষিণ এশিয়ায় ভারত প্রথম এবং বাংলাদেশ পঞ্চম। তবুও জেনে শুনেই ঢিলটি ছুড়েছে কলকাতার পত্রিকাটি।

এটা অনেকটা এক ঢিলে তিন পাখি মারার মতো অবস্থা। প্রথমত, করোনা পরিস্থিতিতে পত্রিকার কাটতি, দ্বিতীয়ত, নিজেদের দেশপ্রেমের প্রকাশ, তৃতীয়ত, বাংলাদেশ কোন পক্ষে, সেই অবস্থান নিশ্চিত করা। আর দুঃখের বিষয় হচ্ছে, এই ঢিলটা মারার আয়োজন করেছেন একজন বাংলাদেশি সাংবাদিক।

তবে এখন পর্যন্ত তিনি খুব একটা সফল হয়েছেন, তা বলা যায় না। এটা কূটনীতিতে সরকারের বিচক্ষণতার পরিচয়। সরকারের কোন আমলা বা মন্ত্রী কোন কথা বলেননি। বিষয়টা ভালো লেগেছে। কারণ আমরা এখন দুই সতীনের সংসারে আছি। বুঝে চলতে হবে। এরা কেউই আমাদের আপন নয়। শুধু ব্যবহার করে ছেড়ে দিবে।

এখন সরকারের উচিত একজন অভিজ্ঞ কূটনৈতিক নিয়োগ দেওয়া। যার কাজ হবে এই মূহুর্তে করণীয় নির্ধারণ ও কথা বলা। সবাই মিলে কথা বললে ভুল হওয়ার সম্ভাবনা থাকবে। স্বাধীনতার পর থেকে নিকট প্রতিবেশিদের কাছ থেকে যে ফায়দাগুলো পাইনি, এখন তা কায়দা করে তুলে নিতে হবে। কায়দা না জানলে ভবিষ্যতে আম ও চালা-দুটোই হারিয়ে আনন্দবাজারের কথিত সেই ভিক্ষার ঝুলি নিয়ে ভিক্ষায় নামতে হবে।

 

 

লেখকঃ ব্যাংকার এবং মুক্ত গণমাধ্যমকর্মী

Print Friendly, PDF & Email

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here