ডেস্ক রিপোর্ট::  চীনের আক্রমণ থেকে ফিলিপাইনকে রক্ষা করবে যুক্তরাষ্ট্র। মার্কিন প্রেসিডেন্ট জো বাইডেন এমন কথাই বলেছেন। চীনকে সতর্ক করে তিনি বলেছেন, বিতর্কিত দক্ষিণ চীন সাগরে কোনও হামলা হলে ফিলিপাইনকে রক্ষা করবে যুক্তরাষ্ট্র।

প্রতিদ্বন্দ্বিতাপূর্ণ এই জলসীমায় ফিলিপিনো এবং চীনা জাহাজের মধ্যে দুটি সংঘর্ষের কয়েকদিন পরে বাইডেনের এই মন্তব্য সামনে এলো। বৃহস্পতিবার (২৬ অক্টোবর) এক প্রতিবেদনে এই তথ্য জানিয়েছে ব্রিটিশ সংবাদমাধ্যম বিবিসি।

প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, অস্ট্রেলিয়ার প্রধানমন্ত্রী অ্যান্থনি আলবানিজের সঙ্গে যৌথ সংবাদ সম্মেলনে কথা বলার সময় বুধবার প্রেসিডেন্ট জো বাইডেন এসব মন্তব্য করেন। ফিলিপাইনের প্রতি নিজের ‘আয়রনক্ল্যাড’ বা লৌহবর্মের মতো দৃঢ় প্রতিরক্ষা প্রতিশ্রুতির কথাও এসময় পুনর্ব্যক্ত করেন বাইডেন।

বিবিসি বলছে, দক্ষিণ চীন সাগরে চীনের একক আধিপত্যের যে আকাঙ্ক্ষা রয়েছে ফিলিপাইন সেটিকে নিয়মিত চ্যালেঞ্জ করে চলেছে। দেশটি ওই সাগরে চীনের ভাসমান প্রতিবন্ধকতা কেটে দিয়েছে এবং সাগরে বেইজিংয়ের বিপজ্জনক কর্মকাণ্ড তুলে ধরার জন্য মিডিয়াকে আমন্ত্রণ জানিয়েছে।

আর এই পরিস্থিতিতেই চীনের হুমকি থেকে ফিলিপাইনকে রক্ষায় এই বক্তব্য দিলেন বাইডেন। মূলত সাম্প্রতিক মাসগুলোতে বেইজিং এবং ম্যানিলার মধ্যে উত্তেজনা বৃদ্ধি পাওয়ার পর বুধবার বাইডেনের দেওয়া বক্তব্য ছিল তার আগের যেকোনও বক্তব্যের চেয়ে বেশি শক্তিশালী।

এদিন প্রেসিডেন্ট বাইডেন বলেন, ‘আমি স্পষ্ট হতে চাই – আমি খুব স্পষ্ট ভাবে জানিয়ে দিতে চাই: ফিলিপাইনের প্রতি যুক্তরাষ্ট্রের যে প্রতিরক্ষা প্রতিশ্রুতি রয়েছে তা লৌহবর্মের মতো দৃঢ়। ফিলিপাইনের সঙ্গে যুক্তরাষ্ট্রের প্রতিরক্ষা চুক্তি আসলে লৌহবর্ম।’

বিবিসি বলছে, ১৯৫১ সালে স্বাক্ষরিত পারস্পরিক প্রতিরক্ষা চুক্তি অনুযায়ী যুক্তরাষ্ট্র এবং ফিলিপাইন যেকোনও সশস্ত্র আক্রমণের ক্ষেত্রে একে অপরকে রক্ষা করতে কাজ করবে।

বুধবার হোয়াইট হাউসে অস্ট্রেলিয়ার প্রধানমন্ত্রী অ্যান্থনি আলবানিজকে পাশে নিয়ে দেওয়া বক্তৃতায় প্রেসিডেন্ট বাইডেন বলেন, ‘ফিলিপিনো বিমান, জাহাজ বা সশস্ত্র বাহিনীর ওপর যেকোনও আক্রমণ ফিলিপাইনের সাথে আমাদের পারস্পরিক প্রতিরক্ষা চুক্তিকে সক্রিয় করবে।’

গত রোববার ফিলিপাইন জানায়, চীনের ‘বিপজ্জনক কর্মকাণ্ডের’ ফলে ফিলিপাইনের এক্সক্লুসিভ ইকোনমিক জোনের ভেতরে পড়ে এমন একটি অঞ্চলে চীনা উপকূলরক্ষী জাহাজ এবং ফিলিপিনো নৌকার মধ্যে সংঘর্ষের ঘটনা ঘটে। পৃথক ঘটনায় একটি চীনা মিলিশিয়া নৌকা ফিলিপাইনের উপকূলরক্ষী জাহাজকে ‘ধাক্কা দিয়েছে’ বলেও জানিয়েছে ম্যানিলা।

ফিলিপাইনের প্রতিরক্ষামন্ত্রী গিলবার্তো তেওডোরো জুনিয়র বলেছেন, চীনা নৌযানগুলো ‘ইচ্ছাকৃতভাবে’ ফিলিপাইনের জাহাজে আঘাত করেছে এবং এসব ঘটনা নিজের পক্ষে নিতে চীন ঘটনার বিবরণকে বিকৃত করছে।

বিবিসি বলছে, সংঘর্ষের বিষয়ে ফিলিপাইন যেসব দাবি করেছে বুধবার বাইডেনের কণ্ঠে কার্যত সেসব কথাই প্রতিধ্বনিত হয়। মার্কিন ডেমোত্র্যাটিক এই প্রেসিডেন্ট বলেন, সংঘর্ষের সময় চীনা জাহাজগুলো ‘বিপজ্জনক এবং বেআইনিভাবে কাজ করেছিল’।

উল্লেখ্য, দক্ষিণ-পূর্ব এশিয়ার দেশ ফিলিপাইন যুক্তরাষ্ট্রের গুরুত্বপূর্ণ কৌশলগত মিত্র হিসেবে পরিচিত। কারণ এই দেশটি দক্ষিণ চীন সাগর এবং তাইওয়ানের সীমানায় অবস্থিত। এছাড়া প্রেসিডেন্ট ফার্দিনান্দ মার্কোস জুনিয়র ২০২২ সালের জুনে ক্ষমতা গ্রহণ করেন এবং যুক্তরাষ্ট্রের সাথে ফিলিপাইনের জোট পুনরুজ্জীবিত করেন।

আর এরপর থেকেই দক্ষিণ চীন সাগরে চীনের নানা কর্মকাণ্ডকে চ্যালেঞ্জ করার জন্য আরও আক্রমণাত্মক হয়ে উঠেছে ফিলিপিনো কর্তৃপক্ষ।

মূলত মার্কোসের পররাষ্ট্রনীতি হচ্ছে তার পূর্বসূরি রদ্রিগো দুতার্তে নেওয়া চীনপন্থি অবস্থানের পুরোপুরি বিপরীত। তিনি দক্ষিণ চীন সাগরে বেইজিংয়ের আগ্রাসন মোকাবিলায় যথেষ্ট কাজ না করার জন্য সমালোচিত হয়েছিলেন।

 

 

 

Print Friendly, PDF & Email

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here