সময় থেমে থাকে না। সময়ের প্রয়োজনে সময়ের সাথে তাল মিলিয়ে চলতে হয় তাদেরকে। এতদিন প্রিন্ট ও ইলেকট্রনিক মিডিয়ায় মেয়েরা সাংবাদিকতা করেছে। ছুটে গিয়েছে পথে প্রান্তরে। এবার টেলিভিশন সাংবাদিকতার পাশাপাশি ছবি ধারণের ক্যামেরাটিও হাতে তুলে নিয়েছে তারা। উচ্চ শিক্ষিত হয়েও অন্যরকম কিছু করার ভাবনা থেকে তারা বেছে নিয়েছে এ পেশাটি। সময় টেলিভিশনে ক্যামেরা হাতে ব্যস্ত সময় কাটানো পাঁচ নারী সাংবাদিকের অদ্যপান্ত তুলে ধরেছেন- আ হ ম ফয়সল
নুসরাত নাহার নাজনীন
বাবা সরকারী চাকুরীজীবি। মা গৃহিনী। তিন ভাই বোনের মধ্যে নুসরাত সবার বড়। রাজধানীর স্টামফোর্ড ইউনিভার্সিটি থেকে ‘ফিল্ম এন্ড মিডিয়া’ বিষয়ের উপর ৪ বছরের অনার্স কোর্সের ফাইনাল ইয়ারের ছাত্রী। এ বিষয়ে লেখা পড়া করার পেছনে বাবার আগ্রহ কাজ করেছে। বিশ্ব বিদ্যালয়ে পড়া অবস’ায় ক্যামেরার কাজটি হাতে কলমে শিখতে ক্যাম্পাসে, ঢাকার বিভিন্ন স’ানে, প্রয়োজনে গ্রামেও যেতে হয়েছে। আমার কাছে ক্যামেরা একটি সাহিত্য মনে হয়। কলম দিয়ে যেমনি সাহিত্য রচনা করা যায়, তেমনি ক্যামেরা দিয়েও সাহিত্য তৈরী করা যায়। ইতোপূর্বে এটিএন নিউজে কাজ করেছি। এখন সময় টিভিতে চিত্র সাংবাদিকতার কাজ করছি। প্রায় প্রতিদিনই কাজের তাগিদে বিভিন্ন স’ানে ছুটে যেতে হয়। ভবিষ্যতে নিজস্ব কিছু করার ইচ্ছে আছে।
সুরাইয়া আক্তার
ইডেন কলেজে পলিটিক্যাল সাইন্সে ভর্তি হয়ে এক সপ্তাহ ক্লাস করেছি। ভালো লাগছিলনা। অন্যরকম কিছু পড়তে ইচ্ছে করছিল। সবসময় ক্যামেরা দেখলেই এটা সম্পর্কে জানতে হবে, বুঝতে হবে মনের মধ্যে ঘুরপাক করতো। সেই জানার আগ্রহথেকেই স্টামফোর্ড ইউনিভার্সিটিতে ফিল্ম এন্ড মিডিয়াতে ভর্তি হলাম। এখন ফাইনাল ইয়ারে। লেখাপড়া পাশাপাশি বেশ কিছুদিন এনটিভিতে প্রোগ্রামে ফ্রিল্যান্স কাজ করেছি। এখন তিন মাস ধরে সময় টেলিভিশনে কাজ করছি। এখানে কাজ করার পূর্বে ছবি ধারণ করলে নিজে দেখতাম আর এখন সবাই দেখে। কাজ দেখে সহকর্মী বা অন্যরা যখন প্রশংসা করে তখন নিজের কাছে খুব ভালো লাগে। টেলিভিশনে কাজ করার ফলে শেখার পরিধি বেড়েছে। প্রতিদিনই শিখছি। এখানে সহকর্মীরা সবসময় আমাদেরকে সাহস যোগায়। চ্যালেঞ্জিং হলেও চিত্র সাংবাদিকতার কাজ করে ভালোই লাগছে।
রোকসানা ইসলাম
চিত্র সাংবাদিকতার কাজটি করতে এসে পারিবারিক কোন বাঁধা পাইনি। এমনকি রাতের ডিউটিতেও পরিবার থেকে কোন বাঁধা আসেনি। আমরা বাসায় আসা যাওয়ার ক্ষেত্রে অফিসিয়াল ট্রান্সপোর্ট পেয়ে থাকি। যা আমাদের জন্য সহায়ক। মিডিয়া জগতে আসার পেছনে দৃড়িকের প্রিন্সিপাল শহিদুল আলমের প্রেরণা আমাকে আজ এখানে নিয়ে এসেছে। এ ছাড়াও আমার বড় বোনের ও বন্ধু ছালাউদ্দিন মাহমুদ মীম এর উৎসাহ আমাকে এ পেশায় আসতে সহায়তা যোগিয়েছে। পাঠশালার স্টুডেন্ট ছিলাম। ফ্রিল্যান্স স্টিল ফটোগ্রাফার হিসেবে পাক্ষিক অনন্যা পত্রিকায় এক বছর কাজ করেছি। সময় টিভিতে এসেই চিত্র সাংবাদিকতার কাজটি শিখেছি। আমার সকল সহকর্মীদের কাছে আমি কৃতজ্ঞ পাশাপাশি নিজের আত্মবিশ্বাস আমাকে এখানে নিয়ে এসেছে। গত তিন মাস ধরে আমি ইনহাউজ চিত্র সাংবাদিকতার কাজটি করছি।
নাজনীন মুন্নি
ক্যামেরা ছাড়া টিভি মিনিং লেস। টিভি সাংবাদিকতার বেসিক পার্ট হচ্ছে চিত্র সাংবাদিকতা। এটা ছাড়া চলবে না। আমি যেই পেশার জন্য ছবি তুলছি তা সাংবাদিকতার জন্য। এ জন্য আমি একজন চিত্র সাংবাদিক। মেয়েদের জন্য চিত্র সাংবাদিকতার দূয়ার খুলে দিয়েছে সময় টিভি। ১০ মাস ধরে সময় টিভিতে কাজ করছি। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় থেকে ফিলোসোফিতে মাস্টার্স শেষ করেছি। একটি ব্যাংকে চাকুরির সুযোগ করে দিয়েছিলেন বাবা-মা। ক্রিয়েটিভ কিছু করার আগ্রহ থেকে পরিবারের সাথে অনেকটা যুদ্ধ করেই চিত্র সাংবাদিকতা পেশায় যুক্ত হয়েছি। যদিও এখন পরিবারের কোন অভিযোগ নেই। একসময় মেয়েরা এনজিওতে চাকরি করবে এটাই মানতে পারেনি। ক্রমান্বয়ে সবই হচ্ছে। মানুষকে ছবি দেখিয়ে তার হৃদয়ে ঢুকা যায়, এই ভাবনাটি সব সময় মনের মধ্যে কাজ করতো।
অনামিকা পাল
স্টামফোর্ড ইউনিভার্সিটিতে ফিল্ম এন্ড মিডিয়া ডিপার্টমেন্টে লেখা পড়ার পাশাপাশি আড়ং এ দুই বছর কাজ করেছি। এখন ফাইনাল ইয়ারে। গত তিন মাস ধরে সময় টিভিতে চিত্র সাংবাদিকতার কাজটি করছি। অফিসের বাহিরে যখন কাজ করতে যাই তখন মনেই থাকে না আমি একজন মেয়ে। কাজটিকে তুলে নিয়ে আসার চিন্তাটাই তখন প্রাধান্য পায়। আমাদের সমাজে মিডিয়াতে মেয়েদের চাকুরিকে এখনও ছেলেরা নাক উচু করে দেখে। বাহিরে কাজ করার সময় অন্যান্য চ্যানেলের চিত্র সাংবাদিকরা আমাদের খোজ নেয়, কথা বলে। অনেকে মনে করে ক্যামেরাম্যান, আমাদের লেখা পড়া নেই। চিত্র ধারণটাই এটি টেলিভিশনের মূল কাজ। সে ক্ষেত্রে এতদিন টেলিভিশনে চিত্র সাংবাদিকতা পেশার স্বীকৃতি ছিল না। সময় টেলিভিশন এ পেশাটিকে ক্যামেরাম্যান হিসেবে না দেখে চিত্র সাংবাদিক স্বীকৃতি দিয়েছে। সহকর্মীদের অধিকাংশই স্টুডেন্ট, সমবয়সী তাই কাজ করেও আনন্দ পাচ্ছি।
মুহাম্মদ সাজ্জাদ হোসেন, প্রধান চিত্র সাংবাদিক, সময় টেলিভিশন
এ পেশায় অন্যান্য চ্যনেলগুলো নিয়োগ পরীক্ষায় মেয়েদেরকে রাখতে চায় না। সময় টেলিভিশন এ ক্ষেত্রে তাদেরকে প্রতিদ্বন্ধিতা করার সুযোগ করে দিয়েছে। টিকলে তারাও এ কাজটি করব। মূল কথা যোগ্যতায় তারা এ সুযোগ পেয়েছে। এ ছাড়া এতদিন এ পেশাটিকে সম্মানজনক ভাবে দেখা হতো না। একটি ক্যামেরা কোন ব্যাক্তিকে আইডিন্টিফাই করে না। কারন বিয়ে বাড়িতে যে ভিডিও করে সেও ক্যামেরাম্যান, আবার যে টেলিভিশন সংবাদের জন্য ভিডিও করছে তাকেও ক্যামেরাম্যান বলা হয়। বিশ্বে অনেক আগে থেকেই ‘চিত্র সাংবাদিক’ পেশাটি চলে আসছে। আমাদের দেশেও এটি হওয়া উচিত, যুক্তিসংঘত মনে হয়েছে। সময় টিভির শুরুর দিকেই বিষয়টি বলার পর ম্যানেজম্যান্ট এটিকে গুরুত্বের সাথে দেখেছে। সময় টেলিভিশনে নতুন-পুরাতনদেরকে দিয়েই চিত্র সাংবাদিকতার কাজটি করা হচ্ছে। সময় টেলিভিশন যে চিন্তা করে তা নতুনদেরকে দিয়েই সম্ভব। বিশেষত নতুনদেরকে গড়ে নেয়া যায়। সময় টিভিতে যে ৫ জন নারী চিত্র সাংবাদিক কাজ করছে তারা সকলেই ভালো করছে। আশা করছি ভবিষ্যতে এ পেশায় নারীদের সংখ্যা আরও বাড়বে। তবে অন্যান্য চ্যনেলের তুলনায় সময় টিভিতে নারী কর্মীর সংখ্যা বেশি।