ডেস্ক রিপোর্ট:: আমের রাজধানীখ্যাত চাঁপাইনবাবগঞ্জ থেকে এবার ১ মেট্রিক টন হাঁড়িভাঙ্গা আম গেল সুইডেনে। সোমবার (১২ জুন) বিকেলে আমগুলো নাচোল থেকে সড়কপথে ঢাকা বিমানবন্দরের উদ্দেশ্যে নেওয়া হয়। রপ্তানিকারক মো. রফিকুল ইসলাম বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন।
এর আগে চাঁপাইনবাবগঞ্জের নাচোল থেকে গত ২৫ মে প্রথম দফায় ৭ মেট্রিক টন ক্ষিরসাপাত আম লন্ডন ও সুইডেনে এবং মে মাসের প্রথম দিকে সুইডেনে একই এলাকা থেকে সবজি রপ্তানি হয়েছিল।
নাচোলের আমচাষি রফিুকুল ইসলাম বলেন, নাচোল গোলাবাড়ি ইউনিয়নের তেনবোনা এলাকায় মোট ৮৪০ বিঘা জমিতে আম চাষাবাদ করি। এখানে মূলত হাইব্রিড জাতের বারি ৪, ব্যানানা, আম্রপালি, কাটিমণ ও দেশি জাতের ক্ষিরসাপাত জাতের আম চাষ করেছি।
তিনি আরও বলেন, গত বছর সীমিত আকারে আম রপ্তানি হলেও এবছর জেলা কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের উপ-পরিচালক ড. পলাশ সরকারের সহযোগিতায় উত্তম কৃষি চর্চা পদ্ধতিতে আম চাষ করার মাধ্যমে রপ্তানির সুযোগ পেয়েছি। আশা করছি আমের চাহিদা থাকায় এ বছর তার বাগানের প্রায় সব আমই বিদেশে রপ্তানি করা সম্ভব হবে।
তিনি বলেন, দেশের বাজারে আমের দাম কম হলেও প্রতি মণ আম সুইডেনে ৩ হাজার ২০০ টাকা দরে বিক্রি করতে পারছি। মেসার্স এমবিবি এগ্রো লিমিটেডের স্বত্বাধিকারী মো. বদরুদ্দোজা নাচোলের বাসিন্দা হলেও সুইডেনে থাকার কারনে তার মাধ্যমে আমগুলো বিদেশে রপ্তানি করছি।
চাঁপাইনবাবগঞ্জের নাচোল উপজেলার মেসার্স এমবিবি এগ্রো নামক প্রতিষ্ঠানটির স্বত্বাধিকারী মো. বদরুদ্দোজা বলেন, আমি ২০১২ সাল থেকে আম ও বিভিন্ন ধরনের সবজি সুইডেনে রপ্তানি করি। এবারও করছি। এ বছর এখন পর্যন্ত ৪ মেট্রিক টন সুইডেনে ও ৩ মেট্রিক টন আম লন্ডনে পাঠিয়েছি। চাহিদা বাড়লে এলাকার অন্যান্য কৃষক ভাইদের কাছ থেকে আম কিনে সেগুলো বিদেশে রপ্তানি করে থাকি। সোমবার এরই অংশ হিসেবে হাঁড়িভাঙ্গা আম বিদেশে রপ্তানি করা হয়েছে।
তিনি আরও বলেন, মূলত আমি সুইডেনেই থাকি। সুইডেনের স্টকহোমের বিভিন্ন ব্যবসায়ী আমাকে আমের অর্ডার দিয়ে রাখেন। পরে আমি নাচোল থেকে আমগুলো প্যাকিং করে পাঠিয়ে দেয়। সুইডেন বিমানবন্দর থেকেই আমগুলো তাদের কাছে পৌঁছে যায়। তার দাবি চলতি বছরে ১০০ মেট্রিক টনের বেশি আম বিদেশে রপ্তানি করা সম্ভব হবে।
এদিকে চাঁপাইনবাবগঞ্জ কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের উপপরিচালক পলাশ সরকার বলেন, বদরুদ্দোজার মাধমে জেলা থেকে প্রথমবার এ মৌসুমে আম ও সবজি রপ্তানি হয়। সোমবার দ্বিতীয় দফায় ১ মেট্রিক টন আম গেল সুইডেনে। তার আগ্রহ এবং জেলা কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের প্রচেষ্টায় উত্তম কৃষি চর্চা পদ্ধতির কারণে এ জেলার আমের চাহিদা বিদেশে বাড়ছে। যা জেলার অর্থনীতির উন্নয়নে ভূমিকা রাখবে।
তিনি আরও বলেন, উত্তম কৃষি চর্চার মাধ্যমে ভালো মানের আম রপ্তানি করা সম্ভব। যার প্রমাণ বদরুদ্দোজা। তাই আমরা চাষিদের সবসময় বিভিন্ন ধরনের পরামর্শ দিয়ে যাচ্ছি আম রপ্তানির পরিমাণ বাড়ানোর জন্য। সেই সঙ্গে আমরা চেষ্টাও করছি। যেহেতু এ জেলার আম রপ্তানিযোগ্য ও সম্পূর্ণ কেমিক্যালমুক্ত, তাই আশা করছি বিদেশে আম রপ্তানির পরিমাণ চলতি বছর আরও বাড়বে।
উল্লেখ্য, জেলায় এবার ৩৭ হাজার ৮৫৫ হেক্টর জমিতে আমের চাষ হয়েছে। আম উৎপাদনের লক্ষ্যমাত্রা ধরা হয়েছে চার লাখ ২৫ হাজার মেট্রিক টন। গতবছর বিদেশে আম রপ্তানি হয়েছে ১৩২ দশমিক ৫৬৯ মেট্রিক টন।