ডেস্ক রিপোর্ট::  লক্ষ্মীপুরে ইট ও ত্রিপল দিয়ে চলাচলের পথে প্রতিবন্ধকতা সৃষ্টি করায় এক গরিব পরিবার অবরুদ্ধ হয়ে পড়েছে। সদর উপজেলার দত্তপাড়া ইউনিয়নের সৈয়দপুর গ্রামের পদ্মপুকুর পাড় বাড়িতে এ প্রতিবন্ধকতার ঘটনা ঘটেছে।

ওই বাড়ির লোকজনের অভিযোগ, প্রায় ৩৫ বছর ধরে তারা সাড়ে ৪ ফুটের একটি পথ ব্যবহার করে আসছেন। এক বছর আগে প্রবাস ফেরত হারুনুর রশিদ ও তার ভাই আমির হোসেন বাচ্চু ওই পথটি বন্ধ করে দেয়। তখন জানতে চাইলে তারা অন্যদেরকেও মামলা-হামলার হুমকি দেয়।

জানা গেছে, পদ্মপুকুরপাড় বাড়ির মৃত মোখলেছুর রহমানের ৬ ছেলে। পর্যায়ক্রমে সবাই পৃথক বসতঘর নির্মাণ করে। তারাসহ ওই বাড়ির অন্যান্য পরিবারগুলোর জন্য অনেক আগে থেকে একটি পথ ছিল। এটি যৌথ পথ হিসেবে সবাই ব্যবহার করতো। মোখলেছুর রহমানের দ্বিতীয় ছেলে নাছির উদ্দিন মারা যান। মৃত নাছিরের সংসারে স্ত্রী, দুই মেয়ে ও এক ছেলে রয়েছে। সম্প্রতি তার ছেলে রবিন বিদেশ যায়। রবিন ও তার বোন ফারজানা আক্তারের স্বামী যৌথভাবে বাড়িতে বসতের জন্য একটি পাকাভবন নির্মাণ করেন। ওই ভবনটি নির্মাণ নিয়ে রবিনের চাচা হারুন ও বাচ্চু বাধা দেয়। এরপর রবিন ভবনটি নির্মাণকাজ শেষ করা হয়। এরমধ্যেই জমি পাওনা দাবি করে হারুন ও বাচ্চু প্রতিহিংসাবসত তাদের সদর দরজার সামনের পথে ইট ও ত্রিপল দিয়ে প্রতিবন্ধকতা সৃষ্টি করে। এ নিয়ে রবিন আদালতে একটি মামলা দায়ের করেন। মামলাটি আদালত সদর উপজেলা সহকারী কমিশনারকে (ভূমি) তদন্ত করে প্রতিবেদন জমা দেওয়ার জন্য নির্দেশ দেয়। সহকারী কমিশনার ঘটনাটি তদন্তের জন্য দত্তপাড়া ইউনিয়ন সহকারী ভূমি কর্মকর্তাকে দায়িত্ব দেন। পরবর্তীতে ইউনিয়ন সহকারী ভূমি কর্মকর্তা তদন্ত শেষে প্রতিবেদন দাখিল করেন।

মৃত নাছির উদ্দিনের বড় ভাই গিয়াস উদ্দিন, শহীদ উদ্দিন ও ছোট ভাই সালাহউদ্দিন মানিক জানায়, নাছিরের মৃত্যুতে তার ছেলেমেয়ে এতিম হয়ে গেছে। এতে ভাতিজা-ভাতিজিদের দেখভাল করা তাদের দায়িত্ব। সাড়ে ৪ ফুটে পথটি প্রায় ৩০ বছর ধরে বাড়ির সবাই ব্যবহার করে আসছে। এর মধ্যে বাচ্চু ও হারুন ওই পথটিও বন্ধ করে দিয়ে অমানবিক কাজ করেছে। বাড়ি থেকে সবার বের হওয়ার পথ রয়েছে। এখন শুধু রবিনরাই পথ পাচ্ছে না। তারা অবরুদ্ধ হয়ে রয়েছে। পথটি নিয়ে আদালতে মিস মামলা দায়ের করলে সেটি স্থানীয় ইউপি ভূমি অফিস তদন্ত করে প্রতিবেদন দেয়। প্রতিবেদনের রেকর্ডিয় পথ নয় বলে উল্লেখ করা হয়। কিন্তু বাড়ির ভেতরে যৌথ চলাচলের পথ সাধারণত রেকর্ড হয় না।

ভুক্তভোগী রবিনের বোন ফারজানা আক্তার বলেন, আমরা অসহায় হয়ে পড়েছি। বাসা থেকে বের হওয়ার কোনো পথ নেই। পেছনের দরজা ব্যবহার করে অন্যের জমি দিয়ে কোনভাবে চলাচল করতে হচ্ছে। পথটি সবার জন্য উম্মুক্ত ছিল। হারুন ও বাচ্চু চাচা জোরপূর্বক পথটি বন্ধ করে দিয়েছে। পথটি উম্মুক্ত করে আমাদের চলাচল স্বাভাবিক করতে সংশ্লিষ্টদের হস্তক্ষেপ চাই।

অভিযুক্ত হারুনুর রশিদ বলেন, আমি পথ বন্ধ করিনি। জমিটি আমার। নাছিরের ছেলে রবিন পথের ওপরই ভবন নির্মাণ করেছে। পারিবারিকভাবে জমি বণ্টন করতে বললে রবিনসহ আমার অন্য ৩ ভাই রাজি হচ্ছে না। এজন্য রবিনদের ভবন নির্মাণে আমি বাধা দিই। তারা বাধা উপেক্ষা করে ভবন নির্মাণ করেছে।

ইউনিয়ন ভূমি সহকারী কর্মকর্তা (ভারপ্রাপ্ত) আনোয়ারা আক্তার বলেন, উপজেলা ভূমি অফিস থেকে আমার কাছে তথ্য চাওয়া হয়েছে- চলাচলের পথটি রেকর্ডভুক্ত কি না। আমি তদন্ত করে প্রতিবেদন দিয়েছি। সেখানে তালিকাভূক্ত পথ নেই। তবে বাড়ির মানুষ দীর্ঘদিন ধরে পথটি ব্যবহার করেছে। এটি সমঝোতার বিষয়। পারিবারিকভাবে বিষয়টি সমঝোতা করে পথটি উম্মুক্ত করা সম্ভব।

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here