গোলাম মোস্তাফিজার রহমান মিলন,  হিলি (দিনাজপুর) প্রতিনিধি ::
দিনাজপুর ঘোড়াঘাটে মাদক সহজলভ্য হয়ে উঠেছে।অলিতে গলিতে মাদকের ছড়াছড়ি। হাত বাড়ালেই পাওয়া যাচ্ছে ইয়াবা, হেরোইন, ফেনসিডিল, দেশি-বিদেশী মদ, গাঁজাসহ বিভিন্ন মাদকদ্রব্য। এলাকার বহু তরুণসহ বিভিন্ন শ্রেণী-পেশার মানুষ মাদকাসক্ত হয়ে পড়ছে। এখন মাদকাসক্তের সংখ্যা বেড়েছে কয়েক গুন। মাদকের টাকা জোগাড় করার জন্য অনেকে চুরি, ছিনতাইসহ নানা অপরাধে জড়িয়ে পড়ছে।
মাদক ব্যবসায়ীরা গ্রেপ্তার হলেও আইনের ফাঁকফোকর ও বিচারব্যবস্থার দীর্ঘসূত্রতার জন্য মাদক ব্যবসায়ীরা পার পেয়ে যাচ্ছে ।তারা জামিনে মুক্তি পেয়ে পুনরায় মাদক ব্যবসায় জড়িয়ে পড়ছে। দিনাজপুর আশেপাশের উপজেলাগুলোর মধ্যে ঘোড়াঘাট মাদকের দিক থেকে ভয়াবহতম। উপজেলার সবখানে হাত বাড়ালেই মাদক পাওয়া যাচ্ছে। এখানে মাদক এতোটাই সহজলভ্য যে, বয়সও এখানে বিবেচনা করা হয় না।
এখানে ফেনসিডিলের ব্যবহার এতোটাই যে, অনেকে কোমল পানীয়র মতো পান করছে। মধ্যম শ্রেনীর নেশাগ্রস্তরা গাঁজা বা ফেনসিডিল খেলেও এখানকার উচ্চবিত্তরা ঠিকই ইয়াবা ট্যাবলেট ম্যানেজ করছে। কেউ বেশি দামে আসল ইয়াবা সেবন করছে। আবার কম টাকারও ইয়াবা রয়েছে। অনেকের দাবি, কম টাকায় যেসব ইয়াবা পাওয়া যায়, সেগুলোর বেশিরভাগই নকল। এমনকি জন্মনিয়ন্ত্রণের ওষুধ মায়া বড়ি লাল রঙের হওয়ায় মায়া বড়িকেই ইয়াবা হিসেবে চালিয়ে দেওয়া হচ্ছে।
দিনাজপুর মাদকদ্রব্য নিয়ন্ত্রণ অধিদপ্তরের আঞ্চলিক কার্যালয় সূত্রে জানা যায়, গত ছয় মাসে ওই এলাকায় বড় ধরণের অভিযান চালানো হয়নি। মাঝে মধ্যে দু একটি অপারেশনে গেলেও দেখা যায়, ক্ষমতাসীন দলের বিভিন্ন পর্যায়ের নেতারা এসব করছেন। ফলে তাদের আর ধরা হয় না। এ ব্যাপারে মাদকদ্রব্য নিয়ন্ত্রণ অধিদপ্তরের নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক একজন পরিচালক বলেন, আগের বছরগুলোর তুলনায় চলতি বছরে মাদক নিয়ন্ত্রণে তেমন কোনো সফলতা নেই। তবে সামনে বড় ধরণের অভিযানের মাধ্যমে মাদক নিয়ন্ত্রণ করা হবে। কিছু পলিসি তৈরি করা হয়েছে সেগুলো প্রয়োগ করলেই আশানুরূপ সাফল্য আসবে বলে আশা প্রকাশ করেন ওই পরিচালক।
মাদকের বিস্তার বেড়েছে কয়েকগুন। মাদকসেবী ও মাদক বিক্রেতাদের দাপটে এখন উপজেলার বড় সমস্যা হয়ে দাঁড়িয়েছে। যার ভয়াল থাবা থেকে মুক্তি পাচ্ছে না কিশোর-যুবক থেকে শুরু করে বৃদ্ধরাও।
ভৌগোলিক অবস্থানের ভিত্তিতে ঘোড়াঘাট মাদক ব্যবসা ও প্রাপ্তির সহজলভ্যতা বেশি এবং বর্তমান অবস্থানের প্রেক্ষিতে তরুণ সমাজ এদিকে ঝুঁকছেও বেশি- ঠিক যেমনটি প্রত্যাশা মাদক ব্যবসায়ীদের। উপজেলার এমন কোনো পাড়া-মহল্লাা খুঁজে পাওয়া যাবে না যেখানে মাদকের থাবা নেই। মাদকসেবীরা বিভিন্ন মাদক দ্রব্যের মধ্যে যেমন- হিরোইন, কোকেন, আফিম, ক্যানাবিস গাজা, হাশিশ, ফেনসিডিল, বিভিন্ন রকমের ইনজেকশন, ইয়াবা ট্যাবলেট, দেশী-বিদেশী মদ সেবন করে।
শুধু এসবই নয় জুতায় লাগানোর আঠা বা ডান্ডি আঠা, চড়শ, কোডিন, মরফিন, বুপ্রেনর ফিন, প্যাথেডিন, মারিজুয়া এরোসোল্স, লাইটার ফ্লুইড, বার্ণিল রিমোভার, নেইল পালিশ রিমোভার, পেইন্ট থিনার, স্পট রিমোভার, ক্লিনিং সল্যুশনস্, গুল এমফিটামিন, ক্যাটামিন, পাইপারজিনস, মেফিড্রিন, স্পাইস, এক্সটাসির মতো নতুন নতুন মাদক সেবনে আসক্ত হয়ে পড়ছে যুবসমাজ।
পাশাপাশি বিভিন্ন ধরনের ঘুমের ঔষধ যেমন- এফ ফেটামিনস, বারবিচ্যুরেটস, সিডেটিড, হিপনোটিকস, ভ্যালিয়াম, ফ্রিশিয়াম, ইউনাকটিন, মেথাকোয়ালোন, জায়া জিপাম, নাইট্রাজিপাম ও ক্লোর ডায়াজিপোক্সাইড ইত্যাদি জাতীয় ঘুমের ঔষধ বাজারে পাওয়া যায়। যেগুলোর অধিক সেবনে মৃত্যু ঘটতে পারে। বিশেষ করে ফেনসিডিল ও ইয়াবা সহজলভ্য ও বহনযোগ্য বলে এর বিস্তার উপজেলাজুড়ে।
মুঠোফোনে যোগাযেগে ঘরে বসেও পাওয়া যায় যে কোন ধরনের মাদকদ্রব্য। স্থানীয় যুবক ও কলেজ পড়ুয়া ছেলে মেয়েরা মাদকের ছোবলে হয়ে যাচ্ছে আসক্ত।
খোঁজ নিয়ে দেখা গেছে, মাদকের ব্যবসা হচ্ছে তিনটি ধাপে। একটি দল সীমান্ত পাড়ি দিয়ে আসা মাদক নিয়ে আসে শহরে। তারা পৌঁছে দেয় শহরের এজেন্টদের কাছে।
এজেন্টরা বিভিন্ন কেন্দ্র থেকে খুচরা বিক্রেতাদের দিয়ে এ সব মাদক বিক্রি করায়। দরিদ্র পরিবারের নারী ও শিশুদের মাদক বিক্রি, পরিবহন ও খুচরা বিক্রির কাজে ব্যবহার করছে নেপথ্যের হোতারা। তারা থেকে যাচ্ছে আইনের নাগালের বাইরে।

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here