মহানন্দ অধিকারী মিন্টু, পাইকগাছা (খুলনা) প্রতিনিধি ::

খুলনার পাইকগাছায় বর্ষা মৌসুমের শুরুতেই ঐতিহ্যবাহী ঘোষখালী নদীতে ধরা পড়ছে বিভিন্ন প্রজাতির মাছ। প্রতিদিন সকাল থেকে সন্ধ্যা পর্যন্ত মাছ ধরছে এলাকার মানুষ। প্রতিদিন দূর-দূরন্ত থেকে অসংখ্য সৌখিন মাছ শিকারীও আসছেন ঘোষখালী নদীতে মাছ ধরতে। নারী পুরুষ সহ সব বয়সের মানুষের উপস্থিতিতে ঘোষখালী নদীতে চলছে যেন মাছ ধরার উৎসব।

উল্লেখ্য, উপজেলার সুন্দরবন সংলগ্ন গড়ইখালী ইউনিয়নের শান্তা বাজার সংলগ্ন শিবসা নদীর মোহনা থেকে শুরু হয়ে ইউনিয়নের মধ্য দিয়ে প্রবাহিত ঐতিহ্যবাহী ঘোষখালী নদী। নদীটি শুড়িখালী হয়ে কয়রার মসজিদকুঁড় মসজিদ পর্যন্ত পৌছেছে। নদীটি উপজেলার গড়ইখালী, চাঁদখালী, লস্কর এবং কয়রার আমাদী ও মহেশ্বরীপুর ইউনিয়নের কৃষি, মৎস্য ও হাজার হাজার মানুষের জীবন-জীবিকা নির্বাহ করে।

এক সময় নদীটি সরকারিভাবে ইজারা প্রদান করা হতো এবং এলাকার প্রভাবশালীরা নদীটি বাঁধ ও নেট-পাটা দিয়ে নিজেদের ইচ্ছে মত ব্যবহার করতো। এতে একদিকে যেমন এলাকার কৃষি ও কৃষক ক্ষতিগ্রস্থ হতো, অপরদিকে মানুষের জীবন জীবিকা ও গ্রামীণ অর্থনীতির উপর নেতীবাচক প্রভাব ফেলতো। বর্তমান ইউপি চেয়ারম্যান জিএম আব্দুস সালাম কেরু ঘোষখালী নদীতে মিষ্টিপানি সংরক্ষণ করে সেখানে বিভিন্ন দেশীয় প্রজাতির মাছের পোনা অবমুক্ত করার ব্যবস্থা করেন।

এর ফলে রবি মৌসুমে যেমন নদীর পানি দিয়ে নানা ধরণের রবি ফসল উৎপাদন করে একদিকে যেমন কৃষকরা অধিক লাভবান হচ্ছেন, অপরদিকে নদীর মাছ ধরে নিজের চাহিদা পূরণ করে অসংখ্য দরিদ্র পরিবার জীবন জীবিকা নির্বাহ করছে। বর্ষা মৌসুমের শুরতেই ঘোষখালী নদীতে প্রতিদিন চলছে মাছ ধরার উৎসব। প্রতিদিন শত শত মানুষ জাল ও বরশী সহ বিভিন্ন উপকরণ দিয়ে মাছ ধরছে। রুই, কাতলা, মৃগেল, মাগুর, কৈই, ভেটকি, গলদা ও মলা ঢেলা সহ নানা প্রজাতির মাছ পাওয়া যাচ্ছে নদীতে। অনেকেই ৮/১০ কেজি ওজনের রুই, কাতলা পাচ্ছে বলে জানিয়েছেন।

কুমখালী গ্রামের তপন মন্ডল জানান, আমার পরিবারের মাছের যে চাহিদা তার পুরোটাই ঘোষখালী নদী থেকে পূরণ হয়ে থাকে। শান্তা বাজার এলাকার সোহরাব শেখ জানান, ঘোষখালী নদীর মাছ বিক্রি করে আমার মতো অসংখ্য পরিবারের জীবন জীবিকা নির্বাহ হয়।

স্থানীয় ইউপি চেয়ারম্যান জিএম আব্দুস সালাম কেরু জানান, ঘোষখালী নদী একসময় এলাকার মানুষের কাছে অভিশাপ ছিল। মিষ্টি পানি সংরক্ষণ ও মাছের পোনা অবমুক্ত করায় নদীটি এখন এলাকার মানুষ আশীর্বাদ হিসেবে দেখছে। নদী দিয়ে দুই উপজেলার ৫ ইউনিয়নের পানি নিষ্কাসন হয়। পাশাপাশি মিষ্টি পানি সংরক্ষণ করায় রবি মৌসুমে এলাকার শত শত কৃষক হাজার হাজার জমিতে কোটি কোটি টাকার তরমুজ সহ অন্যান্য ফসল উৎপাদন থাকে। এছাড়া নদীর মাছ ধরে শত শত দরিদ্র পরিবার জীবিকা নির্বাহ করে।

Print Friendly, PDF & Email

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here