দক্ষিণ এশিয়ায় ঘুষ গ্রহণে শীর্ষে রয়েছে বাংলাদেশ পুলিশ। এর পরেই ঘুষ গ্রহণে ভারতের পুলিশের সাথে যৌথভাবে দ্বিতীয় অবস্থানে রয়েছে বাংলাদেশের বিচার বিভাগ। এছাড়া গত তিন বছরে দক্ষিণ এশিয়ায় সার্বিকভাবে দুর্নীতি বেড়েছে।
বৃহস্পতিবার দক্ষিণ এশিয়ায় ঘুষ সংক্রান্ত ট্রান্সপারেন্সি ইন্টারন্যাশনাল প্রকাশিত এক জরিপের ফলাফলে এ চিত্র উঠে আসে।
দক্ষিণ এশিয়ার ছয়টি দেশ- বাংলাদেশ, ভারত, পাকিস্তান, নেপাল, শ্রীলঙ্কা ও মালদ্বীপের মোট সাড়ে সাত হাজার মানুষের সাক্ষাৎকারের ওপর ভিত্তি করে এ তথ্য প্রকাশ করা হয়।
২০১০ থেকে ২০১১ সাল পর্যন্ত পরিচালিত এ জরিপে দেখা যায়, সরকারি সেবাগ্রহণকারী এক-তৃতীয়াংশের বেশি মানুষকে ঘুষ দিতে হয়েছে। এ ধরনের বিগত জরিপগুলোতে আফ্রিকার সাব-সাহারা অঞ্চলের দেশগুলো ঘুষ লেনদেনে শীর্ষে ছিল।
পুলিশ, বিচার বিভাগ, কাস্টমস, রেজিস্ট্রি অ্যান্ড পারমিট সার্ভিস, ভূমি ও চিকিৎসাসেবা সহ সরকারি নয়টি সেবা খাতে এ জরিপ চালানো হয়। জরিপে এসব খাত থেকে সেবাগ্রহণকারীদের সাক্ষাৎকার নেয়া হয়।
‘ডেইলি লাইভস অ্যান্ড করাপশন, পাবলিক ওপিনিয়ন ইন সাউথ এশিয়া’ শীর্ষক এই জরিপে অংশগ্রহণকারীরা জানায়, দক্ষিণ এশিয়ায় রাজনৈতিক দলগুলো এবং সরকারি সেবা খাতে পুলিশ সবচেয়ে বেশি দুর্নীতিগ্রস্ত।
জরিপে মতামত প্রদানকারী এই অঞ্চলের ৬২ শতাংশ মানুষ জানায়, সার্বিক দুর্নীতির অবস্থা ক্রমশই খারপ হচ্ছে। এক্ষেত্রে বাংলাদেশে সবচেয়ে বেশি ঘুষ লেনদেন হয়। সরকারি সেবা পেতে ৬৬ ভাগ বাংলাদেশিকে ঘুষ দিতে হয়।
ট্রান্সপারেন্সি ইন্টারন্যাশনাল বাংলাদেশের (টিআইবি) তত্ত্বাবধানে ২০১০ সালের ৯ জুন থেকে ১১ জুলাই পর্যন্ত পরিচালিত জরিপে বাংলাদেশের মোট এক হাজার ৪৯ জনের সরাসরি সাক্ষাৎকার নেয়া হয়।
অঞ্চলভিত্তিক এই প্রতিবেদনে ঘুষ দুর্নীতিতে শীর্ষে রয়েছে বাংলাদেশ। সরকারি নয়টি সেবা পেতে শতকরা ৬৬ ভাগ সেবা গ্রহণকারীকে ঘুষ দিতে হয়েছে বলে জরিপে অংশগ্রহণকারীরা জানায়।
জরিপে বাংলাদেশের পরেই রয়েছে ভারতের অবস্থান। এক্ষেত্রে দেশটিতে ঘুষ দুর্নীতির হার শতকরা ৫৪ ভাগ। এই হার পাকিস্তানে শতকরা ৫০ ভাগ, নেপালে ৩২ ভাগ, শ্রীলঙ্কায় ২৩ ভাগ এবং মালদ্বীপে ৬ ভাগ বলে প্রতিবেদনে উল্লেখ করা হয়।
জরিপের ফলাফলে দেখা যায়, বাংলাদেশে পুলিশের সেবা পেতে শতকরা ৭৫ ভাগ মানুষকে ঘুষ দিতে হয়েছে। এছাড়া সেবা পেতে বিচার বিভাগে শতকরা ৬৪ ভাগ, রেজিস্ট্রি অ্যান্ড পারমিট সার্ভিসে ৪৯ ভাগ, ভূমি অফিসে ৪৮ ভাগ এবং রাজস্ব বিভাগে ৪০ ভাগ সেবাগ্রহণকারীকে ঘুষ দিতে হয়েছে।
এদিকে কেন ঘুষ দিতে হয়েছে- এমন প্রশ্নের জবাবে জরিপে অংশগ্রহণকারীরা তিন ধরনের উত্তর দিয়েছেন। ১. সেবা পাওয়ার জন্য ঘুষ দিতেই হবে বলে, ২. কর্তৃপক্ষের সাথে ঝামেলা এড়াতে, এবং ৩. কাজটি দ্রুত করিয়ে নিতে ঘুষ দিতে হয়েছে।
দুর্নীতি দমনে সরকার গৃহীত ব্যবস্থাকে অকার্যকর বলে মনে করে জরিপে অংশ নেয়া শতকরা ৪০ ভাগ মানুষ। তবে দুর্নীতি প্রতিরোধে রাজনৈতিক নেতাদের ওপর আস্থা রাখে শতকরা ৩৮ ভাগ উত্তরদাতা। এক্ষেত্রে গণমাধ্যমের ভূমিকা আছে বলে শতকরা ২২ ভাগ উত্তরদাতা মনে করেন।
ইউনাইটেড নিউজ ২৪ ডট কম/ডেস্ক নিউজ