নিজস্হ প্রতিবেদক :: 

ঘাসফুল আউট অফ স্কুল চিলড্রেন প্রোগ্রামের উদ্যোগে বর্ণাঢ্য আয়োজনে গতকাল ১৯ ডিসেম্বর ২০২১ চট্টগ্রাম ঝাউতলা ত্রিধারা ক্লাব প্রাঙ্গণে বাংলাদেশ সরকারের উপানুষ্ঠানিক শিক্ষা ব্যুরোর অর্থায়নে ব্র্যাকের সহযোগিতায় দিনব্যাপি বিজ্ঞান মেলা অনুষ্ঠিত হয়। উল্লেখ্য ঘাসফুল আউট অফ স্কুল চিলড্রেন প্রোগ্রাম এর অধীনে একটি পাইলট প্রকল্প চট্টগ্রাম শহরে ২০১৭ সালে সেপ্টেম্বরে প্রথমশ্রেণি দিয়ে শুরু হয়। এবং উক্ত কর্মসুচির ১৪২ টি উপানুষ্ঠানিক প্রাথমিক বিদ্যালয়ের ৩৯২৬ জন শিক্ষার্থীর পঞ্চমশ্রেণির সমাপনিতে এ বিজ্ঞান মেলার আয়োজন করা হয়। মেলায় মোট ১৩টি স্কুলের ১৩ টি উদ্ভাবনী প্রদর্শনীর মাধ্যমে তেরটি গ্রুপ অংশগ্রহণ করে।

ঘাসফুলের প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা আফতাবুর রহমান জাফরীর সভাপতিত্বে সকাল ১০টায় বিজ্ঞান মেলার উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন উপানুষ্ঠানিক শিক্ষা ব্যুরোর সহকারী পরিচালক মোঃ জুলফিকার আমিন। প্রধান অতিথি তার বক্তব্যে বলেন, ‘ঘাসফুল আউট অফ স্কুল চিলড্রেন প্রোগ্রাম অত্যন্ত দক্ষতার সাথে পরিচালনা করছে, বিশেষ করে কোভিডকালীন শিক্ষার্থীদের বাড়ি বাড়ি গিয়ে সুচারুভাবে পড়িয়েছেন বলেই লেখাপড়ার গুণগতমাণ তারা ধরে রাখতে পেরেছে। আজ যে এখানে বিজ্ঞান মেলা হচ্ছে, তা অন্য তিনটি সংস্থার বিজ্ঞান মেলার চেয়ে অনেক বেশী সুন্দর ও সার্থক হয়েছে বলে মনে করছি।

অনুষ্ঠানে বিশেষ অতিথি হিসেবে বক্তব্য রাখেন ঘাসফুলের উপপরিচালক (প্রশাসন) মফিজুর রহমান ও ব্র্যাক প্রতিনিধি কোয়ালিটি ও মনিটরিং ম্যানেজার আব্দুল আলী। স্বাগত বক্তব্য রাখেন আউট অফ স্কুল চিলড্রেন প্রোগ্রাম এর সমন্বয়কারী সিরাজুল ইসলাম। সঞ্চালনা করেন আউট অফ স্কুল চিলড্রেন প্রোগ্রামের ট্রেইনার জোবায়দুর রশীদ।

উদ্বোধন শেষে অতিথিবৃন্দ মেলায় স্টলগুলোতে শিক্ষার্থীদের করা বিভিন্ন উপস্থাপনা ঘুরে দেখেন। মেলায় ঘাসফুলের ৭০টি
স্কুলের শিক্ষার্থী, শিক্ষিকা ও স্থানীয় বিভিন্ন স্কুলের শিক্ষার্থী ও অভিভাবকসহ বিভিন্ন গণ্যমান্য ব্যক্তিবর্গ পরিদর্শন করেন। বিকাল সাড়ে তিনটায় সমাপনি অনুষ্ঠান ও পুরস্কার বিতরণী অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন ঘাসফুল-চেয়ারম্যান ও চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ের সিনেট সদস্য ড. মনজুর উল আমিন চৌধুরী ও বিশেষ অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন চান্দগাঁও থানার প্রাথমিক শিক্ষা কর্মকর্তা শফিকুল হাসান, বিভাগীয় সমাজসেবা অফিসের সহকারী পরিচালক শাহি নেওয়াজ, ব্র্যাকের বিভাগীয় প্রতিনিধি নজরুল ইসলাম মজুমদার, ঘাসফুলের পরিচালক (অপারেশন) মোঃ ফরিদুর রহমান, উপপরিচালক (প্রশাসন) মফিজুর রহমান, উপপরিচালক (অর্থ ও হিসাব) মারুফুল করিম চৌধুরী, প্রশাসন বিভাগের ব্যবস্থাপক সৈয়দ মামুনূর রশীদ প্রমুখ।

সমাপনী অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথির বক্তব্যে ড. মনজুর উল আমিন চৌধুরী বলেন, আমি আশা করছি এধরণের চর্চায় শিক্ষার্থীরা ক্রমশঃ বিজ্ঞান চর্চায় উৎসাহি হয়ে উঠবে। তিনি বিজ্ঞানের নানা দিক নিয়ে আলোচনা করে বলেন, জ্ঞানচর্চার প্রতিটি শাখায় আমাদের শিশুদের অংশগ্রহণ জরুরী। তিনি তৃণমূলের এসব শিশুদের উজ্জ্বল ভবিষ্যত কামনা করে বলেন, ঘাসফুল একটি শিশু বান্ধব সংগঠন। প্রতিটি শিশুর মাঝে যে সুপ্ত মেধা লুকিয়ে আছে তা জাগিয়ে তুলতে আমরা কাজ করছি। জনাব চৌধুরী ঘাসফুলের সমাজ পরিবর্তনের এসব উদ্যোগে ব্র্যাক, সরকারের সমাজসেবা অধিদপ্তরসহ অন্যান্য আরো যে সকল দপ্তর কাজ করছে সকলকে সহায়তার হাত প্রসারিত করার আহবান জানান।

ঘাসফুল-চেয়ারম্যান তার বক্তব্যে সংস্থার প্রতিষ্ঠাতা বিশিষ্ট উন্নয়ন সংগঠক মরহুম শামসুন্নাহার রহমান পরাণকে বেগম রোকেয়া পদকে ভুষিত করার জন্য সরকারের প্রতি কৃতজ্ঞতা জানিয়ে বলেন, ১৯৭২ সালে যুদ্ধ বিধ্বস্থ দেশের পুনর্গঠন যে নারী রিলিফওয়ার্ক দিয়ে কাজ শুরু করেছিলেন, সেই পরাণ রহমান ঘাসফুল প্রতিষ্ঠার মাধ্যমে আমৃত্যু নারীদের অধিকার প্রতিষ্ঠা, প্রান্তিক মানুষের আর্থসামাজিক উন্নয়নে উল্লেখযোগ্য ভূমিকা রেখে যান। এই পুরস্কার তার প্রাপ্য ছিলো। তিনি আরো বলেন, পরাণ রহমান একজন নারী নয় বরং তিনি একটি প্রতিষ্ঠান। আজ ঘাসফুলের প্রশংসিত উন্নয়ন কর্মকান্ডই তার উৎকৃষ্ট প্রমাণ।

অন্যান্য বক্তারা বলেন, ”দেশে বিজ্ঞানচর্চা ধীরে ধীরে কমে যাচ্ছে, বিশেষ করে বিজ্ঞান শিক্ষায় শিক্ষার্থীরা ক্রমশঃ আগ্রহ হারিয়ে ফেলছে। বিজ্ঞান চর্চা প্রাথমিক বিদ্যালয় থেকেই শুরু করা প্রয়োজন। প্রাথমিক বিদ্যালয়সমূহে এধরণের বিজ্ঞান মেলা আয়োজন করার জন্য ব্যবস্থা গ্রহণ করতে সংশ্লিষ্ট সকলকে আহবান জানানো হয়।”

বিজ্ঞান মেলায় যে সব উপানুষ্ঠানিক প্রাথমিক বিদ্যালয় যে সকল ইভেন্টে অংশগ্রহণ করে তা হলো : ডুবাইওয়ালা কলোনী কেন্দ্রের ভূগোলকের মাধ্যমে দিবা-রাত্রি দেখানো, ত্রিধারা ক্লাব কেন্দ্রের বীজের অংকুরোদম পরীক্ষা, ঘোষ কলোনী কেন্দ্রের পানির বিশুদ্ধকরণ পরীক্ষা, ২নং গেট তুলাতলী কেন্দ্রের পানির ঘনত্ব, রৌফাবাদ কলোনী কেন্দ্রের বায়ুর ওজন আছে ও জায়গা দখল করে প্রদর্শন, ১ নং ঝিল কেন্দ্রের সৌরজগৎ, পশ্চিম খুলশী মুক্তিযোদ্ধা আবাসিক কেন্দ্রের অক্সিজেন পরীক্ষা, চুনা ফ্যাক্টরী কেন্দ্রের গ্রীনহাউজ ইফেক্ট, পূর্ব টাইগারপাস কেন্দ্রের জুম চাষ, কর্ণেল জোন্স রোড কেন্দ্রের পিস ট্রি, গোলপাহাড় ফিরোজশাহ কেন্দ্রের
টারবাইনের মাধ্যমে বিদ্যুৎ উৎপাদন, গোলপাহাড় কেন্দ্রের তাপ পরিবহন, নিউ শহিদ লেন মন্দির কেন্দ্রের আলোর প্রতিসরণ। দিনশেষে প্রতিযোগিতায় প্রথম স্থান অধিকার করে গোলপাহাড় ফিরোজশাহ উপানুষ্ঠানিক প্রাথমিক বিদ্যালয়ের টারবাইনের মাধ্যমে বিদ্যুৎ উৎপাদন, দ্বিতীয় স্থান অধিকার করে চুনা ফ্যাক্টরী উপানুষ্ঠানিক প্রাথমিক বিদ্যালয়ের গ্রীনহাউজ ইফেক্ট, তৃতীয় স্থান অধিকার করে রৌফাবাদ কলোনী উপানুষ্ঠানিক প্রাথমিক বিদ্যালয়ের বায়ুর ওজন আছে ও জায়গা দখল করে প্রদর্শনী।

অনুষ্ঠানের শেষ পর্যায়ে ১ম, ২য় ও তয় স্থান অধিকারীসহ সকলকে শান্তনা পুরস্কার প্রদান করা হয়। মেলায় শিক্ষার্থীদের সাথে মেন্টর হিসেবে কাজ করেন, ঘাসফুলের আউট অফ স্কুল চিলড্রেন প্রোগ্রাম এর সুপারভাইজার গুলশান আরা, বিদ্যুৎ দেব, ফরিদা
ইয়াসমিন, জোবায়দা গুলশান আরা, মোঃ আলি, আসাদ চৌধুরী, সৌরভ হায়দার শাওয়াল, গোলজারুন নেসা, রেহানা বেগম,
নাজিম উদ্দিন, নুরুল আজিম, নাসরিন সুলতানা।

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here