নাজমুল হক নাহিদ, আত্রাই (নওগাঁ) :: করোনা ভাইরাসের কারণে স্থবির হয়ে পড়েছে নওগাঁর আত্রাই উপজেলার জনজীবন। ‘কাম না করলে খামু কী? ঘরে একবেলা খাবারের চাউল নাই। জমানো টাকা নাই। যাদের টাকা আছে, তারা চাউল, ডাউল কিইন্যা ঘরে আছে। আমার নাই’। করোনা ভাইরাসের পরিস্থিতিতে কেমন চলছে জীবন যাত্রা? জিজ্ঞেস করতেই বয়জ্যেষ্ঠ এক ভ্যান চালক বলেন ওইসব কথা।

করোনা আতঙ্ক ছড়িয়ে পড়েছে দেশব্যাপী। প্রতিদিনই বেড়ে চলেছে আক্রান্তের সংখ্যা। সারাদেশে সরকারের তরফ থেকে সব ধরনের জনসমাগম নিষেধ করা হয়েছে। ইতোমধ্যে সরকারি প্রতিষ্ঠান, শিক্ষা প্রতিষ্ঠা ও কোচিং বন্ধ করে দেয়া হয়েছে। করোনা ভাইরাস সংক্রমন রোধে সচেতনতার জন্য মাস্ক ও জীবানুমুক্ত স্যানিটাইজার ব্যবহারের পরামর্শ দেয়া হচ্ছে স্বাস্থ্য বিভাগ থেকে। জরুরী কোন কাজ ছাড়া আগামী ১৪দিন রাস্তাঘাটে মানুষকে না বেরোনোর জন্য বিশেষ ভাবে সর্তক করা হয়েছে। পুলিশ প্রশাসনের পক্ষ থেকে বিভিন্ন স্থানে মাইকিং করে প্রচার করা হচ্ছে রাস্তায় বের না হওয়ার জন্য।

গত তিনদিন থেকে নওগাঁর আত্রাই উপজেলার রাস্তাঘাটে যানবাহন, অটোরিক্সা, রিক্সা, ভ্যান ও মোটাসাইকেল চলাচল অনেকটা কমে গেছে। শহরে রাস্তাঘাটে অটোরিক্সা ও ভ্যান তেমন চোখে পড়ছেনা। আতঙ্কে নি¤œ আয়ের খেটে খাওয়া মানুষরা বিপাকে পড়েছেন। আয় রোজগারের কোন পথ না থাকায় পেটের দায়ে তারা ঘরে থাকতেও পারছেন না। তাই বাধ্য হয়ে ভ্যান নিয়ে রাস্তায় নেমেছেন। ভাড়ার আসায় উপজেলার সদর রেল স্টেশনের সামনে সকাল থেকে অপেক্ষা করছিলেন কয়েকজন রিক্সা চালক।

তাদের মধ্যে একজন বয়জ্যেষ্ঠ ভ্যান চালক বলেন, বাড়িতে পরিবারের সদস্য সংখ্যা ৫ জন। প্রতিদিন খাওয়া খরচ প্রায় ২শ টাকা। বেসরকারি সংস্থা (এনজিও) থেকে ঋণ নিয়ে রিক্সা কিনেছি ও সংসারে কাজে টাকা ব্যয় করেছেন। সপ্তাহে ১ হাজার ৮০০ টাকা কিস্তি দিতে হয়। প্রতিদিন প্রায় ৫/৬শ টাকা ভাড়া পেতাম। গত দুইদিন থেকে রাস্তায় বের না হওয়ার জন্য পুলিশ মাইকিং করছে। এজন্য ভ্যান নিয়ে বের হতে পারিনি।

তিনি আরও বলেন, অবস্থা খুব খারাপ। করোনার কারণে বাহিরে মানুষ তেমন বের হচ্ছেনা। কিন্তু ঘরে বসে থাকলে তো আর পেট চলবে না। তাই বাধ্য হয়ে ভ্যান নিয়ে বেরিয়েছি। যা একটু জমিয়েছিলাম ঘরে বসে থেকে শেষ হওয়ার উপক্রম। এছাড়া ভয়ে বাহিরে বেরুতে পারিনি। পুলিশ পিটালে- পিটুনি খাওয়া যাবে। কিন্তু ভ্যান ভেঙে দিলে তো সহজে কিনতে পারবো না। এই ভয়ে ভ্যান বের করিনি।

উপজেলার আন্ধারকোটা গ্রামে রিক্সা চালক রকিব উদ্দিন বলেন, এনজিও থেকে ১লাখ টাকা ঋণ নিয়ে ২মাস আগে ব্যাটারি চালিত রিক্সা কিনেছি। প্রতিমাসে সাড়ে ৯হাজার টাকা কিস্তি দিতে হয়। গত তিনদিন রিক্সা বের করতে পারিনি। এলাকার রোগী খুব করে জোরাজুরি করায় হাসপাতালে নিয়ে এসেছি। ভয়ে ভয়ে গাড়ি চালাচ্ছি। ভাইরাসের কারণে রাস্তাঘাটে গাড়িঘোড়া কম চলছে। মানুষের আনাগোনাও কম। রিক্সা বের করতে পারছিলাম না। রিক্সা পড়ে থাকলে আবার ব্যাটারির সমস্যা হবে। তাই একটু বের করেছি। সকাল থেকে বেলা ১২ টা পর্যন্ত ২০০শ টাকা ভাড়া পেয়েছি।

করোনা আতঙ্কে স্থবির হয়ে পড়েছে জনজীবন। তাই আতঙ্কিত না হয়ে আগামী দুই সপ্তাহ ঘরে সময় কাটানোর জন্য প্রশাসনের পক্ষ থেকে বার বার সচেতন করা হচ্ছে।

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here