ডেস্ক রিপোর্টঃঃ  প্রায় ১২০০ বছর আগে স্থাপিত পৃথিবীর অন্যতম প্রাচীন নিদর্শন ‘সোমপুর মহাবিহার’। যদিও ইউনেসকোর ওয়ার্ল্ড হেরিটেজ সাইট ঘোষিত এই স্থাপনাটির এখন কেবল ভিত্তিভূমিই টিকে আছে। আদতে কেমন ছিল এই প্রাচীন বিদ্যাপীঠটির স্থাপনা, তা একেবারে শতভাগ না হলেও প্রায় অনুরূপ আকৃতিতে দেখার সুযোগ তৈরি হল এবার তথ্যপ্রযুক্তির কল্যাণে।

মঙ্গলবার (২৮ ফেব্রুয়ারি) ‘ভার্চ্যুয়াল মিউজিয়াম বাংলাদেশ’ আনুষ্ঠানিকভাবে প্রকাশ করল ‘সোমপুর মহাবিহারের বেটা ভার্সন’। আগ্রহী দর্শকেরা এখন ঘরে বসেই অনলাইনে কম্পিউটার, স্মার্টফোন ও ভিআর ব্যবহার করে সোমপুর মহাবিহারের ত্রিমাত্রিক আকৃতি দেখতে পারবেন।

গতকাল সন্ধ্যায় রাজধানীর মুক্তিযুদ্ধ জাদুঘরে ভার্চ্যুয়াল মিউজিয়াম বাংলাদেশের প্রথম প্রতিষ্ঠাবার্ষিকীতে সোমপুর মহাবিহারের থ্রি সিক্সটি ভার্চ্যুয়াল ট্যুরের আনুষ্ঠানিক উদ্বোধন করা হয়। এর উদ্বোধন করেন প্রধানমন্ত্রীর বিদ্যুৎ, জ্বালানি ও খনিজ সম্পদ উপদেষ্টা তৌফিক-ই-ইলাহী চৌধুরী।

বিশেষ অতিথি ছিলেন মুক্তিযুদ্ধ জাদুঘরের ট্রাস্টি সারা যাকের। এছাড়াও অনুষ্ঠানে বক্তব্য রাখেন ভার্চুয়াল মিউজিয়াম বাংলাদেশের ফাউন্ডার আহামেদ জামান সঞ্জীব ও অন্যান্যরা। আলোচনায় ভার্চ্যুয়ালি অংশ নেন জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রত্নতত্ত্ব বিভাগের অধ্যাপক সীমা রহমান।

আলোচকরা বলেন, প্রযুক্তি এখন অনেক এগিয়ে গেছে। তার সঙ্গে সবাইকে মানিয়ে চলতে হবে। দেশের ঐতিহাসিক স্থানগুলো এভাবে প্রযুক্তির সহায়তায় নতুন আঙ্গিকে তুলে ধরলে একটি নতুন অধ্যায়ের সৃষ্টি হবে। দর্শকরা সহজে এগুলো দেখতে ও উপভোগ করতে পারবেন। পরে এগুলো শিক্ষাব্যবস্থার সঙ্গে যুক্ত করলে শিক্ষার্থীদের জন্য ইতিহাস জানা আনন্দদায়ক ও সহজবোধ্য হবে।

ভার্চ্যুয়াল মিউজিয়ামের প্রতিষ্ঠাতা আহমেদ জামান জানান, গত বছরের ২৮ ফেব্রুয়ারি সোনারগাঁয়ের ঐতিহাসিক স্থাপনা পানাম নগরের বেটা ভার্সন প্রকাশের মাধ্যমে ভার্চ্যুয়াল মিউজিয়ামের কার্যক্রম শুরু করা হয়। এরপর বাগেরহাটের ষাটগম্বুজ মসজিদ, চাঁপাইনবাবগঞ্জের ছোট সোনা মসজিদ, যশোরের ১১ শিবমন্দির ও দিনাজপুরের কান্তজির মন্দিরের বেটা ভার্সনে থ্রি সিক্সটি ভার্চ্যুয়াল ট্যুর প্রকাশ করা হয়। এর সঙ্গে প্রথম বর্ষপূর্তিতে যুক্ত হলো সোমপুর মহাবিহার।

এই বেটা ভার্সনে সোমপুর মহাবিহারের প্রধান মন্দিরের চারপাশের ভবন, ভেতরের দৃশ্য, চারপাশে চার প্রবেশ ফটক, দেয়ালের টেরাকোটা এসব ত্রিমাত্রিকভাবে তৈরি করা হয়েছে। এর ভবন, ছাদ ও ভেতরের দৃশ্য কেমন ছিল সাধারণ দর্শকের পক্ষে স্থানটি গিয়ে দেখে অনুমান করা দুঃসাধ্য।

আয়োজকেরা জানান, তারা দীর্ঘ গবেষণা করে সেখানে পাওয়া টেরাকোটা, প্রাচীন চিত্রকলা, সোমপুর বিহারের সমসাময়িক, অনুরূপ বিক্রমশিলা বিহারসহ বিভিন্ন বিহারের স্থাপত্যের ডিজিটাল নকশা থেকে প্রত্নতত্ত্ববিদদের পরামর্শ ও তত্ত্বাবধানে এই ত্রিমাত্রিক বিহারটি তৈরি করেছেন। ফলে ভার্চ্যুয়াল মিউজিয়ামে দর্শকরা বিহারের পুরো স্থাপনাটি আদিতে যেমন ছিল, প্রায় তেমন অবস্থাতেই দেখতে পারবেন।

আয়োজকরা জানান, পর্যায়ক্রমে দেশের প্রধান প্রত্নতাত্ত্বিক নিদর্শন ও প্রাচীন স্থাপনাগুলোকে তারা এভাবে বেটা ভার্সনের তুলে আনার কাজ চালিয়ে যাবেন।

Print Friendly, PDF & Email

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here