ফারুক আহমেদ :: ঘটকপুকুরে ঈদের নামাজের পর মওলানার সঙ্গে ঈদ মিলনের পর সেলফি। ঈদ উৎসবে নব চেতনা সুস্থ সমাজ গড়তে অঙ্গীকারবদ্ধ। অসহায় দরিদ্র সমাজকে সাহয্য করার মধ্য দিয়েই ঈদ উৎসব হয়ে ওঠবে সার্বজনীন। সবার জন্য ঈদ আসুক খুশি নিয়ে। দরিদ্র সমাজের মনে অফুরন্ত খুশি দিতে পারলেই আমাদের সবার জন্য ঈদ হয়ে উঠবে প্রকৃত খুশির ঈদ।
ঈদুল ফিতর “রোজা ভাঙার দিবস” ইসলাম ধর্মাবলম্বীদের সবচেয়ে বড় দুটো ধর্মীয় উৎসবের একটি ঈদুল ফিতর আর দ্বিতীয়টি হলো ঈদুল আজহা। ধর্মীয় পরিভাষায় একে ইয়াউমুল জাএজ (অর্থঃ পুরস্কারের দিবস) হিসেবেও বর্ণনা করা হয়েছে। দীর্ঘ এক মাস রোজা রাখা বা সিয়াম সাধনার পর মুসলমানেরা এই দিনটি ধর্মীয় কর্তব্যপালনসহ খুব আনন্দের সাথে পালন করে থাকে।
ঈদ মোবারক হল মুসলিমদের একটি ঐতিহ্যবাহী শুভেচ্ছাবাক্য যেটি ঈদুল ফিতর এবং ঈদুল আজহায় পরস্পরকে বলে শুভেচ্ছা জ্ঞাপন করে থাকেন। ঈদ শব্দের অর্থ খুশি বা আনন্দ উদযাপন। আর মোবারক শব্দের অর্থ কল্যাণময়। সুতরাং ঈদ মোবারকের অর্থ হল ঈদ বা আনন্দ উদযাপন কল্যাণময় হোক। কিছু রাষ্ট্রে এই শুভেচ্ছা বিনিময় একটি সাংস্কৃতিক ঐতিহ্য এবং কোন ধর্মীয় বাধ্যবাধকতার অংশ নয়। তবে, এই শুভেচ্ছাবাক্যটি শুধুমাত্র এই দুই উৎসবের সময় ব্যবহৃত হয়।
মুসলিম বিশ্বে ঈদুল আজহা ও ঈদুল ফিতরে শুভেচ্ছা জানানোর জন্য অন্যান্য অনেক শুভেচ্ছাবাক্য রয়েছে। ঈদুল ফিতরের সময় মহানবী হকরত মুহাম্মদ (সঃ) সাহাবীদের সাথে সাক্ষাতের সময় একে অপরকে বলতেন ‘তাকাব্বালাল্লাহু মিন্না ওয়া মিনকুম’ (আল্লাহ আমাদের ও আপনাদের পক্ষ থেকে কবুল করুন)। ঈদে সকল দরিদ্র মানুষের কল্যাণে এগিয়ে আসাই ঈদ পালনের সার্থকতা।
‘আলেয়া’ চলচ্চিত্রের ডিরেক্টর ড. হুমায়ুন কবীর ও প্রয়োজক প্রদীপ চুড়িয়াল উদ্যোগ নিয়ে ২৮ রমজান বুধবার দাওয়াতে-ই-ইফতার ও স্কলারশিপ প্রদান অনুষ্ঠানের আয়োজন করেছিলেন কলকাতার পার্কসার্কাস হজ হাউসে। ডাক্তারি পড়ছে এমন গরিব ১০ জন ছাত্রীকে সাত হাজার সাতশত ছিয়াশি টাকা (৭,৭৮৬) করে স্কলারশিপ প্রদান করে ঈদের আগে ওদের মুখে হাসি ফোটালেন।
এই মহতী অনুষ্ঠানে সমাজসেবী শাজাহান বিশ্বাস, আল-আমীন মিশনের সম্পাদক সেখ নরুল ইসলাম, আইএএস অফিসার সেখ নুরুল হক, রাজ্যের গুরুত্বপূর্ণ মন্ত্রী আবদুর রেজ্জাক মোল্লা, রাজ্যসভার দুই সাংসদ নাদিমুল হক ও আহমেদ হাসান ইমরান, সমাজসেবী জাহাঙ্গীর আলম, “আলেয়া” চলচ্চিত্রের প্রয়োজক প্রদীপ চুড়িয়াল, ওই সিনেমার জনপ্রিয় নায়িকা তনুশ্রী চক্রবর্তী, পরিচালক ও দক্ষ পুলিশ আধিকারিক ড. হুমায়ুন কবীর সহ অনেকেই উপস্থিত ছিলেন।
গ্রামবাংলার প্রান্তিক পরিবারের কন্যারা চিকিৎসক হওয়ার পথে মুর্শিদাবাদ জেলার রেজিনগর থানার নাজির পুরের নিলুফা ইয়াসমিন ছোট থেকেই স্বপ্ন দেখত ডাক্তার হওয়ার। নানা প্রতিবন্ধকতা পেরিয়ে সে আজ নীল রতন সরকার মেডিক্যাল কলেজের প্রথম বর্ষের ছাত্রী। ওই জেলার লালগোলা থানার ভগবানপুর গ্রামের প্রয়াত সাইদুল ইসলামের কন্যা পায়রা খাতুন কলেজ অব মেডিসিন অ্যান্ড সাগর দত্ত হাসপাতালে দ্বিতীয় বর্ষের ছাত্রী।
বেলডাঙা ব্লকের দেবকুন্ডু গ্রামের নাহিদা খাতুন কলকাতা ন্যাশনাল মেডিকেল কলেজের দ্বিতীয় বর্ষে পড়ছে। ফরাক্কার মহাদেবনগরের প্রয়াত নুরুল আলমের কন্যা মিমি খাতুন কলেজ অব মেডিসিন অ্যান্ড সাগর দত্ত হাসপাতালের প্রথম বর্ষে পাঠরত। হরিহরপাড়ার খিদিরপুরের নাসরিন সুলতানা কলকাতা ন্যাশনাল মেডিক্যাল কলেজের দ্বিতীয় বর্ষের পড়ুয়া। বর্ধমান জেলার বানেশ্বরপুর গ্রামের প্রয়াত শেখ নজর আলির কন্যা মেহেরুন্নেসা খাতুন কলকাতা ন্যাশনাল মেডিকেল কলেজের দ্বিতীয় বর্ষে পড়ছে।
এই জেলারই সোনাডাঙার রুবিনা খাতুন কলকাতা মেডিক্যাল কলেজের প্রথম বর্ষের ছাত্রী। দক্ষিণ ২৪ পরগনার মগরাহাট ব্লকের ডিহি কলস গ্রামের মহম্মদ আব্বাস আলি গাজির কন্যা রাকিবা সুলতানা কলেজ অব মেডিসিন অ্যান্ড সাগর দত্ত হাসপাতালের দ্বিতীয় বর্ষে পাঠরত। বীরভুম জেলার মুরারই থানার হামিদপুর গ্রামের হেলিনা খাতুন এন আর এস মেডিকেল কলেজের তৃতীয় বর্ষের ছাত্রী। হুগলী জেলার গোঘাট থানার তানরুই গ্রামের রিজিয়া পারভিন কলকাতা ন্যাশনাল অমেডিক্যাল কলেজের দ্বিতীয় বর্ষের ছাত্রী। এরা সকলেই অতি দরিদ্র পরিবার থেকে উঠে আসা এমবিবিএস-এর ছাত্রী। এদের পরিবারে এরাই প্রথম এমবিবিএস ডাক্তার হতে চলেছে। পিছিয়ে পড়া প্রান্তিক সংখ্যালঘু পরিবারের এই সব মেয়েরা নিজেদের অদম্য জেদ ও অধ্যাবসায়কে সম্বল করে সাফল্য অর্জন করেছে।
এদের কারও বাবা সামান্য কৃষক, ছোট ব্যবসায়ী এবং পিতৃহীন পরিবারে বিধবা মায়ের আপ্রাণ চেষ্টায় তারা এতদূর এগিয়ে এসেছে। এ-প্রসঙ্গে অবশ্যই উল্লেখ করতে হয় আল-আমীন মিশনের অফুরন্ত অবদানের কথা সেইসঙ্গেই উঠে আসে জিডি স্টাডি সার্কেল ও পতাকা শিল্পগোষ্ঠীর কর্ণধার মোস্তাক হোসেন অফুরন্ত দানের জন্য বহু মিশন স্কুল আজ প্রতিভাদের তুলে এনে হাতে করে গড়ে তুলছেন। “ভয়েস” এর প্রতিষ্ঠাতা বিশিষ্ট সমাজসেবী শাজাহান বিশ্বাসরাও দুহাতে দান করেছেন শিক্ষা প্রসারে।
বাংলার মানুষ ভুলবে না এদের মনে রাখবেন সমাজ কল্যাণকর কাজের জন্য। স্বাধিনতার পর নতুন ইতিহাসের সূচনা করলেন এবং শিক্ষা প্রসারে দরিদ্র ঘরের প্রতিভাদের প্রকৃত শিক্ষায় শিক্ষিত করে সমাজকে এগিয়ে নিয়ে যাচ্ছেন মোস্তাক হোসেন। ঈদের প্রকৃত খুশি পৌঁছে দিতে মোস্তাক হোসেনরা বিভিন্ন শিক্ষা প্রতিষ্ঠান গড়ে তুলেছেন বলেই পিছিয়ে পড়া মুসলিম সমাজের ছেলে মেয়েরা আধুনিক শিক্ষা নিয়ে মূল স্রোতে উঠে আসছে। এই শুভ উদ্যোগ অবশ্যই প্রশংসনীয়। এই সব ছাত্রীদের সামান্য ফিজ বা একেবারে নামমাত্র খরচে আবাসিক হিসেবে ভর্তি করিয়ে তাদেরকে ডাক্তারি, ইনজিনিয়ারিং ও সফল আধিকারিক গড়ার পরীক্ষায় উত্তীর্ণ করানোর প্রক্রিয়া বিদ্যমান।
১০ জন দরিদ্র ডাক্তারি পড়ুয়া ছাত্রীকে ড. হুমায়ুন কবীর উদ্যোগ নিয়ে ‘আলেয়া’ প্রডাকশন হাউস থেকে স্কলারশিপ প্রদান করে তিনি সমাজকে বিশেষ বার্তা দিলেন এবং অন্যদের এগিয়ে আসার আহ্বান জানান পার্কসার্কাস হজ হাউস থেকে। তিনি আরও বলেন, ঈদের পর ঈদ মিলন উৎসবের আয়োজন করে “নব চেতনা” নামক সামাজিক সংগঠোনের মাধ্যমে আরও ১০০ জন দরিদ্র ও মেধাবীকে বৃত্তি প্রদান করার মহত প্রয়াস নেবেন। আমরা একে অপরে আর একটু সাহায্যের হাত বাড়িয়ে দিলে আমাদের পিছিয়ে রাখা প্রতিবেশীকে মূল স্রোতে তুলে আনতে পারব। তবেই আমাদের ঈদ হয়ে উঠবে সার্বজনীন।
লেখক: সম্পাদক, “উদার আকাশ” পত্রিকা। কলকাতা faruqueahamedku