আলমগীর মানিক, রাঙামাটি
গুরুতর অসুস্থ হয়েছেন রাঙামাটি রাজবন বিহারের অধ্যক্ষ শীর্ষ এবং আন্তর্জাতিক খ্যাতিপ্রাপ্ত বৌদ্ধধর্মীয় সাধক শ্রাবকবুদ্ধ শ্রদ্ধেয় সাধানানন্দ মহাস’বির (বনভানে-)। গুরুতর অসুস্থ অবস্থায় হেলিকপ্টারে করে শুক্রবার দুপুর ১২ টায় তাকে ঢাকায় স্কয়ার হাসপাতালে নেওয়া হয়েছে।
বনবিহার কর্তৃপক্ষ জানিয়েছে, ভানে-কে ঢাকায় স্কয়ার হাসপাতালে ভর্তি করানো হয়েছে। স্কয়ার হাসপাতাল থেকে ভানে-র উপাসিকা শিউলী চাঁপা চাকমা মুঠোফোনে এ প্রতিবেদককে জানান বনভানে-র চিকিৎসার জন্য গঠিত হওয়া মেডিকেল বোর্ডের নির্দেশ অনুযায়ী বনভানে-কে স্কয়ার হাসপাতালে ভর্তি করানো হয়েছে। তাকে ইন্টেন্সিভ কেয়ার ইউনিটে (আইসিইউ) রাখা হয়েছে।
রাঙামাটি সাভিল সার্জনের সাবেক ডেপুটি সিভিল সার্জন উদয় শংকর দেওয়ান জানান, বনভানে- বার্ধক্যজনিত, ডায়বেটিস, হাপানী, নিউমোনিয়া রোগে ভুগছেন। গত ২৩ জানুয়ারি থেকে ভানে-র অসুখ দেখা দেয়। তিনি জানান, প্রায় অজ্ঞান অবস’ায় তাকে ঢাকায় নেওয়া হয়েছে। তিনি আরো জানান, ভানে- বাইরে চিকিৎসা নিতে আগ্রহী নয়। বিদেশে চিকিৎসার জন্য নেওয়া হবে কিনা? জানতে চাওয়া হলে তিনি জানান, ভানে-র নির্দেশ আছে তাকে চিকিৎসার জন্য কোনভাবেই বিদেশে নেওয়া যাবে না।
বনভানে-র অসুসে’র খবর জানাজানি হলে বনভানে-কে দেখতে গতকাল সকাল থেকে হাজার হাজার পূণ্যার্থী, ভক্ত রাঙামাটির রাজবন বিহারে ভিড় করে।
এর আগে গতকাল সকাল সাড়ে এগারটায় তাকে রাজবন বিহার থেকে রাঙামাটি জেলা পরিষদের একটি এ্যাম্বুলেন্সে করে রাঙামাটি সার্টিক হাউজে নেওয়া হয়। সেখান থেকে স্কয়ার গ্রুপের নিজস্ব একটি এ্যায়ার এ্যায়ার এম্বুলেন্সে করে ঢাকায় নেওয়া হয়। এতে সার্বিক সহযোগীতা দিচ্ছে বাংলাদেশ সেনাবাহিনী।
চাকমা সার্কেল চীপ ব্যারিষ্টার দেবাশীষ রায়, জেলা পরিষদ চেয়ারম্যান নিখিল কুমার চাকমা, জেলা প্রশাসক সৌরেন্দ্রনাথ চক্রবর্তী, সেনাবাহিনীর রাঙামাটির বিগ্রেড কমান্ডার মোহাম্মদ শামসুজ্জামান, বন বিহার পরিচালনা কমিটির সহ সভাপতি গৌতম দেওয়ান, জেলার বিভিন্ন জনপ্রতিনিধিসহ হাজার হাজার বৌদ্ধধর্মালম্বী, ভক্তসহ বনভানে-কে এক নজরে দেখতে সার্কিট হাউজে ভিড় জমায়। এই ভিড় সামাল দিতে সেনাবাহিনীসহ নিরাপত্তা কর্মীদের বেশ হিমশিম খেতে হয়।
বনভানে-র শিষ্যমন্ডলী, পূণ্যার্থী এবং ভক্তরা বনভানে-র আরোগ্য কামনা করে বিহারে, স্ব স্ব বাড়িতে মোমবতি প্রজ্জলন এবং প্রার্থনা করার আহবান জানিয়েছেন। বনভানে-র অসুস’তার খবর ছড়িলে পূণ্যার্থী এবং ভক্তরা মোবাইলে ক্ষুদেবার্তার মাধ্যমে সবার কাছে বনভানে-র আরোগ্য কামনা করাহয়েছে।
উল্লেখ্য বনভানে- ১৯২০ সালে এই দিনে রাঙামাটি সদর উপজেলার কর্নফুলী নদীর পাড় কাপ্তাই মগবান মৌজায় মুরোঘোনা এলাকায় জন্ম গ্রহণ করেন।
১৯৪৯ সালে ফাল্গুনী পূর্নিমায় বনভানে- চট্টগ্রামের নন্দকানন বৌদ্ধ বিহারে প্রয়াত দিপংকর মহাস’বিরের নিকট প্রবজ্যা গ্রহণ করেন। শ্রামন্য জীবনে অধিকাংশ সময় বনে অতিবাহিত করার কারণে পরিচিতি পান বনভানে- নামে।