গুজরাটের মেহেসানা জেলার সর্দারপুরা গ্রামে ওই হত্যাকান্ডে কুড়িজন মহিলা সহ মোট তেত্রিশ জনকে পুড়িয়ে মারা হয়েছিল৻

মামলায় গুজরাটের একটি আদালত অভিযুক্ত ৩১ জনের যাবজ্জীবন কারাদন্ড দিলেও অন্য বিয়াল্লিশ জনকে মুক্তি দিয়েছে৻

২০০২ সালের ২৮ ফেব্রুয়ারি গুজরাটের সর্দারপুরা গ্রামে দাঙ্গাকারীদের হাত থেকে বাঁচতে যখন ৩৩ জন একটি ছোট বাড়িতে আশ্রয় নিয়েছিলেন, সে সময় রাতের অন্ধকারে বাড়িটি জ্বালিয়ে দেওয়া হয়৻ মারা যান ২০ জন মহিলাসহ আশ্রয়গ্রহণকারীদের সকলে৻

নয়বছর আগের গুজরাট দাঙ্গায় এক হাজারেরও বেশী মানুষ নিহত হয়েছিলেন, যাঁদের মধ্যে বেশিরভাগই মুসলিম৻ ওই দাঙ্গার মামলাগুলিতে এই প্রথম সাজা ঘোষণা হল৻

দোষীদের সবার বিরুদ্ধেই হত্যা, দাঙ্গা সহ ভারতীয় দন্ডবিধির বিভিন্ন ধারায় অভিযোগ প্রমাণিত হয়েছে৻

মামলায় সরকারি উকিল এস সি শাহ সাংবাদিকদের বলেন, সাজা দেয়ার সাথে সাথে নিহতদের পরিবারগুলিকে ৫০ হাজার টাকা ক্ষতিপূরণ দেওয়ারও নির্দেশ দিয়েছে আদালত৻

তিনি দোষীদের মৃত্যুদন্ড চেয়েছিলেন, তবে আদালত সেই আবেদন মানে নি বলে জানান মিঃ শাহ৻

সুপ্রিম কোর্টের নজরদারিতে তদন্ত

সর্দারপুরা দাঙ্গার প্রাথমিক তদন্ত করেছিল গুজরাট পুলিশ৻

কিন্তু ২০০৩ সালে ভারতের সর্বোচ্চ আদালত সর্দারপুরা দাঙ্গা সহ নয়টি দাঙ্গা বিষয়ক মামলার তদন্তের জন্য বিশেষ তদন্তকারী দল তৈরি করে আর তদন্ত প্রক্রিয়ার ওপরে নজরদারিও চালায়৻

সুপ্রিম কোর্ট এও মন্তব্য করেছিল যে গুজরাট সরকার দাঙ্গায় ক্ষতিগ্রস্ত মানুষদের ন্যায় বিচার দিতে পারে নি৻

গুজরাট দাঙ্গার মামলাগুলি নিয়ে আইনী লড়াই চালিয়েছেন আর জনমত সংগ্রহ করেছেন যে স্বেচ্ছাসেবী, সেই তিস্তা শিতলওয়ার বিবিসিকে বলেন স্বাধীন ভারতে ধর্মীয় দাঙ্গায় এটাই সবথেকে বড় সাজার ঘটনা৻ “একটাই মামলায় ৩১ জনের যাবজ্জীবন সাজা হওয়াটাই একটা বড় ঘটনা৻”

তিনি বলেন, ওই ঘটনায় যারা দোষী প্রমাণিত হয়েছেন, তাঁরা গ্রামের খুবই ক্ষমতাশালী ব্যক্তি৻ তাদের সাজা দেওয়ার ফলে একটা কড়া বার্তাও যাবে৻

সুপ্রিম কোর্টের নজরদারিতে এই তদন্ত চলেছে বলেই দোষীদের সাজা দেওয়া সম্ভব হয়েছে বলে মন্তব্য করেন মিস শিতলওয়ার ৻

উল্লেখ্য, সর্দারপুরা হত্যাকান্ডের আগের দিনই গুজরাটেরই গোধরা স্টেশনের একটি ট্রেনের কামরা জ্বালিয়ে দেওয়া হয়েছিল – যাতে অযোধ্যা থেকে হিন্দু স্বেচ্ছাসেবকরা ফিরছিলেন৻ গোধরার ঘটনায় ৫৯ জন মারা যান৻

ওই ঘটনায় কারা জড়িত ছিলেন, তা হিন্দু আর মুসলমান সমাজের মধ্যে একটা বিতর্কের বিষয়৻

ওই ঘটনার পরেই সারা গুজরাটে ব্যাপক দাঙ্গা হয়, যাতে প্রায় ১২০০ মানুষ মারা গিয়েছিলেন যাদের বেশিরভাগই মুসলমান৻

২০০২ সালের গুজরাট দাঙ্গাকে স্বাধীন ভারতের সব থেকে ভয়াবহ দাঙ্গাগুলোর অন্যতম বলে মনে করা হয়৻

দাঙ্গার সময় গুজরাটে হিন্দুত্ববাদী বিজেপি-র সরকার ছিল৻ মুখ্যমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদী দাঙ্গায় মদত দিয়েছেন বলে অভিযোগ, মিঃ মোদী কখনই সেই অভিযোগ যেমন স্বীকার করেন নি, দাঙ্গার জন্য ক্ষমাও চাননি৻

সূত্র : বিবিসি

ইউনাইটেড নিউজ ২৪ ডট কম/আন্তর্জাতিক ডেস্ক

Print Friendly, PDF & Email

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here