গাজীপুরে বিশ্ব ক্যান্সার দিবস-২০১২ একরকম নীরবে নি:শব্দেই কেটে গেল। এবিষয়ে জেলা সিভিল সার্জন ডা: মো: হাবিব উলস্নাহর সাথে মুঠোফোনে যোগাগের চেষ্টা করা হলে তিনি কল রিসিভ করেন নাই।

প্রতিরোধ ও নিরাময়যোগ্য কয়েক ধরনের ক্যান্সারের ব্যাপারে এখনই সতর্ক না হলে ২০৩০ সাল নাগাদ বাংলাদেশে এ রোগে মৃত্যুর হার দাঁড়াবে মোট মৃত্যুর ১২.৭ শতাংশ। প্রতিরোধ এবং সংক্রমণের শুরুতেই সনাক্ত করার ওপর গুরুত্ব দিয়ে ২০০৯ থেকে ৬ বছর মেয়াদী যে জাতীয় ক্যান্সার নিয়ন্ত্রণ কর্মপরিকল্পনাটি প্রণয়ন করা হয়েছিল, তার মূল লক্ষ্য ছিল এ রোগে প্রাণহানী কমিয়ে আনা এবং ক্যান্সার রোগীদের একটু ভালো থাকার ব্যবস্থা করা। যে সময় এই কর্মপরিকল্পনা প্রণয়ন করা হয়, তখন বাংলাদেশে প্রতিবছর ক্যান্সারে মৃত্যুর সংখ্যা ছিল দেড় লাখের মতো, যা বছরে মোট মৃত্যুর প্রায় সাড়ে ৭ শতাংশ। পরিসংখ্যান বলছে, বাংলাদেশে প্রতি বছর প্রায় ২ লাখ লোক এ রোগে আক্রান্ত হচ্ছে। এমনই এক পরিস্থিতিতে অন্যান্য দেশের মতো বাংলাদেশেও শনিবার পালিত হলো বিশ্ব ক্যান্সার দিবস। ক্যান্সার বিশেষজ্ঞ ডা. মো. হাবিবুল্লাহ তালুকদার বলেন, “কর্মপরিকল্পনাটি আশার আলো দেখিয়েছিল। কিন্তু তার বাস্তবায়ন হয়নি।” জাতীয় ক্যান্সার নিয়ন্ত্রণ কর্মপরিকল্পনার বাস্তবায়ন কেন শুরু হয়নি তা সপষ্ট না হলেও ডা. তালুকদার বলছেন, বিষয়টিতে যথাযথ গুরুত্বই দেওয়া হয়নি। “ক্যান্সার হঠাৎ করে অনেক লোকের শরীরে ছড়িয়ে পড়ে না। এ কারণে এ রোগের ব্যাপারে গুরুত্ব দেওয়া হয়েছে কম। অধিকাংশ ক্যান্সারে প্রাথমিক পর্যায়ে রোগী কোনো ব্যথা অনুভব করেন না। ফলে তিনি যখন ডাক্তারের কাছে যান, তখন পরিস্থিতি অনেকটাই খারাপের দিকে চলে গেছে।” ওই কর্মপরিকল্পনা অনুযায়ী স্বাস্থ্যমন্ত্রীকে প্রধান করে জাতীয় ক্যান্সার নিয়ন্ত্রণ কাউন্সিল গঠন করা হলেও কখনোই এর কোনো সভা হয়নি।

ডা. তালুকদারের মতে , বাংলাদেশে ক্যান্সার রোগীদের প্রায় অর্ধেকই মুখ গহ্বর, জরায়ু বা স্তন ক্যান্সারে ভুগছেন, একটু সচেতন হলেই যা প্রতিরোধ এবং পূর্ণ নিরাময় সম্ভব। ক্যান্সারের সঙ্গে লড়াইয়ে বিজয়ী এমনই একজন হলেন জিন্নাত আরা, যার বয়স এখন আশির বেশি। ২৫ বছর আগে স্তন ক্যান্সার ধরা পড়লেও এখন তিনি এ রোগ থেকে পুরোপুরি মুক্ত। তার ছেলে জানান, “বয়স হয়ে গেছে বলে কিছু শারীরিক জটিলতা আছে। সেগুলো বাদ দিলে পুরোপুরি সুস্থ আছেন মা। ২৫ বছর আগে তার যখন ক্যান্সার ধরা পড়ে, তখন আজকের মতো এতো চিকিৎসা সুবিধা ছিল না। তারপরও প্রাথমিক পর্যায়ে রোগ সনাক্ত হওয়ায় তিনি সেরে উঠতে পেরেছেন।”

বাংলাদেশে ক্যান্সার রোগীদের ৬৬ শতাংশের বয়স ৩০ থেকে ৬৫ বছরের মধ্যে- এ বিষয়টির উল্লেখ করে জাতীয় কর্মপরিকল্পনায় বলা হয়েছে, প্রাথমিক পর্যায়ে ক্যান্সার সনাক্ত করে দ্রুত নিরাময় সম্ভব না হলে এ রোগের কারণে দেশের অর্থনীতি মারাত্মকভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হতে পারে। এ কারণে ক্যান্সর নিয়ে গবেষণা ও সেবা বৃদ্ধির ওপরও জোর দেওয়া হয় ওই কর্মপরিকল্পনায়। “অথচ সারা দেশে ক্যান্সার রোগীদের নাম ও তথ্য সংগ্রহের একটি ব্যবস্থা এখনো আমরা গড়ে তুলতে পারিনি। কোন ধরনের ক্যান্সার কতো দ্রুত ছড়াচ্ছে তা বুঝতে হলে এ ব্যবস্থা খুবই জরুরি। কর্ম পরিকল্পনাতেও এ বিষযটির উল্লেখ ছিল”, বলেন ডা. তালুকদার।

জাতীয় ক্যান্সার গবেষণা ইনস্টিটিউট ও হাসপাতালের (এনআইসিএইচআর) তথ্য অনুযায়ী, দেশে ক্যান্সার আক্রান্তের সংখ্যা প্রতি বছরই বাড়ছে। কিন্তু সারা দেশের তথ্য নিয়ে নির্ভরযোগ্য কোনো পরিসংখ্যান না থাকায় এ দেশের গবেষকদের নির্ভর করতে হয় আন্তর্জাতিক মাধ্যমে পাওয়া পরিসংখ্যানের ওপর। এ বিষয়ে ক্যান্সার হাসপাতালের পরিচালক ডা. ওবায়দুল্লা বাকি বলেন, “ক্যান্সার নিয়ন্ত্রণের বিষয়টি দীর্ঘদিন সঠিক গুরুত্ব পায়নি। তবে এখন আমরা মানুষকে সচেতন করতে বিভিন্ন উদ্যোগ নিয়েছি।”

ইউনাইটেড নিউজ ২৪ ডট কম/কাজী মোসাদ্দেক হোসেন/গাজীপুর

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here