ডেস্ক রিপোর্ট:: ১৩ বছর আগে বগুড়ায় বাতিল হওয়া পুরোনো গাড়ি দিয়েই চলছে গাইবান্ধা ফায়ার সার্ভিস ও সিভিল ডিফেন্স স্টেশন। একটি অ্যাম্বুলেন্স থাকলেও সেটি আধুনিক নয়। পাঁচটি গাড়ি থাকলেও নেই সমসংখ্যাক ড্রাইভার (চালক)। পুরোনো গাড়ি পরিবর্তন করে আধুনিক গাড়ি ও অ্যাম্বুলেন্সসহ প্রয়োজনীয় ইকুইপমেন্ট এবং নতুন ভবন চেয়ে সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষকে দফায় দফায় চিঠি দিয়েও মিলছে না সমাধান। ফলে স্বাভাবিক কার্যক্রম পরিচালনায় এই স্টেশনের সদস্যদের প্রতিনিয়তই চ্যালেঞ্জের মুখে পড়তে হচ্ছে।
অপরদিকে স্বাধীনতার আগে নির্মাণাধীন একটি দ্বিতল ভবন ও একটি একতলা ভবনে ঝুঁকি নিয়েই চলছে আবাসন ও দাপ্তরিক কার্যক্রম। ১৯৬২ সালে প্রতিষ্ঠিত এই স্টেশনটি প্রতিষ্ঠার পর থেকে রয়ে গেছে দ্বিতীয় শ্রেণির ফায়ার স্টেশন হিসেবেই।
গাইবান্ধা ফয়ার সার্ভিস ও সিভিল ডিফেন্স স্টেশন সূত্রে জানা যায়, যে কোনো দুর্যোগ ও দুর্ঘটনা মোকাবিলায় গাইবান্ধা স্টেশনটিতে ৪৩০০ লিটার পানি ধারণ ক্ষমতা সম্পন্ন ‘প্রথম কল’ মিসসুবিসি গাড়ি একটি, একটি ‘দ্বিতীয় কল’ (ইসুজু) পাম্প টানা গাড়ি, ১৮০০ লিটার পানি ধারণ ক্ষমতার একটি ইমারজেন্সি টেন্ডার (ইসুজু) গাড়ি, একটি অ্যাম্বুলেন্স (টয়েটো) ও একটি টোয়িং ভিহিক্যাল (ফোটন) গাড়ি রয়েছে।
এসব গাড়ির মধ্যে পানিবাহী ‘প্রথম কল’ গাড়িটি অনেক পুরোনো। গাড়িটি বগুড়ায় ২৫ বছর ব্যবহারের পর এক যুগ আগে গাইবান্ধা স্টেশনে সংযুক্ত করা হয়। বর্তমানে গাড়িটি ব্যবহারের একেবারেই অনুপযোগী। এছাড়া দুর্ঘটনায় আহত ও গুরতর আহতদের হাসপাতালে পরিবহনের জন্য অ্যাম্বুলেন্সটিও অনেক পুরোনো। অ্যাম্বুলেন্সটিতে নেই কোনো অক্সিজেনের ব্যবস্থা, নেই প্রেশার মেশিন। নেই নার্সিং অ্যাটেনডেন্ট। এছাড়া জেলা কর্মকর্তার জন্য একটি ফোটন গাড়ি থাকলেও গাড়িটির বিপরীতে মঞ্জুরিকৃত চালকের কোনো পদই নেই।
গত বৃহস্পতিবার (৫ অক্টোবর) গাইবান্ধা ফায়ার সার্ভিস ও সিভিল ডিফেন্স কার্যালয়ে সরেজমিনে গিয়ে দেখা যায়, দুই বিঘা ১৬ শতক (৮২ শতক) জায়গার মধ্যে ইটের প্রাচীরে ঘেরা দুটি দোতলা ও একটি একতলা ভবন। সম্মুখভাগেই পুরোনো দোতলা ভবনটির নিচ তলায় স্টেশন ভবন (গ্যারেজ) এবং দাপ্তরিক কক্ষ। একটি এক তলা ব্যারাক ভবন। ব্যারাকের পশ্চিম দিকে কিচেন ও ডাইনিং রুম। ভিতরে দেবে গিয়ে হেলে গেছে ওয়াশ রুমের পার্টিশন। ওই অবস্থাতেই ওয়াশ রুমের ভেতরে উচ্চতায় অর্ধেক অংশে সম্প্রতি টাইলস করে দিয়েছে গণপূর্ত বিভাগ। পুরোনো এ ভবন দুটি বেশ চকচকে লাল রং করা। ভবনগুলোর ভেতরে চোখ পড়লেই ঝুঁকিপূর্ণ অবস্থার বেশ প্রমাণ মেলে। ভবনের বিম যে ভেঙে গেছে তা সহজেই বোঝা যায়। ভেতরে দীর্ঘদিন যাবত ছাদ বেয়ে পানি পড়েছে, তারও প্রমাণ মেলে।
স্বাধীনতার পর থেকে এখন পর্যন্ত গাইবান্ধা শহরের আয়তন ও জনসংখ্যা দিন দিন বৃদ্ধি পেয়েই যাচ্ছে। একই সঙ্গে ব্যবসা প্রতিষ্ঠান, সরকারি-বেসরকারি ব্যাংক ও বীমা, অফিস-আদালত, সরকারি-বেসরকারি শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান ও হাসপাতাল-ক্লিনিকের সংখ্যাও বৃদ্ধি পাচ্ছে। এতে করে একদিকে যেমন মানুষের জীবনমান উন্নত হচ্ছে, অন্যদিকে প্রাকৃতিক দুর্যোগ ও মানবসৃষ্ট দুর্যোগ ও দুর্ঘটনার সংখ্যাও দিন দিন বৃদ্ধি পাচ্ছে। আর এ সমস্ত দুর্যোগ ও দুর্ঘটনা মোকাবিলায় ফায়ার সার্ভিস বিভাগের প্রয়োজন পর্যাপ্ত সংখ্যক জনবল, গাড়ি ও পাম্পসহ প্রয়োজনীয় ইকুইপমেন্ট। যার কোনোটিই নেই জেলার সাত উপজেলার ফায়ার স্টেশনগুলোতো। এছাড়াও জেলায় অফিসার, ফাইটার ও অন্যান্য পদে ২৩ জনসহ মোট ১৭৯ টি মঞ্জুরিকৃত পদ থাকলেও কর্মরত রয়েছেন ১৬৫ জন। বাকি ১৪টি পদই শূন্য।
নাম প্রকাশে আপত্তি জানিয়ে গাইবান্ধা ফায়ার স্টেশনের একাধিক ফাইটার (দমকলকর্মী) বলেন, অনেক দিন থেকেই পুরোনো ভবন দুটির ছাদ বেয়ে পানি পড়ে। কিছু দিন আগে গণপূর্ত অফিস থেকে মেরামত করে নেওয়া হয়েছে, এখন আপাতত পড়ে না। চরম আতঙ্কের মধ্য দিয়ে দিন কাটে আমাদের। কিছুদিন আগে গ্যারেজে ছাদের কিছু অংশ ভেঙে একজনের মাথায় পড়েছিল।
ফায়ার সার্ভিস ও সিভিল ডিফেন্স স্টেশনের গাইবান্ধা স্টেশন অফিসার নাছিম রেজা নীলু ঢাকা পোস্টকে বলেন, আমাদের প্রথম কল গাড়িটি বগুড়ায় দীর্ঘদিন ব্যবহারের পর ২০১০ সালে গাইবান্ধায় দেওয়া হয়। ইমারজেন্সি টেন্ডার গাড়ি ছাড়া এই স্টেশনে এটিই একমাত্র পানিবাহী গাড়ি। কিন্তু গাড়িটি বর্তমানে ব্যবহারের অনুপযোগী। জরুরি দুর্ঘটনা মোকাবিলায় গাড়িটি নিয়ে বেশ বেগ পেতে হয়। ঘন ঘন বিভিন্ন যন্ত্রাংশ নষ্ট হয়, পুড়ে যায়। অনেক সময় যাওয়ার পথেই বিকল হয়। অ্যাম্বুলেন্সটিও অনেক পুরোনো। এই স্টেশনের ভবন দুটিও প্রাচীন, ঝুঁকি নিয়েই আমরা আছি।
ফায়ার সার্ভিস ও সিভিল ডিফেন্স গাইবান্ধার উপ-পরিচালক (চলতি দায়িত্ব) মো. জাকির হোসেন বিএফএম ঢাকা পোস্টকে বলেন, প্রতিমাসেই আমাদের জনবল ও সাজ-সরঞ্জামের রিপোর্ট পাঠাতে হয়, আমরা পাঠিয়ে থাকি। এছাড়া নিয়মিত আমাদের সমস্যা ও ইকুইপমেন্টের ত্রুটির বিষয়গুলোও জানিয়ে চিঠি দেই, মেরামতের জন্যও আবেদন করে থাকি। এবারও করা হয়েছে।