সঞ্জিব দাস, গলাচিপা (পটুয়াখালী) প্রতিনিধি ::
পটুয়াখালীর গলাচিপা উপজেলায় গত বছরের চেয়ে চলতি বছর কৃষকের আলুর বীজের দাম বেশি। তরপরও বীজ আলুর রয়েছে সঙ্কট। ফলে কৃষকরা চিন্তিত হয়ে পড়েছেন। এতে সংশ্লিষ্টরা আশা করছে, উৎপাদন লক্ষ্য মাত্রার চেয়ে অনেক কম হবে। জানা গেছে, গলাচিপায় উপজেলায় এক হাজার একর জমিতে আলুর আবাদ হওয়ার সম্ভাবনা রয়েছে। কৃষকের সংখ্যা পাচঁ শতাধিক। ১৯৯০ সালের পর থেকে গলাচিপায় উপজেলার কৃষকরা আলু চাষে ঝুকছেন। তবে উপজেলায় গলাচিপা সদর ইউনিয়নে আলু চাষ বেশি হয়।
উত্তর বোয়ালীয়া গ্রামের জামাল পাহলান জানান, ব্র্যাক থেকে ৪০ কেজির ২০ বস্তা আলুর বীজ কিনার জন্য বুকিং দিয়েছি। ব্র্যাক এ গ্রেড ৩২ শত এবং বি গ্রেড ৩৩ শত টাকা। ৪০ কড়া জমিতে আলুর আবাদ করা হবে। গত বছর এ আলু বস্তা ২৭ শত টাকায় ক্রয় করেছি। এ বছর বস্তায় ৫০০ টাকা বেড়েছে।
একই এলাকার আদিত্য পাল (৪৬) জানান, ‘কৃষাণী বি গ্রেড আলু গত বছর ২৮ শ’ টাকায় ক্রয় করেছিলাম এ বছর ৩২ শ’ টাকায় বিক্রি করা হচ্ছে। গত বছর প্রতি কেজি বীজ আলু ৫০ টাকা ধরে কিনলেও এবার ৬৫ টাকা ধরে কিনতে হচ্ছে কৃষকের।’
বোয়ালীয়া ব্রিজ বাজারের জামাল পাহলান ও রেখা বেগম (৫৪) জানান, ‘অগ্রীম টাকা দিয়েও কৃষাণ, ব্র্যাক, হিরা জাতের আলু বীজ পাওয়া যাচ্ছে না।’
আলুর জন্য জমি তৈরি ও বীজ বপনের উপযুক্ত সময় অগ্রহায়ন মাসের মাঝামাঝি থেকে। হালকা প্রকৃতির মাটি অর্থাৎ বেলে দো-আঁশ মাটি আলু চাষের জন্য বেশ উপযোগী। এখনই আলু চাষের জন্য কৃষক মাটি প্রস্তুতি নিতে যাচ্ছে।
গলাচিপায় ভালো ফলনের জন্য কৃষকরা বীজ আলু হিসেবে বেছে নিয়েছেন ডায়মন্ড, হীরা, স্ট্রারিক ও কৃষান উল্লেখযোগ্য। প্রতি হেক্টর জমি আবাদ করতে ১৫০০ থেকে ২০০০ কেজি বীজ আলু দরকার।
এক হেক্টর জমিতে আলু আবাদ করতে ৩২৫ কেজি ইউরিয়া, ২২০ কেজি টিএসপি, ২৫০ কেজি এমওপি, ১৫০ কেজি জিপসাম এবং ১৪ কেজি দস্তা সার প্রয়োজন। তবে এ সারের পরিমাণ জমির অবস্থাভেদে কম-বেশি হতে পারে। তাছাড়া হেক্টর প্রতি ১০ থেকে ১২ টন জৈব সার ব্যবহার করলে ফলন অনেক বেশি হয়। আলু চাষের জন্য সূর্যের আলো প্রচুর পডছে এমন উঁচু বা মাঝারি উঁচু জমি নির্বাচন করা উচিত। পানি সেচ দেয়া এবং পানি নিষ্কাশনের উপযুক্ত ব্যবস্থা সাথে জমি সমতল করা প্রয়োজন।
এ ব্যাপারে গলাচিপায় কৃষান আলুর বীজ ডিলার মেসার্স সাহা বানিজ্যালয়ের উত্তম সাহা জানান, ‘গলাচিপায় ৩৫ টন কৃষাণী আলু বীজ পেয়েছি। ৪০ কেজির এক বস্তা এক বস্তা ৩২ শত টাকায় বিক্রি করেছি। বর্তমানে কৃষক তার কাছে কৃষাণী বীজ আলু যাচ্ছে তিনি তা দিতে পারছে না। তিনি এ বছর বীজ আলু সঙ্কট দেখছেন।’
গলাচিপায় ব্র্যাকের বীজ আলুর ডিলার মো: মন্জু জানান, ‘এ বছর কৃষকের চাহিদা মতো বীজ আলু দিতে পারি নাই। কারণ আমি মাত্র ২৫ টন পেয়েছি। যে কৃষক ৫০ বস্তা চেয়েছে তাকে ২৫ বস্তা দিয়েছি। তিনি ভয়াবহ সঙ্কট দেখছেন।’
নাম প্রকাশের অনিচ্ছুক হিরা কোম্পানির বীজ আলু ডিলার জানান, ‘আমি মাত্র ৩০০ বস্তা বীজ আলু পেয়েছি। কৃষকরা বিভিন্ন স্থানে ঘুরেও বীজ আলু পাচ্ছেন না। হাহাকার চলছে।’
বিএডিসি কোম্পানির ডিলার শ্যামল দত্ত জানান, ‘১০ টন বীজ আলু পেয়েছি তা বুকিং হয়ে গেছে। অন্যজনের কাছে আছে কি না জানি না। আমার কাছে নাই।’
গলাচিপা উপজেলা কৃষি অফিসার আর্জু আক্তার জানান, ‘গলাচিপায় বীজ আলুর সঙ্কট থাকার কথা নয়। অন্য কোন কোম্পানির বীজ আলু পাওয়া না গেলে বিএডিসি আলুর বীজ পাওয়ার কথা। যদি কোনো কৃষকের সমস্যা হয়ে থাকে তা হলে যোগাযোগ করলে এ ব্যাপারে কৃষকদের সহযোগিতা করা হবে।’

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here