সঞ্জিব দাস, গলাচিপা (পটুয়াখালী) প্রতিনিধি ::                               
দেশের মানুষের চাহিদা মিটিয়ে পরে বিদেশে ইলিশ রপ্তানি হবে- এমন খবরে স্বস্তি মেলেছে কম আয়ের মানুষের। তাদের আশা ছিল সাধ্যের মধ্যে আসবে দাম, পাতে উঠবে সুস্বাদু এই মাছ। কিন্তু সেই আশা নিয়ে বাজারে গিয়ে দেখা যায় উল্টো চিত্র। একদিকে সরবরাহ কম, অন্যদিকে দামও নাগালের বাইরে। ফলে দাম শুনেই কপালে ভাঁজ পড়ছে ক্রেতাদের। মৎস্যসমৃদ্ধ এলাকা হিসেবে পরিচিত পটুয়াখালীর নদী ও সাগর তীরবর্তী গলাচিপা উপজেলার কয়েকটি খুচরা বাজার ঘুরে সোমবার সকালে এমন চিত্র দেখা গেছে।উপজেলার পানপট্টি ইউনিয়নের লঞ্চ ঘাট   বাজারে ইলিশ নিয়ে এসেছেন তিনজন বিক্রেতা। হাতে গোনা তাদের কাছে এক কেজি বা তার চেয়ে কম ওজনের ৫-৬টি ইলিশ দেখা গেছে। বাকি সব জাটকা। চাহিদার তুলনায় তাও কম। তাই দাম ক্রেতাদের নাগালের বাইরে। জাটকা (২০০ গ্রাম) বিক্রি হচ্ছে প্রতি কেজি ৬০০ থেকে ৬৫০ টাকা দরে। এক কেজির কাছাকাছি ওজনের ইলিশের দাম ১৬০০ থেকে ১৭০০ টাকা পর্যন্ত হাকছেন বিক্রেতা। 
ইলিশ কিনতে বাজারে এসে চড়া দাম দেখে অনেকেই অন্য মাছ নিয়ে বাড়ি ফিরেছেন। তাদেরই একজন আল আমিন। পেশায় কৃষক। জাকির হোসেন বলেন, ‘ইলিশ মাছ কিনতে আসছিলাম। যে দাম, কেনার অবস্থা নাই। তাই অন্য মাছ দেখছি।’ মিজান নামের আরেকজন ক্রেতার সঙ্গে কথা হয়।
তিনি বলেন, ‘গত বছর এই সময় জাটকার কেজি ছিল ৩০০ থেকে ৪০০ টাকা। বড় ইলিশ কেজি ছিল হাজারের মধ্যে। আর এখন যে দাম, এতে গরিবের পাতে ইলিশ উঠবে না।
মাছ কিনতে গিয়ে খালি হাতে ফিরেছেন তরুণ সাহা নামের একজন ক্রেতা। তিনি বলেন, ‘সাগরপাড়ের এলাকায় থেকেও ইলিশ খাইতে পারি না। বাজারে পাঙ্গাশ, চিংড়িসহ অন্যান্য মাছ ওঠে। কিন্তু ইলিশ পাই না। ঘাটে গিয়ে দুই-একজনে জেলেদের কাছ থেকে মাছ কেনে; তাও দাম বেশি।’ অথচ ইলিশের ভরা মৌসুম চলছে। তবুও নদ-নদীতে জেলেদের জালে তেমন ইলিশ ধরা পড়ছে না। বৈরী আবহাওয়া উপেক্ষা করে সমুদ্রে যাওয়া জেলেদের জালে গত কয়েকদিন ধরে মোটামুটি ভালোই ইলিশ ধরা পড়ছে। কিন্তু বড় ইলিশ তুলনামূলক কম হলেও ছোট ইলিশ এবং জাটকা পরিমাণে বেশি। জালে উঠছে অন্যান্য মাছও। তবুও স্থানীয় হাট-বাজারে ইলিশের সরবরাহ কম।
এর কারণ খুঁজতে গেলে জানা যায়, সমুদ্রগামী বেশিরভাগ জেলে-ট্রলার মালিকরা পার্শ্ববর্তী পটুয়াখালীর মহাজনদের কাছ থেকে দাদন এনে ব্যবসা করেন। এ কারণে মহাজনদের মালিকানাধীন কিংবা তাদের
নির্ধারিত মৎস্য আড়তেই মাছ বিক্রি করতে হয় তাদের। তাই সাগর থেকে মাছ ধরে সরাসরি মৎস্য বন্দরে নিয়ে যান জেলেরা। এ কারণে স্থানীয় বাজারগুলোতে সাগরের ইলিশ সরবরাহ নেই বললেই চলে। খুচরা বাজার ঘুরে জানা যায়, নদ-নদীতে ক্ষুদ্র জেলেদের ধরা ইলিশ পাইকারদের মাধ্যমে হাত বদলে বাজারে ওঠে। বাজারের চাহিদার তুলনায় সরবরাহ কম হওয়ায় দাম নাগালের বাইরে- বলছেন খুচরা ব্যবসায়ীরা।
গলাচিপা পৌরসভার ইলিশ বিক্রেতা বাবু স্বপন মন্ডল বলেন, আমরা যে দামে কিনি, সীমিত লাভেই বিক্রি করি। কেজিপ্রতি ২০-৫০ টাকা লাভ হয়। জেলেরা মাছ বেশি পেলে দাম কমে যাবে। তখন আমরাও কম দামে কিনে কম দামে বিক্রি করতে পারব।
তবে জেলে পর্যায় থেকে ইলিশের দাম কেন কমছে না- এমন প্রশ্নের জবাবে জেলেদের বরাত দিয়ে গলাচিপা উপজেলা মৎস্য ব্যবসায়ী সমিতির সভাপতি মোঃ চুন্নু মিয়া  ইউনাইটেড নিউজ২৪ গলাচিপা উপজেলা প্রতিনিধি সঞ্জিব দাসকে বলেন, ইঞ্জিন চালিত ট্রলার দিয়ে জেলেরা মাছ ধরেন। সেক্ষেত্রে জ্বালানি তেলের দাম বেশি। নিত্যপণ্যের বাজার চড়া। মাহজনের দাদন, ঋণের কিস্তি এবং পরিবারের খরচ মেটাতে হয় জেলেদের। সবকিছুর দাম নিয়ন্ত্রণে এলে জেলেরাও কম দামে মাছ বিক্রি করতে পারবে। আর অন্য কিছুর দাম নিয়ন্ত্রণে না এনে মাছের দাম কমালে জেলেরা তো না খেয়ে মরতে হবে।’
এ ব্যাপারে শেরেবাংলা কৃষি বিশ্ববিদ্যালয়ের ফিশারিজ, একোয়াকালচার ও মেরিন সায়েন্স অনুষদের সহকারী অধ্যাপক মীর মোহাম্মদ আলী বলেন, এখন ইলিশের মৌসুম। কিন্তু প্রচুর পরিমাণে ইলিশ যে ধরা পড়ছে, বিষয়টা এমন নয়। নদ-নদীতে ইলিশ খুবই কম ধরা পড়ছে। এর পাশাপাশি বৈরী আবহাওয়ার কারণে সাগরেও ঠিকমতো মাছ ধরতে পারছেন না জেলেরা। তাই বাজারে ইলিশের সরবরাহ কম। এ কারণে দাম বেশি।
তিনি আরও বলেন, আমরা আশা করছি-বৈরী আবহাওয়া শেষে জেলেদের জালে আশানুরূপ মাছ ধরা পড়বে। জেলেরা লাভবান হবেন। তখন দামও কমবে। কিন্তু নিত্যপণ্য এবং জ্বালানি তেলের দাম না কমিয়ে মাছের দাম কমালে জেলেরা ক্ষতিগ্রস্ত হবে।
গলাচিপা উপজেলা সিনিয়র মৎস্য কর্মকর্তা মোহাম্মদ জহিরুন্নবী বলেন, আবহাওয়ার কারণে জেলেদের জালে মাছ ধরা পড়ছে না। আবহাওয়া ভালো হলে জেলেদের জালে মাছ ধরা পড়বে এবং তাদের মুখে হাসি ফুটবে।

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here