স্টাফ রিপোর্টার :: ২০১৯ সালে গণপরিবহনে নারী নির্যাতনের ৫২টি ঘটনা ঘটেছে। এসব ঘটনায় ৫৯ নারী ধর্ষণ ও যৌন নির্যাতনের শিকার হয়েছেন। দেশের সড়ক, রেল ও নৌপথে এসব ঘটনা ঘটেছে। বাংলাদেশ যাত্রী কল্যাণ সমিতির এক প্রতিবেদনে এ চিত্র উঠে এসেছে। গণমাধ্যমে প্রকাশিত সংবাদ বিশ্নেষণ করে যাত্রী কল্যাণ সমিতি এ প্রতিবেদন তৈরি করেছে।
গণমাধ্যমে পাঠানো এ প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, সড়কপথে ৪৪টি, রেলপথে চারটি ও নৌপথে চারটি নারী নির্যাতনের ঘটনা ঘটেছে। গণমাধ্যমে প্রকাশিত তথ্য অনুসারে ৪৪টি ঘটনায় মামলা হয়েছে এবং ৯৩ আসামি গ্রেপ্তার হয়েছে। ১৬টি ধর্ষণ, ১২টি গণধর্ষণ, নয়টি ধর্ষণের চেষ্টা ও ১৫টি যৌন হয়রানির ঘটনা ঘটেছে।
২০১৭ সালে গণপরিবহনে চাঞ্চল্যকর রূপা গণধর্ষণ ও হত্যার ঘটনায় দেশবাসী ফুঁসে উঠলে জনগণের তীব্র প্রতিবাদের কারণে স্বল্পতম সময়ে ওই ঘটনার বিচার সম্পন্ন হয়। চার পরিবহন শ্রমিককে ফাঁসি ও একজনকে সাত বছরের কারাদণ্ড দেওয়া হয়। ওই সময় এ ধরনের ঘটনা কিছুটা কমলেও বর্তমানে নিপীড়নকারী, ধর্ষক, হত্যাকারীদের মামলা, গ্রেপ্তার ও বিচারের দীর্ঘসূত্রতার কারণে এ ধরনের ঘটনা উদ্বেগজনক হারে বাড়ছে।
এ ছাড়া গণপরিবহনে যাতায়াতকালে নারীরা অসম্মানজনক আচরণ, নিপীড়ন, হেনস্তা ও যৌন হয়রানির শিকার হচ্ছেন। শুধু পরিবহন শ্রমিক, চালক, সহযোগী নয়, কখনও কখনও সহগামী পুরুষ যাত্রী দ্বারাও এ ধরনের যৌন সহিংসতার শিকার হয়েছেন নারীরা।
যাত্রী কল্যাণ সমিতির মহাসচিব মোজাম্মেল হক চৌধুরী মনে করেন, এক বছরে সংবাদপত্রে প্রকাশিত ঘটনা শুধু প্রতীকী চিত্র বহন করে। প্রকৃতপক্ষে ঘটনার ভয়াবহতা অনেক বেশি। রক্ষণশীল সমাজ হিসেবে বাংলাদেশের নারীদের লোকলজ্জা, সামাজিক মর্যাদা ও মামলা করে হয়রানি এবং বিচারের দীর্ঘসূত্রতার কারণে অসংখ্য ঘটনা চাপা পড়ে যাচ্ছে।
গণপরিবহনে নারী নির্যাতন বন্ধে যাত্রীকল্যাণ সমিতি আটটি সুপারিশ করেছে। এগুলোর মধ্যে রয়েছে গণপরিবহনে সিসি ক্যামেরা ব্যবহার বাধ্যতামূলক; কর্মীদের আলাদা আলাদা নেমপ্লেটসহ পোশাক বাধ্যতামূলক করা; তাদের নিয়োগপত্র, জাতীয় পরিচয়পত্র ও ছবি নিয়ে ডাটাবেজ তৈরি; গাড়ির ভেতর নিয়ন্ত্রণকারী প্রতিষ্ঠানের হটলাইন নম্বর, ফোন নম্বর ও গাড়ির নম্বর সাঁটানোর ব্যবস্থা করা; গণপরিবহনের সংখ্যা বাড়ানো, বাস-মিনিবাসে নারীর জন্য সংরক্ষিত আসন দরজার আশপাশে রাখা, গণপরিবহনে অস্বচ্ছ ও বিজ্ঞাপনে মোড়ানো কাচের ব্যবহার বন্ধ করা এবং গণপরিবহনে যৌন সহিংসতার মামলা, গ্রেপ্তার ও বিচার দ্রুত শেষ করা।