কদেড় মাস রোগ ভোগের পর অবশেষে মারা গেলেন ঠাকুরগাঁওয়ের পীরগঞ্জ উপজেলার দক্ষিণ মাধবপুর গ্রামের আলোচিত সাঁওতাল সম্প্রদায়ের আদিবাসী গৃহবধূ লালমনি টুডু। বৃহস্পতিবার দিবাগত রাত ২টায় ঠাকুরগাঁও সদর হাসপাতালে মারা যান তিনি। তার মৃত্যুতে ওই আদিবাসী পল্লীতে বেড়ে গেছে ডাইনি আতংক।
এদিকে প্রাণের ভয়ে বাড়ি ছেড়েছেন লালমনি টুডুর জা (স্বামীর বড় ভাইয়ের স্ত্রী) কথিত ডাইনি চাঁনমনি টুডু। গণকের সর্বনাশা হুকুমের কারনে তাকে স্বামীর বাড়ি ছাড়তে হয়েছে। নির্যাতনের শিকার হয়ে এখন তিনি দিনাজপুরের নবাবগঞ্জ উপজেলা স্বাস্থ কমপ্লেক্সে চিকিৎসা নিচ্ছেন। এই উপজেলার গোপালগঞ্জ ইউনিয়নের বুড়িমন্ডপ গ্রামে চাঁনমনির বাবার বাড়ি। জানা গেছে, বুধবার সন্ধ্যায় তিন বছরের একমাত্র ছেলে সনত্মান লিমন মুরমু কে নিয়ে স্বামীর বাড়ি ছেড়েছেন।
পীরগঞ্জ থানার ওসি মেহেদী হাসান জানান, এ ঘটনার সাথে জড়িত থাকার অভিযোগে শুক্রবার ভোরে কথিত গণক কেইথা হাাঁসদা ওরফে পেলুয়া হাঁসদাকে আটক করা হয়েছে। ওই গণকের বাড়ি দিনাজপুরের বোচাগঞ্জ উপজেলার চন্ডিপুর গ্রামে ।
আটক গণক কেইথা হাঁসদা জানান, গণনায় চাঁনমনি টুডু দোষি প্রমানিত হয়েছে। তার কারনে রোগ বাড়ছে। তবে চাঁনমনিকে মারার কথা বলিনি।
অন্যদিকে এসব ঘটনার পর চাঁনমনির স্বামী লক্ষীরাম মুরমু মানসিক ভাবে ভেঙ্গে পড়ে অসুস্থ হয়ে পড়েছেন। তাকে আজলাবাদ গ্রামের একটি কমিউনিটি সেন্টারের কড়্গে হাতপা বেঁধে তালা দিয়ে রাখা হয়েছে।
ওই গ্রামের ওঝা রাম হাঁসদা জানান, শুক্রবার গভীর রাত থেকে লড়্গীরামের অবস্থা খারাপ হলে তাকে হাতপা বেঁধে রাখা হয়। সে দিকবিদিক হারিয়ে ছোটাছুটি করে এবং যাক তাকে কামড় দিতে চায়।
সতের বছরের সংসারি চাঁনমনিকে আর ঘরে তুলবেনা বলে সাফ জানিয়ে দিলেন লড়্গীরামের বাবা তীরপান মুরমু। ওই ডাইনির কারনেই ছোট ছেলে চুনু মুরমুর স্ত্রী লালমনি অকালেই ঝড়ে গেলেন। বড় ছেলেও মরতে বসেছে ।
দীর্ঘদিন ধরে ঝাড় ফুক ও ডাক্তারী চিকিৎসা করেও লালমনি সুস্থ না হওয়ায় পাশে উপজেলা বোচাগঞ্জ উপজেলার চন্ডিপুর গ্রামের কেইথা হাঁসদা নামে এক গণকের স্বরনাপন্ন হয় আদিবাসী ওই পরিবারটি। সেই গণক লালমনির অসুস্থতার জন্য চাঁনমনিকে ডাইনি আখ্যা দিয়ে দোষারোপ করেন। এর পর থেকে ওই পরিবারের সাথে আদিবাসী প্রতিবেশিরাও জোট হয়ে চাঁনমনির উপর শারিরীক নির্যাতন চালায়।
ইউনাইটেড নিউজ ২৪ ডট কম/তানিয়া সরকার/ঠাকুরগাঁও।