মহানন্দ অধিকারী মিন্টু, পাইকগাছা (খুলনা) প্রতিনিধি ::

প্রকৃতিতে এসেছে শীতের আগমনী বার্তা। গ্রামবাংলার ঐতিহ্যের প্রতীক খেজুর গাছের রস সংগ্রহের জন্য প্রস্তুতি শুরু হয়ে গেছে। সুন্দরবন উপকূলীয় দক্ষিণ জনপদের খুলনার পাইকগাছায় গ্রামে গাছিদের রস সংগ্রহে ব্যস্ততা বেড়ে গেছে। খেজুর গাছের আগোছালো শুকনা পাতাগুলো ফেলে দিয়ে গাছগুলোকে নতুন চেহারায় আনছে গাছিরা।

রস বের করার জন্য গাছকে প্রস্তুত করে নলি ও ঠিলে (ভাড়) ঝুঁলিয়ে দিবেন। এই রস দিয়ে তৈরি হয় সুস্বাদু গুড় এবং পাটালি। এক সময় উপজেলার মাঠ-ঘাট এবং রাস্তার দু’ধারে সারি সারি অসংখ্য খেজুর গাছ ছিলো। কালের বিবর্তণে হারিয়ে যেতে বসেছে এই সব খেজুর গাছ। কিন্তু এখনো যে গাছ গুলো আছে তা থেকেই শীতের রস সংগ্রহের কাজ চালাচ্ছেন গাছিরা। সারা বছর অবহেলায় পড়ে থাকা খেজুর গাছগুলোকে নতুন করে সুসজ্জিত করেন গাছিরা এবং রস সংগ্রহের প্রতিযোগিতায় মেতে উঠেছেন। অযত্নে অবহেলায় পড়ে থাকা খেজুর গাছগুলোর কদর বেড়েছে। এখনো তেমন শীতের প্রভাব না পড়লেও খেজুরের রস সংগ্রহের জন্য প্রস্তুতির কাজ শুরু করে দিয়েছেন অনেকেই। গাছের সংখ্যা অল্প থাকার কারনে চাহিদা অনুযায়ী রস পাওয়া যাবে না বলে আশঙ্কা করেছেন গাছিরা।

উপজেলা কৃষি অফিস সূত্রে জানা যায়, উপজেলার ১০টি ইউনিয়ন ও ১টি পৌরসভায় ১২ হাজার রস আহরণ যোগ্য খেজুরগাছ আছে। উপজেলার কপিলমুনি, গদাইপুর, গোপালপুর, মঠবাটী, পুরাইকাটী, মালথ, সিলেমানপুর, রাড়–লি ও চাঁদখালী সহ বিভিন্ন ইউনিয়নের বিভিন্ন গ্রামের গাছিরা জানান, অন্য মৌসুমে তারা অন্য কাজ করেন। কিন্তু শীত এলেই খেজুরগাছ কাটায় ব্যস্ত হয়ে পড়েন। এ অঞ্চলে খেজুর রসের পর্যাপ্ত চাহিদা থাকায় ভালো আয় করেন তারা।

এছাড়া শীতের সময় ধনী-গরীব সকলের কাছে খেজুরের গুড়েরও বেশ চাহিদা। তারা আরো জানান, তাদের নিজের গাছের সংখ্যা খুবই কম। বেশির ভাগই অন্যের গাছ কেটে রস সংগ্রহ করতে হয়। তাই গাছের মালিককে রসের একটা অংশ দিতে হয়। তারপরেও প্রতিবছর তারা রস ও গুড় বিক্রি করে লাভবান হন।

এ ব্যাপারে গাছিরা আরো বলেন, খেজুর গাছের সংখ্যা কমে যাওয়া রস, গুড় ও পাটালির দাম থাকে একটু চড়া। তবু এই রস নিতে ভুল করেন না সকল শ্রেণীর মানুষ। গাছে রস সংগ্রহের জন্য যে মাটির পাত্র পাতা হয়, তা এলাকায় ভাড় বলে পরিচিত। কাঁচা রস প্রতি ভাড় ১২০ থেকে ১৫০ টাকায় বিক্রি হয়ে থাকে। আর পাটালী প্রতি কেজি ২৫০ টাকা থেকে ৩০০ টাকায় বিক্রি হয়। শীতের পুরো মৌসুমে চলে রস, গুড়, পিঠা, পুলি ও পায়েস খাওয়ার পালা। এছাড়া খেজুর পাতা দিয়ে তৈরী করা হয় আর্কষণীয় ও মজবুত শীতল পাটি। কিন্তু জলবায়ু পরিবর্তনসহ মাটি লবণাক্ততা ও বন বিভাগের নজরদারী না থাকায় গ্রামবাংলার ঐতিহ্যবাহী পরিবেশবান্ধব খেজুর গাছ এখন প্রায়ই বিলুপ্তির পথে।

উপজেলা কৃষি অফিস সূত্রে জানা যায়, খেজুরগাছ ও রসের সঠিক ব্যবস্থাপনার অভাবে খেজুর রস আহরণ ক্রমশ কমে যাচ্ছে। তাছাড়া গাছির অভাবে অনেক গাছ থেকে রস আহরণ করা যায় না। প্রকৃতির ভারসাম্য বজায় রাখতে খেজুরগাছের ভূমিকা অপরিসীম। তাই কৃষি অফিস থেকে এলাকার খেজুরগাছ রোপণ করার জন্য কৃষকদের উদ্বুদ্ধ করা হচ্ছে।

Print Friendly, PDF & Email

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here