শীতের সকালের রোদ। খুলনার ডুমুরিয়া উপজেলার কুলটি গ্রামের হত দরিদ্র ভ্যান চালক মনি শংকর মন্ডলের পুত্র শ্রাবণ মন্ডল (৩) তার জেঠার মেয়ে টুম্পার সাথে রাস্তার ওপর রোদ পোহাচ্ছিল। এ সময়ে একটি সিমেন্ট বোঝাই একটি নসিমনের চালক এমদাদুল দ্রুত গতিতে রাসত্মার বিপরীত পাশে গিয়ে শ্রাবণ মন্ডলকে চাপা দেয়। ঘটনাস্থলেই শ্রাবণের মৃত্যু হয়। ডুমুরিয়া আওয়ামী লীগ নেতা কাজী ইমদাদুল হকের স্ত্রী নাছরিন বেগম (৪০), শ্বাশুড়ি কমলা বেগম (৬০) এবং কমোলপুর গ্রামের মহির গাজী (২৫) একই এলাকার ভ্যান চালক আঃ হামিদের ভ্যানযোগে ডুমুরিয়া বাজার থেকে গুটুদিয়াস্থ বাড়ি ফিরছিলেন। ভ্যানটি খুলনা-সাতক্ষীরা মহাসড়কের রাসেল স্মৃতি সংসদের সামনে পৌঁছালে খুলনাগামী খুলনা-কালিগঞ্জ রূটের একটি যাত্রীবাহী বাসের (যশোর জ ০৪-০০৮৭) চালক পেছন দিক থেকে ভ্যানটিকে ধাক্কা দেয়। ভ্যানটি খাদে পড়ে চালকসহ সকল যাত্রী আহত হয়। গুরুতর আহত মহির গাজী ও কমলা বেগমকে খুলনা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে ভর্তি করা হলে সন্ধ্যায় কমলার মৃত্যু হয়। বেলা সাড়ে ১১টা। গুটুদিয়ার বান্দা গ্রামের রুদ্র বিশ্বাস (৫০) ও তার স্ত্রী সঞ্চিতা বিশ্বাস (৪০) একই গ্রামের সম্মেলন বিশ্বাস (২৫) এর মটর সাইকেল যোগে জামাই বাড়ি পাতিবুনিয়ায় যাচ্ছিলেন। এ সময় গরু বোঝাই একটি ট্রাক (চট্রগাম ড-৫৯৯) এর ড্রাইভার ও যমুনা ওয়েল কোম্পানীর তেলবাহী একটি লরীর ড্রাইভার রাস্তায় পাল্লা দিয়ে গাড়ি চালিয়ে খুলনা অভিমুখে ফিরছিল। গোলনা ফায়ার সার্ভিস স্টেশনের সামনে পৌঁছালে লরীর ড্রাইভার মটর সাইকেল আরোহীদের চাপা দেয়। ঘটনাস্থলেই মটর সাইকেল আরোহী স্বামী-স্ত্রীসহ চালকের মৃত্যু হয়। স্বাস্থ্যমন্ত্রীর সাথে দেখা করে সাতক্ষীরা থেকে নিজ মটর সাইকেল (খুলনা মেট্রো হ-১১-৬৬৯৮) যোগে খুলনার অভিমুখে ফিরছিলেন খুলনার হোমিও চিকিৎসক নেতা ও মানবধিকার কর্মী ডা. নাইমুল ইসলাম রাজু। খুলনা-সাতক্ষীরা মহাসড়কের বরাতিয়া প্রাথমিক বিদ্যালয়ের সামনে পৌঁছালে হাইওয়ে পুলিশ তার মটর সাইকেল থামানোর জন্য সিগনাল দেয়। দ্রুত রাস্তার পাশ কাটিয়ে বের হওয়ার চেষ্টা করলে সাতক্ষীরা গামী পত্রিকাবাহী একটি পিকআপ ভ্যানের (সাতক্ষীরা ১১-০০৫২) সাথে তিনি ধাক্কা খেয়ে রাস্তায় ছিটকে পড়েন। মাথায় গুরুতর আঘাতপ্রাপ্ত অবস্থায় তাকে ডুমুরিয়া হাসপাতালে নেয়ার পথে তার মৃত্যু হয়। দুর্ঘটনার পর শিশু শ্রাবণের ঘাতক এমদাদুল (২৪), কমলা বেগমের ঘাতক আব্দুল্লাহ সরদার (৩০),  রম্নদ্র বিশ্বাস, সঞ্চিতা বিশ্বাস ও সম্মেলন বিশ্বাসের ঘাতক আমির হোসেন (৩০) ও ডা. রাজুর ঘাতক পিকআপ ড্রাইভারকে পুলিশ আটক করলেও আদালতে চালান দেয়া হয়েছে শুধুমাত্র আমির হোসেনকে। বিভিন্ন অজুহাতে পুলিশ বাকিদের থানা থেকেই বিদায় দিয়েছে। অবশ্য গাড়ির ড্রাইভারদের থানা থেকে ছেড়ে দেয়ার পেছনে যুক্তি হিসেবে ’মানবিক’ দৃষ্টিকোণের কথা উল্লেখ করেছন থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা আব্দুল কাদের বেগ। তবে তিনি কাদের প্রতি মানবিকতা দেখিয়েছেন তা স্পষ্ট করেননি। যারা মৃত্যুবরণ করলেন তাদের প্রতি নাকি যারা প্রাণ কেঁড়ে নিয়েছেন তাদের প্রতি। তবে তিনি বলেন, যদি মামলা হয় তাহলে নিহতের লাশ ময়না তদন্ত ছাড়া পরিবারের কাছে হস্তান্তর করা যায় না। খুলনা-সাতক্ষীরা মহাসড়কের ডুমুরিয়া এলাকায় ঘটে যাওয়া এ সড়ক দুর্ঘটনার সবগুলোই পর পর এবং দুর্ঘটনাগুলোতে প্রাণ হারিয়েছেন নারী-শিশু,যুবক, বৃদ্ধাসহ মোট ৬ জন।

স্বল্প সময়ের ব্যবধানে একই এলাকায় এতোগুলো দুর্ঘটনা এবং কিভাবে সেগুলো রোধ করা সম্ভব এমন প্রশ্নের জবাবে নিরাপদ সড়ক চাই (নিসচা) এর জেলা সাধারণ সম্পাদক ইকবাল হোসেন বিপ্লব বলেন, রাজনৈতিক পৃষ্টপোষকতায় পরিবহন সেক্টরের লোকদের কাছে যাত্রী ও সড়কে চলাচলকারী মানুষ জিম্মি হয়ে পড়েছে। একজন মানুষকে খুন করলে ফাঁসি হবে কিন্তু একজন মানুষকে গাড়ি চাপা দিয়ে মারলে সর্বোচ্চ ৩ বছর জেলা ও ৫ হাজার টাকা জরিমানা হবে। আইনের এই দুর্বলতাটাই গাড়ির চালকদের বেপরোয়া করে ফেলেছে। আইন কঠোর না হওয়া পর্যন্ত আপাতত জনসচেনতার বিকল্প নেই। ডুমুরিয়া উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা মো. সাখাওয়াত হোসেন বলেন, সড়ক দুর্ঘটনায় মৃত্যু কারোরই কাম্য হতে পারে না। দুর্ঘটনা রোধে আমরা পুলিশকে কঠোর হতে বলেছি। মাঝে মধ্যে আমরা ভ্রাম্যমান আদালতও পরিচালনা করছি। তবে কঠোর হওয়া প্রয়োজন বিআরটিএ কে। তাদের ট্রেনিং ছাড়া কেউ যেন ড্রাইভং সিটে বসতে না পারে, ফিটনেস ছাড়া কোন গাড়ি যেন রাস্তায় নামতে না পারে এবং ড্রাইভার, হেলপার ও সুপারভাইজারদের নিধার্রিত রঙের পোষাক তাদেরকেই নিশ্চিত করতে হবে।

ইউনাইটেড নিউজ ২৪ ডট কম/শিমুল খান/খুলনা

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here