আন্তর্জাতিক বাজারে বাংলাদেশী হিমায়িত চিংড়ির চাহিদা বাড়ার সঙ্গে সঙ্গে রপ্তানিও বেড়েছে। আর এ খাত থেকে বৈদেশিক মুদ্রা আয়ও আগের তুলনায় বেড়েছে। এছাড়া দীর্ঘদিন দেশে উৎপাদিত গলদা চিংড়ি রাশিয়ায় আবার রপ্তানি শুরু হওয়ায় মোট রপ্তানির পরিমাণও বেড়েছে বলে জানিয়েছে হিমায়িত খাদ্য রপ্তানিকারকদের প্রতিষ্ঠান বাংলাদেশ ফ্রোজেন ফুড এক্সপোর্টার্স এসোসিয়েশন (বিএফএফইএ)।
সূত্র জানায়, চলতি অর্থবছরের জুন থেকে সেপ্টেম্বর পর্যন্ত সময়ে গত অর্থবছরের একই সময়ের তুলনায় রপ্তানি বেড়েছে। এ সময় হিমায়িত খাদ্য রপ্তানি হয়েছে ১৮ কোটি ৬৩ লাখ ৯০ হাজার ডলার, যা লক্ষ্যমাত্রার চেয়ে ৮ দশমিক ৫৩ শতাংশ বেশি। রপ্তানি উন্নয়ন ব্যুরোর (ইপিবি) পরিসংখ্যান থেকে জানা যায়, ২০১১-১২ অর্থবছরে হিমায়িত খাদ্যদ্রব্য থেকে রপ্তানি আয়ের লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করা হয়েছে ৭২ কোটি ৬৪ লাখ ৮০ হাজার ডলার, যা গত অর্থবছরের তুলনায় ১০ কোটি ডলার বেশি। গত অর্থবছরে এ খাত থেকে আয় হয়েছিল ৬২ কোটি ৫০ লাখ ৪০ হাজার ডলার। এছাড়া চলতি অর্থবছরের প্রথম তিন মাসে লক্ষ্যমাত্রার চেয়ে ৮ দশমিক ৫৩ শতাংশ বেড়ে রপ্তানি আয় ১৮ কোটি ৬৩ লাখ ৯০ হাজার ডলারে পৌঁছে। এ সময় লক্ষ্যমাত্রা ধরা হয় ১৭ কোটি ১৭ লাখ ৪০ হাজার ডলার, যা গত অর্থবছরের প্রথম তিন মাসের তুলনায় ৩১ শতাংশ বেশি। এর মধ্যে শুধু চিংড়ি রপ্তানিতে প্রবৃদ্ধি হয়েছে ২৩ শতাংশ। সূত্র জানায়, অর্থবছরের প্রথম প্রান্তিকে শুধু চিংড়ি থেকে রপ্তানি আয় হয় ১৪ কোটি ৯৯ লাখ ২০ হাজার ডলার, যা লক্ষ্যমাত্রার চেয়ে ১৫ দশমিক ৪১ শতাংশ বেশি। এ সময় চিংড়ি থেকে রপ্তানি আয়ের লক্ষ্যমাত্রা ছিল ১২ কোটি ৯৯ লাখ ডলার। ২০১০-১১ অর্থবছরের প্রথম প্রান্তিকে চিংড়ি রপ্তানি থেকে আয় হয় ১২ কোটি ১৯ লাখ ১০ হাজার ডলার, যা চলতি অর্থবছরের তুলনায় ২ কোটি ৮০ লাখ ১০ হাজার ডলার কম। সূত্র জানায়, গত কয়েক বছরের তুলনায় এবার হিমায়িত খাদ্য রপ্তানি থেকে আয় বেড়েছে। কয়েক বছর আগে চিংড়ি সংরক্ষণে নাইটোফুরান নামক মানবদেহের জন্য ক্ষতিকর রাসায়নিক দ্রব্য ব্যবহারের অভিযোগ এনে ইউরোপের বেশকটি দেশ বাংলাদেশ থেকে চিংড়ি আমদানি বন্ধ করে দেয়। পরবর্তী সময়ে দেন-দরবার করে এবং ক্ষতিকর উপাদান ব্যবহার না করার শর্তে বন্ধ থাকা দেশগুলোতে ফের চিংড়ি রপ্তানি শুরু হওয়ায় দেশে উৎপাদিত চিংড়ি রপ্তানির স’বির অবস’া কেটে যায়। এ ছাড়াও নতুন বেশ কটি দেশে চিংড়ি রপ্তানি হওয়ায় দেশের হিমায়িত খাদ্য বিশেষ করে চিংড়ি রপ্তানির পরিমাণ বেড়েছে। বিএফএফইএর জনৈক কর্মকর্তা জানান, আন্তর্জাতিক বাজারে হিমায়িত চিংড়ির দাম ও চাহিদা আগের চেয়ে অনেকটা বেড়েছে। পাশাপাশি গলদা রপ্তানিও ফের শুরু হয়েছে। অর্থনৈতিক কারণে দীর্ঘদিন রাশিয়া বাংলাদেশ থেকে চিংড়ি আমদানি বন্ধ রেখেছিল। সম্প্রতি তারা আবার বাংলাদেশ থেকে চিংড়ি আমদানি শুরু করেছে। তিনি বলেন, নাইট্রোফুরান ব্যবহার নিয়ে সৃষ্ট জটিলতা এরই মধ্যে দূর হয়েছে। ফলে ইউরোপেও চিংড়ি রপ্তানি বেড়েছে। দেশের রপ্তানিযোগ্য মোট হিমায়িত খাদ্যের মধ্যে ৯০ শতাংশই চিংড়ি। দেশের দক্ষিণ-পশ্চিমাঞ্চল থেকে বেশির ভাগ হিমায়িত চিংড়ি ও সাদা মাছ রপ্তানি করা হয়। তিনি বলেন, দেশে উৎপাদিত হিমায়িত খাদ্য তুরস্ক, সুইডেন, সাইপ্রাস, রাশিয়া, গ্রিস, জার্মানি, পর্তুগাল, নেদারল্যান্ডস, ডেনমার্ক, ইতালি, বেলজিয়াম, ফ্রান্স, যুক্তরাজ্য, জাপান, আয়ারল্যান্ড, বেলারুশসহ বিভিন্ন দেশে রপ্তানি হয়ে থাকে।
শিমুল খান, খুলনা